নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ আগস্ট, ২০২৪

মুক্ত হলেন রিজভী মামুন পরওয়ার

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় করা মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। অন্য দলের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক। একই সময়ে মুক্তি পান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনসহ অন্য নেতারা।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পৃথক বিচারকরা পৃথক আদেশে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরাই শুধু নন, এসব মামলায় গ্রেপ্তার প্রায় দেড় হাজারের বেশি আসামিকে জামিন দেওয়া হয়েছে একই দিনে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন। বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বলেন, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গত কয়েকদিনে যেসব নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে মঙ্গলবার যাদের জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল, তাদের প্রত্যেকের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বিএনপি নেতাদের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, এ পর্যন্ত দুই শতাধিক নেতাকর্মী জামিন পেয়েছেন। অন্য আসামিরাও জামিন পেয়েছেন। তবে সঠিক হিসাব বলা সম্ভব নয়। যাদের জামিন আবেদন করা হচ্ছে, প্রত্যেকেই জামিন পাচ্ছেন। জামায়াত নেতাদের আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক বলেন, কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ শীর্ষনেতাদের জামিন দিয়েছেন আদালত। আদালত সূত্রে জানা গেছে, জামিনপ্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য এবং গাজীপুর জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি ড. মো. সামিউল হক ফারুকী, শিবিরের সাবেক সভাপতি হাফেজ রাশেদুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা।

বিকেলে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনি হাসিনার পতন হয়েছে। পালিয়ে যেন তিনি পার না পেতে পারেন। তাকে গ্রেপ্তার করে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তিনি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দেশের ছাত্র-জনতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় বিপুলসংখ্যক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। আন্দোলন শুরুর পরে গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত ১৪ দিনে সারা দেশে ১০ হাজার ৪৩১ জন গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও রয়েছেন।

গিয়াস উদ্দিন আল মামুন মুক্ত : ঋণের নামে সোনালী ব্যাংকের ৩২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে জামিন দিয়েছেন আদালত। এদিন ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেছেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৩০ জানুয়ারি যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন গিয়াস উদ্দিন আল মামুন। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং, কর ফাঁকিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২০টিরও বেশি মামলা হয়।

২০১৩ সালে এক মামলায় তার ৭ বছরের কারাদণ্ড হয়। এর আগে অস্ত্র আইনের মামলায় ১০ বছর কারাদণ্ড হয়েছে, যা পরে হাইকোর্ট বাতিল করে দেন। এছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জনের এক মামলায়ও তিনি ১০ বছরের দণ্ডে দণ্ডিত হন। গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের আইনজীবী হেলাল উদ্দিন জানান, সব মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। যে মামলাগুলো সাজা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি সময় ধরে জেলে ছিলেন। তিনি কারামুক্ত হয়েছেন।

আট বছর পর বাসায় আমান আযমী ও আরমান : আট বছর পর বন্দিশালা থেকে মুক্ত হয়েছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আহমাদ বিন কাসেম (আরমান)। গতকাল তারা নিজ নিজ বাসায় ফেরেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও আহমাদ বিন কাসেমের মুক্ত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে।

আবদুল্লাহিল আমান আযমী জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির প্রয়াত গোলাম আযমের ছেলে। আর আহমাদ বিন কাসেম একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর ছেলে। ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান) মিরপুর ডিওএইচএস থেকে এবং এর কয়েকদিন পর ২৩ আগস্ট আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে গুম করা হয় বলে তাদের পরিবারের অভিযোগ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close