নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৫ আগস্ট, ২০২৪

সংঘাতে নিহত ৯৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত, সংঘর্ষ, গুলি, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিনে গতকাল রবিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত, সংঘর্ষ, গুলি, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় অন্তত ৯৪ জন নিহতের ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ১৩ জনসহ রয়েছেন ১৪ পুলিশ সদস্য। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে প্রাণহানি ঘটে সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, কিশোর, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্র্যায়ের নেতাকর্মীর। স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পাওয়া তথ্য অনুসারে গত রাত ১০টা পর্যন্ত সংঘর্ষে নরসিংদীতে ৬, ফেনীতে ৮, লক্ষ্মীপুরে ৮, সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ ২২ জন, কিশোরগঞ্জে ৪, ঢাকায় ৮, বগুড়ায় ৫, মুন্সীগঞ্জে ৩, মাগুরায় ৪, ভোলায় ৩, রংপুরে ৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়াও পাবনায় ৩, সিলেটে ৬, কুমিল্লায় পুলিশ সদস্যসহ ৩, শেরপুরে ২, জয়পুরহাটে ১ জন নিহত হন। একজন করে নিহত হন হবিগঞ্জে, ঢাকার কেরানীগঞ্জে, সাভার ও বরিশালে।

রাজধানীতে আওয়ামী লীগ নেতাসহ নিহত ৮ : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্র্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা এবং দুজন শিক্ষার্থী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহত আওয়ামী লীগ নেতা ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম। তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন। এদিকে দুপুরে রাজধানীর জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩) নিহত হয়েছেন।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, কর্মসূচি চলাকালে সংঘাতে আহত অন্তত ১১৯ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ও গুরুতর আহত অন্তত ৩৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের মধ্যে অনেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন ও কেউ কেউ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, পল্টন, নয়াবাজার, শনির আখড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় এবং মুন্সীগঞ্জ জেলায় আহত শিক্ষার্থী, পথচারী, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে অনেককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

নরসিংদীতে ইউপি চেয়ারম্যানসহ নিহত ৬ : অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আন্দোলনকারীদের ৪ জন। গতকাল রবিবার দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। মাধবদী থানার ওসি কামরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন চরদিগলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৪০), নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৩৮), জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শ্রমিক লীগ নেতা মনিরুজ্জামান ভূইয়া ওরফে নাতি মনির (৪২), শ্রমিক লীগ নেতা আনিছুর রহমান সোহেল (৪০), মাধবদী পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার নওশের (৪০) ও অজ্ঞাত (৩৮)।

ফেনীতে সংঘর্ষে ৮ জন নিহত : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে ফেনীতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্তত আটজনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ফেনী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আসিফ ইকবাল (আরএমও) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রবিবার সন্ধ্যায় চিকিৎসক আসিফ ইকবাল বলেন, নিহত ব্যক্তিদের বয়স ১৭ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। সবাই গুলিতে নিহত হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার উত্তর জায়লস্কর গ্রামের সরোয়ার জাহান মাসুদ, ফেনী সদর উপজেলার কাশিমপুর এলাকার বাসিন্দা শিহাব উদ্দিন, গাজী ক্রস রোডের ইশতিয়াক আহমেদ, সাইদুল হক; সোনাগাজী উপজেলার মান্দারী গ্রামের বাসিন্দা মো. সাকিব ও ফাজিলপুর এলাকার বাসিন্দা মো. সাঈদ। নিহত অপর দুজনের নাম জানা যায়নি।

লক্ষ¥ীপুরেনিহত ৮, গুলিবিদ্ধ শতাধিক : লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সংঘর্ষে ৮ নিহত এবং শতাধিক গুলিবিদ্ধসহ দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। নিহতরা কলেজছাত্র হলেন মো. কাউসার, আফরান, সাব্বির ও মিজান হোসেন। এছাড়া যুবলীগের নিহতরা হলেন হারুন মেম্বার, মো. সুমন, রিয়াজ পাটওয়ারী ও অজ্ঞাত একজন। এই তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অরূপ পাল।

সিরাজগঞ্জে দফায় দফায় সংঘর্ষ, নিহত ২২ : সিরাজগঞ্জে অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় ১৩ পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকসহ ২২ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে এনায়েতপুর থানায় হামলা করে ১৩ পুলিশ সদসকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া রায়গঞ্জে দুর্বৃত্তদের হামলায় ৬ জন এবং সদরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়। পুলিশ হত্যার ঘটনা স্বীকার করেছে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি বিজয় সরকার। এ ছাড়া রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. আমিরুল ইহসান তৌহিদ বাকি নিহতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন হলো রায়গঞ্জের ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম সারোয়ার লিটন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন সরকার, সাবেক মেম্বর জাহাঙ্গীর আলম, সাংবাদিক প্রদীপ ভৌমিক, শিক্ষার্থী মো. সুমন, যুবদল কর্মী আবদুল লতিফ, সিরাজগঞ্জ জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঞ্জু হোসেন।

কিশোরগঞ্জে জেলা আ.লীগ অফিসে আগুন, সংঘর্ষে নিহত ৪ : কিশোরগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছেন। গতকাল দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের স্টেশন রোড এলাকায় এ সংঘর্ষ ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনকারীরা জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়। এছাড়াও আওয়ামী লীগ অফিসের সামনেসহ অন্য স্থানে সংঘর্ষে ৪ জন নিহত ও গুলিবিদ্ধসহ শতাধিক গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বাসার গেটের সামনে হামলা ও বটতলা পুলিশের ট্রাফিক বক্সে টায়ার জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা।

বগুড়ায় ৫ জন নিহত, গুলিবিদ্ধ ৮০ : বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে দুটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮০ জন। চারজনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ। এছাড়া আরো একজন দুপচাঁচিয়ায় মারা যান। নিশ্চিত করেছেন বীরকেদার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

নিহতের মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুপচাঁচিয়ায় ঘটনাস্থলেই মারা যান মনিরুল ইসলাম (২২)। তিনি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা সদরের বদলগাছীর বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের বীরকেদার দক্ষিণপাড়া গ্রামে। অন্যজনের নাম জিল্লুর রহমান (৪৫)। তার বাড়ি গাবতলী উপজেলায়। অন্য দুজনের বয়স আনুমানিক ৬০ ও ৩৫ বছর।

মুন্সীগঞ্জে নিহত ৩ : মুন্সীগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে ৩ জন মারা গেছেন। নিহতদের বয়স ২২-২৫ বছর। আহতদের অধিকাংশের বয়স ২০-২৫ বছরের মধ্যে। দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মো. আবু হেনা জামাল।

নিহতরা হলেন শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার প্রয়াত কাজী মতিন ফরাজীর ছেলে রিয়াজুল ফরাজী (৩৮), একই এলাকার মো. সজল (৩০) এবং উত্তর ইসলামপুর এলাকার সিরাজ সর্দারের ছেলে ডিপজল (১৯)। তাদের মধ্যে রিয়াজুল ও সজল ঘটনাস্থলে এবং হাসপাতাল নেওয়ার সময় ডিপজল মারা যান বলে জানান তার স্বজনরা।

মাগুরায় নিহত ৫ : মাগুরায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী নিহত হয়েছেন। এ সময় সংঘর্ষে ৫ পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছেন ১০ জন। রবিবার বেলা ১১টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, সকালে পারনান্দুয়ালী এলাকা থেকে বিএনপি একটি মিছিল নিয়ে শহরে ঢুকতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।

বরিশাল-ভোলায় সংঘর্ষে নিহত ৪, আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর-আগুন

ভোলায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে আজ রবিবার তিনজন নিহত হয়েছেন। সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। বিএনপির দাবি, তাদের দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দাবি, তাদের এক যুবলীগ কর্মীকে বিক্ষোভকারীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে।

বরিশালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে টুটুল চৌধুরী (৬২) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন। রবিবার দুপুরের দিকে নগরীর সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের পাশে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারান তিনি। নিহত টুটুল চৌধুরী বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

রংপুরে নিহত ৪ : এক দফা দাবিতে ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় রংপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরসহ চারজন নিহত হয়েছে। সাংবাদিকসহ আহত হয়েছে ৫০ জন। নিহতরা হলেন ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারাধন রায় হারা, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা খায়রুল আলম সবুজ, যুবলীগ নেতা মাসুম। তবে নিহত হারাধন রায়ের ভাগনেসহ অপরজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

পাবনায় নিহত ৩ : পাবনার খেয়াঘাট মোড়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থানকালে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মিছিল থেকে গুলি চালানো হলে ৩ জন নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা এই গুলি চালান। বিক্ষোভকারীরা এরপর তার গাড়ি পুড়িয়ে দেন। এই ঘটনায় মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন পাবনা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক।

সিলেটে আন্দোলনকারী-বিজিবি-পুলিশ সংঘর্ষ, নিহত ৬ : সিলেটের গোলাপগঞ্জে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে বিজিবি, পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন নিহত হয়েছেন। দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সুদর্শন সেন।

কুমিল্লায় সংঘর্ষে পুলিশ কনস্টেবলসহ নিহত ৩ : কুমিল্লার দেবীদ্বার ও দাউদকান্দি উপজেলায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে এক পুলিশ কনস্টেবলসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহত যুবকের নাম আবদুল রাজ্জাক রুবেল (২৬)। তিনি দেবীদ্বার পৌর এলাকার বারেরা গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। নিহত পুলিশ সদস্যের নাম এরশাদ মিয়া। তিনি দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ের পুলিশের সদস্য।

জয়পুরহাটে গুলিতে নিহত ১ : জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও ছররা গুলি ছোড়ে। এ সময় গুলোতে মেহেদী হাসান নামের একজন নিহত হয়েছেন। হামলা ও সংঘর্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদুসহ শতাধিক আহত হয়েছেন।

শেরপুরে সংঘর্ষে নিহত ৩ : শেরপুরে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের টহল গাড়ির চাপায় অনন্ত তিনজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। আজ ৪ আগস্ট রবিবার বিকেলে শহরের খড়মপুর এলাকার এ নিহতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষের ছাত্র ও জেলা শহরের বাগরাকশা মহল্লার বাসিন্দা তুষার (২৪), আইটি উদ্যোক্তা জেলা সদরের পাকুড়িয়া চৈতনখিলার মাহবুব (৩০)। অন্যজনের নাম এখনো জানা যায়নি।

হবিগঞ্জে সংঘর্ষে একজন নিহত : হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে আজ রবিবার রিপন শীল (২৭) নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন। তার চোখের ওপর গুলির চিহ্ন দেখা গেছে। তিনি শহরের ইনাতাবাদ এলাকার বাসিন্দা।

কেরানীগঞ্জে নিহত ১ : ঢাকার কেরানীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিকে ঘিরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে আজ রবিবার দুপুরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের প্রধান ফটকে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় অফিসের ভেতর আটকা পড়ে আওয়ামী লীগ কর্মী মো. ইফতি (৩২) নামের একজন নিহত ও প্রায় ১৫ জন আহত হন।

সাভারে যুবক নিহত : সাভারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংষর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আহমেদুল হক তিতাস।

ফেনীতে ৭ জন নিহত : ফেনীতে সংঘর্ষে ৭ জনের মৃত্যুর সংবাদ জানা গেছে। রবিবার ফেনী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ইকবাল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, এখন পর্যন্ত ৭ জন মারা গেছেন। অনেকের অবস্থা সংকটাপন্ন। প্রায় ৬০ জনের মতো আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন জেনারেল হাসপাতালে। নিহতদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ধামরাইতে ১ জন নিহত : ঢাকার ধামরাইয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অজ্ঞাত এক যুবকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও আরো একজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতের নামপরিচয় নিশ্চিত করতে যায়নি। তবে তার বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। গুলিবিদ্ধ অপরজনের নাম বিপ্লব। তিনি বাইপাইল এলাকায় সড়কের পাশে পানি বিক্রি করেন। তার বয়স আনুমানিক ৪০ বছর।

উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তন করেছেন। মঙ্গলবারের পরিবর্তে আজ সোমবার এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এতে সারা দেশ থেকে আন্দোলনকারীদের ঢাকায় আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। গতকাল রবিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close