নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৩ আগস্ট, ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ফের উত্তেজনা

খুলনায় পুলিশ, হবিগঞ্জে শ্রমিক নিহত

রাজধানীর শাহবাগ ও সায়েন্সল্যাবে অবরোধ * বৃষ্টিতে ভিজে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান * আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের প্রতিরোধ * সিলেট ও লক্ষ্মীপুরে আহত ৩০ * খুলনায় পথচারীসহ গুলিবিদ্ধ ৬।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ডাকা কর্মসূচি ঘিরে ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। গতকাল বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাস্তায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। হবিগঞ্জে গতকাল বিকেলে পুলিশ-আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে একজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া খুলনায় একজন পুলিশ সদস্য নিহত হন। এদিকে বিকেল সাড়ে ৪টায় কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। ফলে বন্ধ হয়ে যায় উভয় পাশের যান চলাচল। উত্তরায় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অংশ হিসেবে জুমার নামাজের পর সায়েন্সল্যাবে গণমিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের সঙ্গে অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ যোগ দেন। দীর্ঘসময় তারা সায়েন্সল্যাব অবরোধ করে রাখেন। এদিকে গতকাল বিকেল পৌনে ৪টায় নিউমার্কেট এলাকায় গাউছিয়া মার্কেটের সামনে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা যায়।

গত বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল কাদের প্রেরিত এক বার্তায় শুক্রবার সারা দেশে ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ নামে নতুন কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানানো হয়। বার্তায় বলা হয়, “আপনারা জানেন আমরা আমাদের কোনো ব্যক্তিস্বার্থের জন্য আন্দোলন করছি না। আমাদের আন্দোলন আপনার ও আপনার সন্তানের মুক্তির জন্য। কী অপরাধ ছিল আমাদের? সাংবিধানিক অধিকার চাওয়াটা কি আমাদের অপরাধ? কী অপরাধে শত শত ভাইকে হত্যা করা হলো? আমরা এর জবাব জানি না। কিন্তু এর জবাব ও বিচার না নিয়ে আমরা আমাদের আন্দোলনকে থামাব না। জাতির এই দুর্দিনে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অপরাধে শহীদ, আহত, পঙ্গু ও গ্রেপ্তার হওয়া সবার স্মরণে শুক্রবার দেশব্যাপী ‘প্রার্থনা ও ছাত্র জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করছি।”

নির্বিচারে হত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গতকাল জুমার নামাজ শেষে দোয়া, শহীদদের কবর জিয়ারত, মন্দির ও গির্জাসহ সব উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করতে বলা হয়। একই সঙ্গে শ্রমিক, পেশাজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, বুদ্ধিজীবী, আলেমণ্ডওলামাসহ বাংলাদেশের সব স্তরের নাগরিকের প্রতি ঘোষিত কর্মসূচি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সফল করার আহ্বান জানানো হয়।

গতকাল বৃষ্টিতে ভিজে রাজধানীর আফতাবনগর, সায়েন্সল্যাড, ধানমন্ডি, বাংলামোটর, উত্তরা, রামপুরা-বনশ্রী, প্রেস ক্লাব ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

বেলা সাড়ে ১১টার পরে আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। বৃষ্টিতে ভিজে মিছিল নিয়ে তারা রামপুরা ব্রিজ পার হয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে আবার ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সমাবেশে শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সংঘাতে হতাহতের ঘটনায় বিচার দাবি করেন। এ সময় তারা গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন। শিক্ষার্থীদের মিছিলের সামনে ও পেছনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছিল।

মিছিলে অংশ নেওয়া ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশে যে অস্থিরতা চলছে, তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজকে আমরা এই কর্মসূচি পালন করছি। আমাদের যে ভাইরা হত্যার শিকার হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আমরাসহ সারা দেশের মানুষ সোচ্চার আছি। সাধারণ নাগরিক আমাদের সঙ্গে একাত্ম হয়েছে। আমরা জানি, বিগত দিনগুলোসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গণগ্রেপ্তার কর্মসূচি চলছে। আমরা এর প্রতিবাদ এবং ৯ দফা দাবিতে কর্মসূচি চালিয়ে আসছি। যতদিন আমাদের দাবি পূরণ না হয়, আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাব। বেলা ১১টার দিকে উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। কাছাকাছি সময়ে বৃষ্টি উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন চিকিৎসক, মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা। সর্বস্তরের চিকিৎসক, মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই সভার আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও অংশ নেন। সমাবেশ থেকে কোটা আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় বিচার দাবি করা হয়।

শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন চিকিৎসকরা। গতকাল সকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেত হন মেডিকেল, ডেন্টাল কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকরা। সবাবেশে বক্তারা বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমাতে সরকার নোংরা খেলায় মেতেছে। সেনা-পুলিশ-বিজিবি দিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করে এই আন্দোলন থামানো যাবে না। অন্যায়-অবিচারকে কীভাবে রুখতে হয় ছাত্রসমাজ তা দেখিয়ে দিয়েছে।

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তির নাম মোস্তাক মিয়া (২৪)। তিনি পেশায় শ্রমিক। গতকাল বিকেলে হবিগঞ্জ শহরের তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকায় সংঘর্ষ হয়। মোস্তাকের সঙ্গে কাজ করেন মারুফ হোসেন। তিনি বলেন, মোস্তাক এখানে জুতা কিনতে এসেছিল। এসে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যায়। গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

আন্দোলনকারীরা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপির বাসভবনের সামনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া পুড়িয়ে দেওয়া হয় কয়েকটি মোটরসাইকেল। জুমার নামাজের পর কোর্ট মসজিদ প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়। একপর্যায়ে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ তিন শতাধিক রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ও যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে জেলা শহরের চকবাজার এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, জুমার নামাজের পর শহরের চকবাজার জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল নিয়ে যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শহর প্রদক্ষিণ করে। এতে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ। এদিকে হঠাৎ করে কোটা আন্দোলনকারী শতাধিক শিক্ষার্থী ভুয়া ভুয়া স্লোগানে মিছিল বের করে। এ সময় সদর উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের ধাওয়া দিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) হাসান মোস্তফা স্বপন জানান, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও যুবলীগ-ছাত্রলীগের মধ্যে মিছিল করা নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। কোনো ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে বৃষ্টির মধ্যেই নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে গণমিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় মুসল্লিরাও। জুমার নামাজের পর মসজিদের সামনে জড়ো হতে থাকেন তারা। মিছিলে নারী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিল উল্লেখযোগ্য। সেখানে জমায়েত শেষে মিছিল নিয়ে লালদীঘি ময়দান হয়ে নিউমার্কেট মোড়ের দিকে যান। এরপর সেখানেও তারা আধা ঘণ্টা অবস্থান করে পুনরায় রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে টাইগার পাস হয়ে জিইসি মোড়ের দিকে যান। এ সময় আন্দরকিল্লা মোড়সহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোয় ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রামের অন্যতম সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি ‘প্রার্থনা ও ছাত্র জনতার গণমিছিল’-এর ডাক দেন।

পাবনা প্রতিনিধি জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের হত্যার বিচার ও মামলা প্রত্যাহারসহ ৯ দফা দাবিতে ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে শান্তিপূর্ণ গণমিছিল করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় শান্তিপূর্ণ এই গণমিছিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা করতে দেখা গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে গতকাল বাদ জুমা পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করেছেন। যেহেতু তারা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করেছে আমরা তাদের সহযোগিতা করেছি।

মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার মুক্তাগাছা পৌরসভার সামনে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। বিকেল সোয়া ৩টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা সেখানে একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও অভিভাবকরা তাদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সেখানে অংশ নেন। এ সময় ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে ঘোষিত ৯ দফা দাবি মেনে নেওয়ার দাবি জানানোসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা কোটা আন্দোলনে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় মহাসড়কেই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন চলে। পরে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা চলে যায়। যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা থানার মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু শিক্ষার্থী পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে দেখা যায়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, খুলনা সাতক্ষীরা মহাসড়কে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গতকাল বিকেলে শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছে প্রায় ১০ শিক্ষার্থী। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ছোড়লে শিক্ষার্থীরাও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জ শহরে ও সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রার্থনা ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল জুমার নামাজের পর শহরের ডিআইটি মসজিদ এলাকায় দোয়া ও দোয়া শেষে বিক্ষোভ করা হয়। সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা।

শহরে মিছিলে অংশ নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি তোলারাম কলেজের এক শিক্ষার্থী জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি পালন করতে এবং আমাদের আন্দোলন চলাকালীন হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিলে অংশ নিয়েছে। যত শিক্ষার্থীদের সরকার গ্রেপ্তার করেছে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। পাশাপাশি গণহারে দেশব্যাপী দায়ের করা শত শত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লায় গণমিছিল কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল জুমার নামাজ শেষে নগরীর ঝাউতলা ছাতা মসজিদের সামনে থেকে পূর্বনির্ধারিত এ গণমিছিল করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ গণমিছিলে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বিভিন্ন পেশার লোকজন অংশ নেন। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে নগরী কান্দিপাড় এসে সমাপ্ত হয়। বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের ৯ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন কর্মসূচি চলমান থাকবে।’ এ প্রসঙ্গে নগরীর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেব বলেন, নগরীর ঝাউতলা ছাতা মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে রেসকোর্স বাদশা মিয়ার বাজার হয়ে পুনরায় পুলিশ লাইন স্কুল গেটের সামনে এসে ইউটার্ন করে ফ্লাইওভারের মাথায় অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দেন কয়েকজন। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে আন্দোলনকারীরা চলে যায়।

নলছিটি (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি জানান, বরিশালে গণমিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত মহাসড়কের পাশে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলে ছাত্র-জনতার পাশাপাশি অভিভাবকরাও যুক্ত হন। এ সময় শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সংঘাতে হতাহতের ঘটনায় বিচার দাবি করেন। এ সময় তারা গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেয়। এর আগে বিএম কলেজের সামনে থেকে গণমিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনের মহাসড়কে অবস্থান নেন। এতে মহাসড়কে যান চলাচলে ধীরগতি দেখা দেয়। পরে শিক্ষার্থীরাই যান চলাচল স্বাভাবিকে কাজ করেন। এ সময় বাস টার্মিনাল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শতাধিক সদস্য উপস্থিতি ছিলেন। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লোকমান হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা মহাসড়কের পাশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তাতে যানবাহন চলাচলে কোনো বাধা সৃষ্টি হয়নি। পরে শিক্ষার্থীরা বিএম কলেজের দিকে চলে গেছে।

সিলেট প্রতিনিধি ও শাবি প্রতিনিনিধ জানান, সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘গণমিছিল’ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীরা বাধা ডিঙিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ও শটগানের গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাতজনকে আটক করেছে। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) পার্শ্ববর্তী আখালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী, পুলিশ, সাংবাদিক ও পথচারী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বগুড়া প্রতিনিধি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পদযাত্রা, গণমিছিল ও সমাবেশ করছেন। গতকাল জুমার নামাজের পর বৃষ্টির মধ্যে শহরের রাস্তায় রাস্তায় শিক্ষার্থীদের ঢল নামে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন অভিভাবকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। দুপুর ২টা থেকে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।

খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচিকে কেন্দ্র শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল বিকেল ৫টা ৩৯ মিনিটে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শিববাড়ী মোড়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। এতে পুরো গল্লামারী এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গতকাল রাত সাড়ে ৭টা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলছিল। এতে এক পথচারীসহ কমপক্ষে ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ৯ দফা দাবি আদায়ের গণপদযাত্রার প্রস্তুতিকালে পুলিশি হামলায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়। হামলায় এলোমেলো শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ৫ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। তারা হলেন- শোভন হোসেন, তৌসিফ হোসেন, নিশান, মোয়াজ সাদ। কালীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আজিফ জানান, আন্দোলনকারীরা পুলিশের ওপর ইট পাটকেল ছুড়লে পুলিশ ৫ জনকে আটক করে। তিনি আরো বলেন, আন্দোলনকে ঘিরে যেকোনো নাশকতা প্রতিরোধে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close