বদরুল আলম মজুমদার
দল পুনর্গঠন
পরীক্ষিত ও সক্ষমদের নেতৃত্বে চায় বিএনপি
মাঠের আন্দোলনে সাহসী নেতৃত্বের খোঁজ করছে বিএনপি। দলটির মহানগর, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনের কাজ দ্রুত হওয়ার কথা থাকলেও সাহসী, আত্মপ্রত্যয়ী এবং সক্ষম নেতাদের খুঁজে বের করতে সময় নিচ্ছে হাইকমান্ড। দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ঈদুল আজহার ঠিক আগে জাতীয়তাবাদী যুবদল ও ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ একাধিক ইউনিটের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। ঈদের পরপরই সেখানে কমিটি গঠনের সম্ভাবনা থাকলেও গত তিন সপ্তাহেও নতুন কমিটি হয়নি।
জানা গেছে, সম্প্রতি বিএনপির নানা পদে ব্যাপক রদবদলে কিছু ভুলভ্রান্তি হওয়ায় এবার সময় নিয়েই কমিটি ঘোষণা করা হবে। নগর এবং সহযোগী দলের কমিটি ঘোষণায় কোনো ভুল হলে মাঠের আন্দোলনে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। তাই এবার দেখেশুনে এবং বিএনপি সমর্থক বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সবার আস্থাভাজন একটি কমিটি উপহার দিতে চান বিএনপি নেতারা। তবে দলের আরেকটি সূত্র জানায়, ঈদুল আজহার পরই নতুন কমিটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু ঈদের পর দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ায় কমিটিকেন্দ্রিক তৎপরতা পিছিয়ে পড়ে। তাছাড়া বিএনপির দু-তিনজন সিনিয়র নেতা তাদের বলয়ের লোক ঢোকাতে নানা তৎপরতা শুরু করায় দল পুনর্গঠনে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে যুবদলের কমিটি গঠনে এ জটিলতা তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, তরুণদের দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের চিন্তাভাবনা রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের। দলের এমন মনোভাব জেনে মহানগরের রাজনীতিতে সক্রিয় সিনিয়র নেতারাও কমিটিতে পদ পেতে শেষ মুহূর্তে তৎপর হয়ে উঠেছেন। এদিকে গত ২৯ জুন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে রাজধানীতে বড় ধরনের জমায়েত করে দলটি। এ সমাবেশের আগে বিলুপ্তকৃত ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, যুবদল এবং ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর কমিটির প্রস্তুতি সভায় বারবার বার্তা দেওয়া হয়েছে, এ সমাবেশ একদিকে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির; অন্যদিকে নতুন নেতা বাছাই করার। নেতার পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করেই নতুন পদ দেওয়া হতে পারে। এজন্য পদপ্রত্যাশীরা নিজ নিজ এলাকা থেকে এবং নিজস্ব কর্মী বাহিনী নিয়ে বড় ধরনের শোডাউন করেছেন। তবে মহানগরগুলোর নতুন কমিটিতে সাবেক ছাত্রনেতারা বেশি প্রাধান্য পেতে পারেন- বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। এক্ষেত্রে ক্লিন ইমেজ ও সাংগঠনিক দক্ষতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তারা।
জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নেতৃত্ব গঠনে কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। বাইরে থেকে কাউকে এনে দায়িত্ব দেওয়া হলে মহানগর উত্তর ঠিকভাবে চলবে না বলে এরই মধ্যে হাইকমান্ডকে জানানো হয়েছে। এখানে সদ্য সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হককে দুই শীর্ষ পদের একটিতে রেখে কমিটি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। এছাড়া শীর্ষ পদে আলোচনায় আছেন যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব ও যুবদলের সাবেক সহসভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর। নিরবের নাম আগে আলোচনায় না থাকলেও সম্প্রতি তিনি কারামুক্ত হওয়ায় কমিটি ঘিরে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। এছাড়া পরিছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত বিদায়ি কমিটির সিনিয়র সদস্য তাবিথ আউয়ালের নামও আসছে। মহানগর দক্ষিণ বিএনপির কমিটিতে তেমন কোনো চমক না থাকলেও সাবেক সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুকে সভাপতি এবং সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রবিনকে সম্পাদক রাখা হতে পারে নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র। এর বাইরে হাবিবুর রশিদ, আ ন ম সাইফুল ইসলাম, নবী উল্লাহ নবীসহ ডজনখানেক নেতার নাম আসছে ঘুরেফিরে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদে আলোচনায় রয়েছেন সদ্য বিদায়ি কমিটির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ আজিজ, এস এম সাইফুল ইসলাম, নাজিমুর রহমান, সদস্য এরশাদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তীসহ ডজনখানেক নেতা। এর মধ্যে রাজপথের নেতা হিসেবে পরিচিত ডা. শাহাদাত হোসেনকে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিবও করা হতে পারে। বরিশাল মহানগরের নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদে আলোচনায় আছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, সদ্য বিদায়ি কমিটির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউদ্দিন শিকদার, সদস্য আফরোজা খানম নাসরীন, বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁন, সাবেক আহ্বায়ক মজিবুর রহমান নান্টুসহ ডজনখানেক নেতা।
এদিকে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি না থাকায় সারা দেশে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন কমিটি চান। নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী হিসেবে বিদায়ি কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্না এবং সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন এগিয়ে রয়েছেন। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপিতে যুবদলের সাবেক সহসভাপতি এস এম জাহাঙ্গীরকে রাখা না হলে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পদে থাকতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তাদের বাইরে শীর্ষ পদে আলোচনায় আছেন বিদায়ি কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মামুন হাসান, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, গোলাম মাওলা শাহীন, সদস্য সাঈদ ইকবাল টিটু (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদমর্যাদার) ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার। এছাড়া শীর্ষ পদে বিশেষভাবে আলোচনায় আছেন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টু, সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।
দলের নতুন ইউনিট কমিটির নেতৃত্ব এবং পদায়ন প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) একটি আদর্শিক দল। তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে থাকলেও তিনি নেতাদের অতীত ত্যাগ, সামাজিক অবস্থান এবং নিজস্ব বলয়কে প্রাধান্য দিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করেই নেতৃত্ব নির্ধারণ করেন। এ নিয়ে কোনো বিরোধ নেই, থাকতে পারে না। এদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কেন্দ্রীয় মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল, জাসাস ও শ্রমিক দলের কমিটিও ভেঙে নতুন কমিটি দেওয়ার ঘোষণার চিন্তাধারা চলছে। পাশাপাশি সম্প্রতি ঘোষিত ছাত্রদলের ৭ সদস্যের কমিটির আকারও বাড়িয়ে ২৬০ সদস্যের করা হয়েছে।
"