বদরুল আলম মজুমদার

  ১২ জুন, ২০২৪

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ

আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি

সম্মেলন শেষ হওয়ার দুই বছর পার হয়ে গেলেও থানা ও ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা করতে পারেননি দুই নগরীর আওয়ামী লীগ নেতারা। ঢাকার নগর কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও কমিটি না দিতে পারায় সমালোচনা হচ্ছিল কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায়ে। দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও নতুন কমিটি না আসায় মাঠ নেতারাও ছিলেন হতাশায়। তাদের এ হতাশা বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেলেও নেতারা ছিলেন নিশ্চুুপ। অবশেষে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অব্যাহত চাপের মুখে দলের দপ্তরে কমিটি জমা দিয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। সব ঠিক থাকলেও সহসায় থানা ও ওয়ার্ড কমিটি জমা দেবে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগও।

জানা গেছে, এর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তরের থানা-ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটিগুলো জমা দেওয়া হয়েছে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরে। তবে জমা দেওয়ার তালিকা নিয়ে এরই মধ্যে নেতারা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। কমিটি ঘোষণার পর সেটা আরো প্রকট হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটি জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন এ অংশের নেতারা। এসব কমিটি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চূড়ান্ত অনুমোদন শেষে একযোগে ঘোষণা করার কথা রয়েছে। এ নিয়ে পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। তবে কমিটি নিয়ে যেকোনো বির্তকের জন্ম হতে পারে। এ বিষয়ে নেতাদের করণীয় বলে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

গত সপ্তাহের প্রতিনিধি সভায় তিনি বলেছেন, প্রস্তাবিত কমিটিগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে পৌঁছাবেন। আর কমিটি নিয়ে কেউ শোরগোল করতে পারবেন না। কোনো কথা থাকলে লিখিত অভিযোগ দলীয় সভাপতির ধানমন্ডি কার্যালয়ে জমা দেবেন। সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রস্তাবিত কমিটি জমা দেওয়ার বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেছেন, এক বছর আগেই তাদের অংশের থানা-ওয়ার্ড কমিটিগুলো করে রাখা হয়েছিল। নানা কারণে এতদিন জমা দেওয়া না গেলেও এখন আমরা প্রস্তাবিত কমিটি জমা দিয়েছি। কমিটিগুলোয় স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের ত্যাগী ও সাংগঠনিকভাবে দক্ষ নেতাদেরই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কোনো অবস্থায়ই বিতর্কিত ও অপরাধে যুক্ত এবং অনুপ্রবেশকারীদের কমিটিতে আনা হবে না।

মহানগর দক্ষিণের নেতারা এখনো তাদের অংশের থানা-ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটিগুলো কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেয়নি। মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় কমিটি জমা দিতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে বলে দাবি এ অংশের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের।

মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির জানান, দক্ষিণের থানা-ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কাজ তারা আগেই শেষ করেছেন। তবে সভাপতির অসুস্থতার কারণে এটি কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেওয়া যায়নি। দুয়েক দিনের মধ্যে প্রস্তাবিত কমিটিগুলো জমা দেবেন তারা।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের আওতায় ২৬টি থানা, ৬৪টি ওয়ার্ড, একটি ইউনিয়ন এবং ৮৮৪টি ইউনিট কমিটি রয়েছে। অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আওতায় রয়েছে ২৪টি থানা, ৭৫টি ওয়ার্ড ও ৬১০টি ইউনিট কমিটি। দীর্ঘদিনেও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের আওতাধীন থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটিগুলো গঠন ও ঘোষণা না হওয়ায় হতাশা চলছে তৃণমূলের নেতাকর্মীর মধ্যে। তবে ২০২২ সালের অক্টোববের মধ্যে দুই অংশের আওতাধীন সব থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট সম্মেলনগুলো শেষ করা হয়। এরপর সম্মেলনস্থলেই মহানগর উত্তরের ৮৮৪টি এবং দক্ষিণের ৬১০টি ইউনিট কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পাশাপাশি সিংহভাগ ইউনিটি কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়। তবে তৃণমূল সম্মেলনের ২ বছর পার হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত কোনো থানা-ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণা হয়নি।

এ অবস্থায় দলের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারক নেতাদের বারবার তাগাদা ও হুঁশিয়ারির পরও কোনো থানা-ওয়ার্ড কমিটি গঠন ও ঘোষণা হয়নি। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় ফোরামের একাধিক সভায় বাবরার এ বিষয়ে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। যদিও এ সময়সীমা একাধিকার পার হলেও দীর্ঘ সময়েও কমিটি গঠনের পথে হাঁটেননি দুই অংশের নেতারা।

বিশেষ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের থানা ও ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠায় এ নিয়ে এক ধরনের জটিলতাও চলছে। এ অংশের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্য এবং মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বিতর্কিত, নানা অপরাধে যুক্ত এবং বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দল থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের থানা-ওয়ার্ড কমিটির পদ দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় বিতর্কের ভয়ে দক্ষিণ অংশের নেতারা প্রস্তাবিত থানা-ওয়ার্ড কমিটি প্রকাশ্যে আনার সাহস পাচ্ছেন না। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত দক্ষিণের নেতারা প্রস্তাবিত কমিটিগুলো জমা দিলেও উল্লিখিত জটিলতার কারণে দুই অংশের প্রস্তাবিত কমিটি অনুমোদন ও ঘোষণার প্রক্রিয়া ঝুলে যায় কিনা, সেটা নিয়েও এক ধরনের উদ্বেগে রয়েছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close