নিজস্ব প্রতিবেদক
অনলাইনে কোরবানির পশু
১০ হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের আশা
প্রতি বছরের মতো এবারও কোরবানির ঈদকে ঘিরে অনলাইনে বেচাকেনা হচ্ছে পশু। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে জোর দেওয়া হয়েছে। গত বছর অনলাইনে পশু বেচাকেনা হয়েছিল ৪ হাজার ২৩১ কোটি ৫৯ লাখ টাকার। অনলাইনে বিক্রি হয়েছিল ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৯৬টি পশু। চলতি বছরে অনলাইনে বেচাকেনা ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কথা জানা গেছে, দেশের গবাদি পশুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে।
সার্বিক বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আবদুর রহমান বলেছেন, চলতি বছরে সারা দেশের খামারিরা নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত করেছেন। আমাদের হিসাবে চাহিদার চেয়ে বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। ফলে কোরবানির পশু নিয়ে কোনো রকম সংশয়, সংকট বা আশঙ্কার কারণ নেই। আবার খামারিদের স্বার্থ সর্বোচ্চ সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এজন্য অবৈধ উপায়ে গবাদি পশুর অনুপ্রবেশ যেন না ঘটতে পারে, সেজন্য সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে পশু আমদানি করা হবে না, আমদানির অনুমতিও দেওয়া হবে না।
মন্ত্রী বলেন, দেশের বাজারগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে বিশেষ লক্ষ রাখা হবে। হাটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পর্যাপ্ত সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া কোরবানির পশুর স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে বাজারগুলোতে পর্যাপ্ত সুরক্ষাব্যবস্থা রাখা হবে। প্রতিটি নির্ধারিত কোরবানির পশুর হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম থাকবে। কোরবানির পশু নিরাপদ ও কোরবানি উপযোগী কি না বা তাদের শরীরে দূষিত পদার্থ প্রবেশ করানো হয়েছে কি না তারা সে বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানাবেন। দেশের মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ভালো পশু কিনতে পারে তার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ঈদের আগমুহূর্তে পশুর বিশেষ পরিচর্চায় ব্যস্ত খামারিরা। পশুর স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে তারা খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। পশুগুলোকে হৃষ্টপুষ্ট রাখতে কাঁচা ঘাস, খৈল, ভুসি, চালের খুদণ্ডকুড়াসহ প্রাকৃতিক খাবার বেশি খাওয়ানো হচ্ছে।
তবে খামারিরা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পশু প্রবেশ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছে। কুমিল্লা জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ১০৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে সীমান্ত। প্রতি বছরই কোরবানির ঈদের সময় অবৈধভাবে কমবেশি গরু প্রবেশ করে। এবারও জেলার খামারিরা শঙ্কায় আছেন। গম, ভুসি, ভিটামিন, ভুট্টাসহ অন্যান্য খাবারের দাম যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে সঠিক মূল্য পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন খামারিরা। এ ছাড়া এবার পশু পালনে চিকিৎসা ব্যয় হয়েছে অনেক বেশি। খামারিরা বলছেন, পশু পালনে খরচ বৃদ্ধি ও খাবারের দামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পশু তৈরি করা কঠিন হয়ে গেছে। পশু পালনের জন্য সবই এখন বেশি দামে কিনতে হয়। ফলে পশুর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার পশুর দাম শুনলে ক্রেতারা তাদের বাজেটের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন। বর্তমান বাজারে ভোক্তাদের দামের সঙ্গে সমন্বয় করা খুবই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এজন্য বিক্রিও কিছুটা কম হচ্ছে। পাশাপাশি অবৈধভাবে পশু প্রবেশ করলে আমরা দিন শেষে বিক্রিই করতে পারব না।
রাজধানীর কমলাপুরে বসেছে অস্থায়ী পশুর হাট। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশ থেকে শুরু করে দেওয়ানবাগ শরীফ হয়ে গোপীবাগের কিছু এলাকা জুড়ে এই হাটের অবস্থান। হাট পুরোপুরি প্রস্তুত না হলেও এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিক্রির জন্য কোরবানির পশু নিয়ে আসা শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে হাট এখনো পুরোদমে জমে ওঠেনি। হাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী শুক্রবার জমে উঠবে পশুর হাট।
কমলাপুর গরুর হাটের ইজারাদার ও সমন্বয়ক গিয়াসউদ্দিন পলাশ বলেন, এ বছর অনেক বেশি টাকা দিয়ে হাট ইজারা নিতে হয়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী হাসিলের রেট বাড়াতে পারছি না। এ বছর ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা থাকবে হাটে। গরু-ছাগলের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থাও থাকবে। এছাড়া পাইকারদের জন্য থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসি ক্যামেরা দিয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের টিম জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা করবে।
"