নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ জুন, ২০২৪

দাম কমছে যেসব পণ্যের

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন। এবার বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকছে। সঙ্গে থাকছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নয়ন ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর চ্যালেঞ্জ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, এ বাজেটে শুল্ক-করারোপ কমানো হতে পারে বেশকিছু পণ্য ও সেবায়। এতে করে কিছু পণ্যের দাম কমতে পারে।

জানা গেছে, নতুন বাজেটে কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য ব্যবহৃত উপকরণ ডায়ালাইসিস ফিল্টারের দাম কমতে পারে। তাই খরচ কমতে পারে ডায়ালাইসিসে। এছাড়া ডেঙ্গু পরীক্ষার কিটের দাম কমতে পারে। প্যাকেটজাত গুঁড়ো দুধ আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। চকলেট আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে কমতে পারে আমদানিকৃত গুঁড়ো দুধ ও চকলেটের দাম। ল্যাপটপ আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হলেও ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে ৩১ শতাংশের পরিবর্তে ২০.৫০ শতাংশ শুল্ককর দিতে হবে বিধায় ল্যাপটপের দামও কমতে পারে।

এয়ারক্রাফটের ইঞ্জিন ও প্রপেলার আমদানি পর্যায়ে কমতে পারে মূসক। ফলে উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণে কমতে পারে খরচ। দেশে তৈরি মোটরসাইকেলের সিকেডি ইঞ্জিনের পার্টসের আমদানি শুল্ক কমছে। এ কারণে দেশে তৈরি মোটরসাইকেলের দাম কমতে পারে। দেশীয় বিমান পরিচালনা সংস্থাগুলো বিদেশি সংস্থাগুলোর তুলনায় পিছিয়ে আছে। এ অবস্থায় এভিয়েশন খাতের উত্তরণকল্পে ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিবেচনায় এয়ারক্রাফট ইঞ্জিন ও প্রপেলার আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ওষুধ, ওয়াশিং প্ল্যান্ট, পেইন্ট প্রভৃতি শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল হচ্ছে মিথানল। শতভাগ আমদানিনির্ভর এ পণ্যটি বাল্ক আকারে আমদানি করলে শুল্কহার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরনের কিটসহ সব ধরনের পরীক্ষা সরঞ্জামের ওপর শুল্ককর রেয়াত সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিডনি রোগী চিকিৎসার অন্যতম সরঞ্জাম ডায়ালাইসিস ফিল্টার ও ডায়ালাইসিস সার্কিট পণ্যের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে এক শতাংশ করা হয়েছে। ক্যানসার রোগীর চিকিৎসার ব্যবহৃত কিছু সরঞ্জাম রেয়াতি সুবিধায় যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

কার্পেট তৈরির প্রধান কাঁচামাল পলিপ্রেপাইলিন ইয়ার্ন আমদানির শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে। এতে দেশে তৈরি কার্পেটের দাম কমতে পারে। রড, বার ও এঙ্গেল তৈরির কাঁচামাল ম্যাঙ্গানিজ আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে। এতে লোহা জাতীয় পণ্যের দাম কমতে পারে। দেশে উৎপাদিত সুইস-সকেট, হোল্ডার উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামালের আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে বিধায় এসব পণ্যের দাম কমতে পারে। এ পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে ইলেকট্রিক মোটরের দাম কমতে পারে।

বিশাল অঙ্কের প্রস্তাবিত এ বাজেট বাস্তবায়নের জন্য রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত খাত থেকে আসবে আরো ১৫ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেট বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এডিপির আকার করা হয় ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরে ভর্তুকিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশের বেশি ছিল। কিন্তু আগামী অর্থবছরে ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

আগামী অর্থবছর নিত্যপণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা এবং জীবনযাত্রার মান যেন সীমার মধ্যে থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে চান অর্থমন্ত্রী। এ জন্য মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে সাড়ে ৬ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের পরিকল্পনা থাকছে। যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে সর্বোচ্চ ব্যয় হবে সুদ পরিশোধে ১ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা, ভর্তুকি ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ও পেনশন ১ লাখ কোটি টাকা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close