নিজস্ব প্রতিবেদক
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন
অংশগ্রহণ নিয়ে জাপায় ধোঁয়াশা তবু মনোনয়নপত্র বিক্রি
সাদ এরশাদের রংপুরের আসনে মনোনয়ন কিনলেন জি এম কাদের
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে জাতীয় পার্টিতে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রশ্নে জাপা নেতারা বিভক্ত মত দিয়েছেন। এক নেতা বলেছেন, তিনি পরিস্থিতি দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। অন্য আরো নেতা বলেছেন, এবার ভালো নির্বাচন হবে। তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না-করার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সোমবার পর্যন্ত এ ধোঁয়াশার নিরসন হয়নি। তবে সংসদ নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে দলটি। গতকাল পাঁচ শতাধিক মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয়েছে। প্রতিটি মনোনয়নপত্রের দাম রাখা হয়েছে ৩০ হাজার টাকা।
বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয় মিলনায়তনে মনোনয়ন ফরম বিতরণ উদ্বোধন করেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এ সময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপিসহ জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতারা মনোনয়ন ফরম গ্রহণ করেন। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া আনুষ্ঠানিকভাবে পার্টির সিনিয়র নেতাদের হাতে মনোনয়ন ফরম তুলে দেন। গতকাল জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপিও মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছেন। মনোনয়ন ফরম বিতরণের প্রথম দিনে ৫৫৭টি ফরম গ্রহণ করেছেন নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নেতাকর্মীরা।
এ সময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল। আমরা আশা করেছিলাম আনন্দমুখর পরিবেশে নির্বাচন হবে। দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেই নির্বাচনে ভোট দিতে পারবে। আমরা নির্বাচনে যাওয়ার প্রাথমিক কাজ শুরু করেছি। এটি নির্বাচনে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, নির্বাচনে যেন সাধারণ ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করুন। নির্বাচনে আমরা আস্থার পরিবেশ চাই। জাতীয় পার্টির সব পর্যায়ের নেতা পার্টি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিয়েছেন। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি নির্বাচনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে শুধু আমরা মহাজোটের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিই। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের আসনভিত্তিক নির্বাচনী সমঝোতা ছিল। এখন জাতীয় পার্টি কোনো জোটের সঙ্গে নেই। আমরা ৩০০ আসনেই আমাদের নিজস্ব প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
জানা গেছে, প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রতনা এমপি, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, রানা মোহাম্মদ সোহেল (অব.) এমপি, আতিকুর রহমান আতিক, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদের এমপি, নুরুল ইসলাম তালুকদার এমপি, ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান এমপি গতকাল মনোনয়ন ফরম গ্রহণ করেছেন।
জাপা চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয় থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও গ্রহণ করা হবে। দলটির মনোনয়ন ফরমের মূল্য ৩০ হাজার টাকা।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে দেখা যায়, দলটির চেয়ারম্যান কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় ৮টি বিভাগের মননোয়ন ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগ, খুলনা বিভাগ, ঢাকা বিভাগ, বরিশাল বিভাগ, সিলেট বিভাগ, চট্টগ্রাম বিভাগ, রাজশাহী বিভাগ এবং রংপুর বিভাগের মননোয়ন ফরম বিতরণ করা হচ্ছে। এ সময় মনোনয়ন ফরম বিক্রিকে কেন্দ্র করে দলটির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সামনে মনোনয়নপ্রত্যাশীর ভিড় লক্ষক্ষ্য করা গেছে।
দলটির একাধিক সিনিয়র পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলীয় মনোনয়ন বিক্রি শুরু হলেও দলের পক্ষক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
জাপার পক্ষক্ষ থেকে জানানো হয়, মনোনয়ন বিতরণ শেষে আগামী ২৪ নভেম্বর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ, ২৫ নভেম্বর খুলনা ও বরিশাল বিভাগ, ২৬ নভেম্বর ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ, ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রার্থীদের সাক্ষক্ষাৎকার নেওয়া হবে। আগামী ২৮ নভেম্বর জাতীয় পার্টি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে।
সাদ এরশাদ : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের নিজের আসন লালমনিরহাট সদর আসনের পরিবর্তে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন রওশনপুত্র সাদ এরশাদের আসন রংপুর সদর আসনের। তার স্ত্রী শেরিফা কাদের ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।
সকাল ১১টার দিকে বাবলার নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-৪ আসন থেকে সহস্রাধিক নেতাকর্মী বর্ণাঢ্য মিছিল নিয়ে মনোনয়ন সংগ্রহ করতে বনানীর জাপা কার্যালয়ে উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বেলা ২টা পর্যন্ত বাবলার সমর্থকরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে রাখে পুরো এলাকা। বাবলার পক্ষেক্ষ মনোনয়ন কেনেন তার স্ত্রী ও জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান সালমা হোসেন।
জাপার দপ্তর সূত্র জানায়, গতকাল পাঁচ শতাধিক মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে।
এদিকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরুর ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না, সে বিষয়ে জাতীয় পার্টি অবস্থান স্পষ্ট করেনি। দলের মহাসচিব মুজিবুল হক উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখছি। সময়ের বাধ্যবাধকতা আছে, তাই নির্বাচনী কার্যক্রম এগিয়ে রাখছি। দলের চেয়ারম্যান ৩০ নভেম্বরের আগে নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
জাপার কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মানুষের স্বার্থে ও দেশের স্বার্থে নির্বাচনে যাচ্ছি। দেশে যেভাবে উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে, তার ধারাবাহিকতা রক্ষক্ষায় সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে।
কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনীমুখী দল। আমি সারা বছরই দলীয় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকি। নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে মনে করি।
"