প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২১ নভেম্বর, ২০২৩

গাজায় দেড় মাস ধরে ইসরায়েলি হামলা

২৮ নবজাতক মিসরে

গাজায় ইসরায়েলের হামলার ৪৫তম দিন পার হয়েছে সোমবার (২০ নভেম্বর)। ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার বিমান হামলায় প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন শত শত ফিলিস্তিনি। গত দেড় মাসে গাজায় নিহত ছাড়িয়েছে ১৩ হাজার। বোমা হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি ট্যাংক ও সেনারা। এদিকে আল-শিফা হাসপাতালে থাকা ৩১ নবজাতকের মধ্যে ২৮ শিশুকে চিকিৎসার জন্য মিসরে নেওয়া হয়েছে। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোমবার সকালে এক পোস্টে জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের বিমান হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন ৩২ হাজারের বেশি। হতাহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরো জানায়, নিহতদের মধ্যে ৫ হাজার ৫০০ শিশু এবং ৪ হাজার ১০০ নারী রয়েছেন। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছে আরো ৬ হাজার। তাদের বেশিরভাগই বিমান হামলায় ধূলিসাৎ হওয়া বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছে।

গাজার হামাস যোদ্ধারা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামলা চালায়। ওই একদিনের হামলায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে বলে দাবি তেলআবিবের। ইসরায়েল এর আগে ১৪০০ জন নিহতের কথা জানালেও পরে তা সংশোধন করে ১২০০ নিহত বলে জানায়। এছাড়া আরো ২০০ জন হামাসের হাতে জিম্মি রয়েছে বলে দাবি ইসরায়েল সরকারের। হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে ওইদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। তাদের হামলা থেকে রেহাই পায়নি জাতিসংঘ স্কুল, আশ্রয়শিবির, হাসপাতাল, মসজিদ, গির্জা কোনো কিছুই। এমনকি আহতদের নিয়ে যাওয়ার সময় চলন্ত অ্যাম্বুলেন্সেও বোমা হামলা চালিয়ে ধুলিসাৎ করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি বিমানের বোমায় গাজার ৭০ শতাংশের বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে অন্তত ১০ লাখ ফিলিস্তিনি।

দেড় মাস ধরে বিমান ও স্থল হামলার পাশাপাশি গাজায় খাবার, পানি, গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। এতে খাদ্য-পানির অভাবে সেখানে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় গাজায় দেখা দিয়েছে কলেরাসহ নানা রোগ।

এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বের যুদ্ধ বিরতির চাপ বরাবরই উপেক্ষা করে যাচ্ছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকার। হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত গাজায় হামলা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

অকালজাত ২৮ নবজাতক মিসরে : গাজার বন্ধ হয়ে যাওয়া আল-শিফা হাসপাতাল থেকে সরানো ২৮ অকালজাত নবজাতককে মিসরে নেওয়া হয়েছে। সোমবার (২০ নভেম্বর) রাফাহ ক্রসিং দিয়ে এসব শিশুকে মিসরে পাঠানো হয়। গাজার উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফা ইসরায়েলি হামলা ও অবরোধে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর রবিবার সেখান থেকে ৩১ নবজাতককে সরিয়ে নেওয়া হয়। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উদ্যোগে দুজন চিকিৎসক ও তিনজন নার্সের তত্ত্বাবধানে এসব শিশুকে তাৎক্ষণিক রাফাহ সীমান্তের কাছে আল আহলি এমিরেটস হাসপাতালে নেওয়া হয়।

রাফাহর আল-আহলি এমিরেটস হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ড. মোহাম্মদ সালামা জানান, তিনি জানতেন না এসব শিশুকে মিসরে ঠিক কোথায় পাঠানো হবে। পরে মিসরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিকিৎসার জন্য তাদের গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়।

ড. মোহাম্মদ সালামা জানান, আল আহলি এমিরেটস হাসপাতালে কিছু নবজাতকের পিতা-মাতা হাজির হয়েছিলেন নিজের সন্তানকে শনাক্ত করতে। মিসরে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর সম্মতিপত্রে তাদের সই নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ২৮ শিশুকে মিসরে পাঠানো হয়েছে। দুটি শিশুর অবস্থা স্থিতিশীল থাকায় পরিবার তাদের মিসরে পাঠাতে রাজি হয়নি। আর একটি শিশুর মা-বাবা কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাকে নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জানা গেছে, গাজা সীমান্ত থেকে ৩০ মাইল দূরে মিসরের আল আরিশ বিমানবন্দরে ২৮ শিশুকে গ্রহণ করেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খালেক আবদুল গাফফার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close