মো. জাহিদুল ইসলাম
হেক্সা শিরোপা অস্ট্রেলিয়ার
ভারতের স্বপ্নভঙ্গ
অবিশ্বাস্য, অভূতপূর্ব, অভাবনীয়, অকল্পনীয় কিংবা অতুলনীয়- কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া ঠিক হবে না। আগের ১০ ম্যাচে ১০ জয়, ১১তম ম্যাচে খেই হারাল ভারত। সেটি আবার বিশ্বকাপের ফাইনাল মঞ্চে। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে লোকেশ রাহুলের ৬৬ ও বিরাট কোহলির ৫৪ রানে ভর করে স্কোর বোর্ডে ২৪০ রান সংগ্রহ করে ভারত। জবাবে খেলতে নেমে ট্রাভিস হেডের অসাধারণ সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটের বড় জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। সেইসঙ্গে হেক্সা শিরোপা ঘরে তুলল অজিরা।
২০০৩ সালেও বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে ঘরে ফিরেছিল ভারত। সেই হারের প্রতিশোধ এবারও নেওয়া হলো না তাদের। টানা ১০ ম্যাচের অপরাজেয় যাত্রা অস্ট্রেলিয়ার কাছে রীতিমতো হলো ধরাশায়ী। অজিদের বোলিং-ব্যাটিং নৈপুণ্যে টিকল না ভারতের প্রবল আত্মবিশ্বাস। তাই আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে আশা ১ লাখ ৩২ হাজার দর্শককে কাঁদিয়ে রানার্সআপের সম্মান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো তাদের। গতকাল রবিবার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসরের ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ২৪০ রান সংগ্রহ করে ভারত। ব্যাট হাতে লোকেশ রাহুল ১০৭ বলে ৬৬ ও বিরাট কোহলি ৬৩ বলে ৫৪ রান করেন। এছাড়া অধিনায়ক রোহিত শর্মা খেলেন ৩১ বলে ৪৭ রানের ইনিংস।
জবাবে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪৭ রানের মধ্যেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এরপর ১৯২ রানের অতিমানবীয় জুটি গড়েন ট্রাভিস হেড ও মার্নাস লাবুশেন। হেড ১৩৭ রান করে সাজঘরে ফিরলেও লাবুশেন ৫৮ রানে অপরাজিত থেকে ৪২ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয় অজিরা। এতে রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়নের খেতাব পেল প্যাট কামিন্সের দল। এদিন টস জিতে আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। তবে ভারতের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সামনে প্রথম ১০ ওভারের মধ্যে খুব একটা সুবিধাও করতে পারেননি মিচেল স্টার্ক-জশ হ্যাজলউডরা। দলীয় ৩০ রানের মাথায় শুভমান গিল ফিরে যান। স্টার্কের বলে বিদায়ের আগে ৭ বলে মাত্র ৪ রান করেন তিনি। তবে গিল ফিরলেও রানের চাকা ঠিকই সচল রেখেছিলেন রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি।
তবে এরপরই যেন লাগাম টেনে ধরেন অজি বোলাররা। অষ্টম ওভারে প্রথমবারের স্পিন আক্রমণে আনেন কামিন্স। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকেও পাত্তা দেননি রোহিত। ওভারের দ্বিতীয় বলেই লংঅনের ওপর দিয়ে মারেন ছক্কা। পরের বলে চার। তবে মোমেন্টাম ধরে রাখতে পারলেন না আর। ক্যাচ উঠেছিল কাভারে। পেছন দিকে ছুটে ট্রাভিস হেড নেন দুর্দান্ত ক্যাচ। রোহিত থামেন ৩১ বলে ৪৭ রান করে। রোহিতের পর উইকেটে এসে আক্রমণাত্মক শুরুর চেষ্টা করেন শ্রেয়াস আইয়ার। তবে ৩ বলে ৪ রান করে ফেরেন তিনিও। কামিন্সের বল ব্যাটের বাইরের দিকের কানায় লেগে বল চলে যায় উইকেটকিপারের গ্লাভসে। পুরো ম্যাচে ভারত এদিন ভোগে বাউন্ডারির অভাবে। বল সীমানাছাড়া করতে যেন হাপিত্যেশ করেন কোহলিরা। রোহিত-আইয়ার ফিরে যাওয়ার পর ১৫ ওভারের বেশি বাউন্ডারি পায়নি ভারত। কোহলি আর রাহুল ইনিংস মেরামত করেন ঠিকই। তবে তাতে রানরেট কমে অনেকটাই। তবে এরই মধ্যে টানা ৫ম ফিফটি তুলে নেন কোহলি। আসরজুড়ে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা এ টপঅর্ডার ব্যাটার ফাইনালে এসেও ফিফটির দেখা পান। ৫৬ বলে এ মাইলফলক ছুঁয়েছেন। এটি তার টানা পঞ্চম পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস। সব মিলিয়ে আসরে ১০ ম্যাচের ৮টিতেই পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেন তিনি।
তবে ফিফটির পরই ফিরতে হয় কোহলিকে। কামিন্সের লাফিয়ে ওঠা বলে কাট করতে গিয়ে ইনসাইড এজে ফিরে যান তিনি। এরপর জাদেজা আসেন। কিন্তু তিনিও ভারতকে বড় কিছু এনে দিতে পারেননি। ৩৬তম ওভারের পঞ্চম বলে হ্যাজলউডের খাটো লেন্থের ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২২ বলে ৯ রান। কিন্তু এরই মধ্যে শুরু হয় ভারতের দ্বিতীয় দফার বাউন্ডারি খরা। ইনিংসের ৩০তম ওভারে বাউন্ডারির পর যেন বল আর সীমানা পার হতেই চাইছিল না। সিঙ্গেলস আর ডাবলই হয়ে যায় রাহুল-সূর্যকুমার যাদবের ভরসা। ধীরগতিতে ব্যাট চালিয়ে রাহুল ফিফটি তেলেন ৮৫ রানে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বল হাতে মিচেল স্টার্ক একাই ৩ উইকেট শিকার করেন। জশ হ্যাজলউড ও প্যাট কামিন্স পান ২টি করে উইকেট। এছাড়া অ্যাডাম জাম্পা ও ম্যাক্সওয়েল নেন ১টি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত : ৫০ ওভার, ২৪০/১০ অস্ট্রেলিয়া : ৪৩ ওভার, ২৪১/৪
ফল : অস্ট্রেলিয়া ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা : ট্রাভিস হেড
সিরিজসেরা : বিরাট কোহলি
"