নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ নভেম্বর, ২০২৩

ভোটের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন হতে পারে

- প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে বলেছেন, শুধু ভোট ও নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করা যেতে পারে। ‘আমরা চাই জনগণের ভোটাধিকার অব্যাহত থাকুক এবং ভোটের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন হতে পারে।’ তিনি বলেন, যেসব দল নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের সাধুবাদ জানাই, ধন্যবাদ জানাই। যাদের মানুষের ওপর আস্থা নেই, বিশ্বাস নেই, দল হিসেবে সুসংগঠিত নয়, তারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে যাচ্ছে।

গতকাল শনিবার নগরীর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। নির্বাচন বানচালের জন্য যারা অগ্নিসংযোগ করেছে, তাদের প্রতিহত করতে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি।’ তিনি বলেন, ‘সুতরাং যারা সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বানচালের চেষ্টা করছে, তাদের সম্পর্কে জনগণকে সচেতন থাকতে হবে।’ পাশাপাশি যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।

সরকারপ্রধান বলেন, যেসব রাজনৈতিক দলের জনগণের প্রতি বিশ্বাস নেই এবং তারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন বানচাল একটি দেশের জন্য চরম ক্ষতির কারণ হতে পারে।

২০১৩ এবং ২০১৪ সালে অগ্নিসন্ত্রাসের কারণে জীবন ও সম্পদের ক্ষতির কথা উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে জীবন ও সম্পত্তি ধ্বংস করা কোন ধরনের রাজনীতি?’ অনুষ্ঠানের শুরুতে আওয়ামী লীগ সভাপতির পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়। গোপালগঞ্জ-৩ আসনে শেখ হাসিনার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ। এর আগে গণভবন থেকে প্রাইভেট কারে চড়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন শেখ হাসিনা। পরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে সরকারি গাড়িতে করে বঙ্গভবনে যান তিনি।

২০০৯ সাল থেকে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রের এ ধারাবাহিকতার কারণে অভূতপূর্ব আর্থসামাজিক অগ্রগতি এবং উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন সম্ভব হয়েছে। যারা অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যার মাধ্যমে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে, তাদের প্রতিহত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি দেশের জনগণকে তাদের প্রতিহত করার জন্য অনুরোধ করব।’ হরতাল-অবরোধের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পরিবেশ ও কর্মকাণ্ড ধ্বংস করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জনগণের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আমোদণ্ডফূর্তি করে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না। তিনি বলেন, ‘কেউ যদি নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে এবং অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে যায়, তাহলে তা তাদের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে ভোট দেওয়া এবং পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেওয়া জনগণের অধিকার।’ দেশের জনগণ তাদের শাস্তি দেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশাল সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত দেশের অব্যাহত গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করতে না দিতে আমি জনগণের প্রতি আহ্বান জানাব।

শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন, যারা জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে এবং সেই উদ্দেশে অগ্নিসন্ত্রাস চালাবে তাদের জনগণ প্রতিহত করবে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা মনোনয়ন ফরম নিচ্ছেন, তারা সবাই যোগ্য, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, ‘তবে আগামী নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই করা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের কাজ। প্রার্থী বাছাইয়ের আগে আমরা তৃণমূল পর্যায় থেকেও মতামত নেব।’ এর আগে তিনি আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রির বুথ পরিদর্শন করেন।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ : রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে গতকাল শনিবার সকালে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রী পশ্চিম ইউরোপের দেশ বেলজিয়াম এবং সৌদি আরবে সাম্প্রতিক সফরসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ব্রাসেলস ও জেদ্দা সফর সংক্রান্ত দুটি প্রতিবেদনও রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রী ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইনের আমন্ত্রণে গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে যোগ দিতে তিন দিনের (২৫-২৭ অক্টোবর) সরকারি সফরে গত ২৪ অক্টোবর বেলজিয়াম যান। পরে সরকার প্রধান জেদ্দায় চার দিনব্যাপী (৬-৮ নভেম্বর) ইসলামে নারী : মর্যাদা ও ক্ষমতায়ন শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে সৌদি আরব সফরে যান। শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী পবিত্র ওমরাহ পালন করেন এবং মদিনায় মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করেন। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সফল বিদেশ সফরের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান এবং একে অপরের স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নেন।

এর আগে বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে বঙ্গভবনে পৌঁছলে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ও তার পত্নী ড. রেবেকা সুলতানা প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীও প্রথা অনুযায়ী রাষ্ট্রপ্রধান এবং তার সহধর্মিণীকে ফুলের তোড়া উপহার দেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close