গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৯ নভেম্বর, ২০২৩

নির্বাচনমুখী বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল

নির্বাচনমুখী হচ্ছে নিবন্ধিত দলের পাশাপাশি অনেক অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। ভোটের সময় যত ঘনিয়ে আসছে বর্জনের ঘোষণা দেওয়া দলও চেষ্টা করছে নির্বাচনের মাঠে সরব হওয়ার। পরিস্থিতি বুঝে মাঠে নেমে পড়তে চায় কিছু দল। অপরদিকে, বিএনপিসহ সমমনা দলের পাশাপাশি কিছু দল চাচ্ছে নির্বাচিত কোনো সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নিতে। এ শ্রেণির ছয় থেকে সাতটি ইসলামি দল রয়েছে। এসব দল আগে বর্তমান সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভুল করেছে বলে তাদের উপলব্ধির কথা জানিয়েছে প্রতিদিনের সংবাদের কাছে। বলছে, নির্বাচনে না গেলে ক্ষতি নেই; গিয়ে ভরাডুবি হলে ওই লজ্জা রাখার উপায় থাকে না।

এদিকে নামসর্বস্ব দলগুলো চাচ্ছে বড় দলের সঙ্গে জোট করে ভোট করার। নিজ প্রতীক ছেড়ে কেউ উঠতে চাচ্ছে নৌকায়। জাতীয় পার্টির একটি অংশ (রওশনপন্থি) আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে দ্বাদশ নির্বাচন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। কিন্তু দলটির অংশ জি এম কাদের লাঙ্গল প্রতীকে লড়তে চান এই নির্বাচনে। নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়ে তা স্পষ্ট করছে দলগুলো। আরো কয়েক দিনের মধ্যে কারা নির্বাচনে আসবে তা খোলাসা হতে পারে। এত কিছুর পরও নিবন্ধিত ৪৪ দলের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলের সংখ্যাই বেশি।

নিবন্ধিত দলের ভিড়ে নির্বাচন করতে চায় অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো। শতাধিক দল মোর্চা করে এ সুযোগ কাজে লাগাতে চায়। এজন্য বাংলাদেশ কংগ্রেসসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে রাখছে নিয়মিত যোগাযোগ।

গত ১৫ নভেম্বর ঘোষণা হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল। মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন ৩০ নভেম্বর। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহার ১৭ ডিসেম্বর। ভোট ৭ জানুয়ারি।

তথ্য মতে, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গত ৪ নভেম্বর নিবন্ধিত ৪৪টি দলকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি। বিএনপিসহ ১৮টি দল ইসির আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি। দেশে রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যে এবার ঘোষণা হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল। বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১৭টি দলই এই তফসিলকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তফসিল প্রত্যাখ্যান করা ১৭টি দলের মধ্যে রয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), ইসলামী ঐক্য জোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), গণফোরাম ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি।

তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে ১৫টি দলের মধ্যে রয়েছে জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), গণতন্ত্রী পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও বাংলাদেশের সমাজতন্ত্রিক দল-বাসদ। বাকি ১২টি দল তফসিলের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান এখনো স্পষ্ট করেনি; সেগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ কংগ্রেস, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। এই দলগুলোর মধ্যে খেলাফত মজলিসসহ পাঁচটি ইসলামী দলের মোর্চা ‘সমমনা ইসলামি দল’ ইসিকে তফসিল ঘোষণা না করার আহ্বান জানিয়েছিল। এই দলগুলো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে বর্তমানে অনড় অবস্থানে রয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিশ, নেজামে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনসহ ৭টি দল নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে একট্টা। জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমান সরকারের প্রলোভনে আমরা নির্বাচনে গিয়ে ভুল করেছিলাম। ওই ভুল আর করতে চাই না। নির্বাচনে যেতে চাই, তবে সেটার জন্য আবশ্যই জাতীয় সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার হতে হবে।

বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম বলেন, যদি পরিস্থিতি অনুকূল হয় তাহলেও নির্বাচনে ৩০০ সংসদীয় আসনে প্রার্থী দেব। সেই প্রার্থী তালিকাও চূড়ান্ত। নির্বাচন বর্জনকারী দল, নির্বাচনমুখী দল এবং দ্বিধায় থাকা দল নিয়ে চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে নির্বাচনমুখী দলের সংখ্যাই বেশি। কারণ জাতীয় পার্টি জি এম কাদের এত দিন নির্বাচনে না আসার ঘোষণা দিলেও ইসিকে চিঠি দিয়ে জানান দিয়েছে ইসি ঘোষিত তফসিলের সঙ্গেই তারা আছেন।

এদিকে, রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যে শুরু হয়েছে নির্বাচনী আমেজ। দেশের সবচেয়ে বড় দল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম কেনার মাধ্যমে শুরু হয় নির্বাচনী আমেজ। কিংস পার্টিখ্যাত তৃণমূল বিএনপিও মনোনয়ন বিক্রি করছে; শনিবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩৭টি ফরম সংগ্রহ করেছেন এ দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

এদিকে, কমিশনজুড়ে দেশজুড়ে জোরেশোরেই চলছে নির্বাচনী কার্যক্রম। আজ রবিবার থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র অনলাইনে জমা দিতে পারবেন। কারণ অ্যাপের ত্রুটি সারিয়ে পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছে বলে ইসির আইটি শাখা সূত্রে জানা গেছে।

আবার তফসিল ঘোষণার পর প্রচার শুরুর অর্থাৎ ১৮ ডিসেম্বরের আগে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো ধরনের প্রচার চালানো যাবে না। এরই মধ্যে রাজশাহীর তানোর আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী তফসিল ঘোষণার একদিন পরই নৌকায় ভোট চেয়ে আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেন। রিটার্নিং অফিসার শামীম আহমেদ বলেন, তিনি ১৮ ডিসেম্বরের পূর্বে ভোট চেয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। রবিবার কমিশন সভা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পত্র দিতে পারে বলে জানা গেছে।

সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার ১৪ (২) ধারায় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী এলাকায় বা অন্য কোথাও কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বা মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচনী কাজে সরকারি প্রচার যন্ত্রের ব্যবহার, সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের ব্যবহার বা সরকারি যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন না এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ বা ব্যবহার করতে পারবেন না।

এদিকে, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এমপিদের পক্ষ থেকে নৌকায় ভোট চেয়ে ফেসবুকে প্রচার চালানো হচ্ছে। এটাও আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। রিটার্নিং কর্মকর্তারা চাইলে এসব প্রচারের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সতর্ক করে শোকজ নোটিস পাঠাতে পারেন।

ইসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কার সইয়ে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র কেনা হবে এটা জানতে চেয়ে বিএনপিসহ ৪৪ দলকে চিঠি দিয়েছে ইসি। যদিও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় সাজা ভোগ করছেন। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও কারাবন্দি। চিঠিতে বিএনপি ও অন্য রাজনৈতিক দল থেকে মনোনীতদের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতা এবং প্রতীক বরাদ্দ প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছে ইসি।

নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটভুক্ত নির্বাচন ও দলীয় বা জোটের প্রার্থীর মনোনয়নের বিষয়ে জানাতেও এ চিঠি দিয়েছে ইসি। গত বৃহস্পতিবার ইসির উপসচিব (নির্বাচনী সহায়তা ও সমন্বয়) মো. মাহবুব আলম শাহ বিএনপিসহ ৪৪ দলকে ইমেইলের মাধ্যমে পৃথক পৃথকভাবে চিঠি দিয়েছেন।

চিঠিতে ইসি উল্লেখ করেছে, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ১২(৩ক) দফা(২) এর অধীন প্রত্যেক মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দলিলাদি সংযুক্ত করতে হবে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পক্ষে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারী মাধ্যমে স্বাক্ষরিত এই মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র দিতে হবে যে, প্রার্থীকে ওই দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

আ.লীগের সঙ্গে জোট বাঁধতে ইসিতে ৪ দলের আবেদন : আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আবেদন জানিয়েছে চারটি দল। শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এখন পর্যন্ত চার দল নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে যাওয়ার আবেদন করেছে। নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জাননো হয়েছে। দলগুলো হলো হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টি, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি) ও দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী দল।

কমনওয়েলথের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনপূর্ব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে শনিবার দুপুরে ঢাকা পৌঁছেছে কমনওয়েলথের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। আগামী ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাংলাদেশে অবস্থান করবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close