প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৮ নভেম্বর, ২০২৩

বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল ‘মিধিলি’ সতর্ক সংকেত নেমে ৩

ঘূর্ণিঝড় মিধিলি উপকূল অতিক্রম করে বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। চার সমুদ্রবন্দরে আগের ৭ ও ৬ নম্বর সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ উপকূল অতিক্রম করেছে এবং দুর্বল হয়ে পটুয়াখালী ও আশপাশের এলাকায় গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করে, পরে এটি স্থলভাগের অভ্যন্তরে আরো উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হবে। বৃষ্টি ঝরিয়ে এটি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যাবে।

তবে গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উত্তর বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে গতকাল দুপুর ১টার দিকে উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণি ঝড় ‘মিধিলি’। পরের দুই ঘণ্টায় বৃষ্টি ঝরাতে ঝরাতে বিকেল ৩টার দিকে তা পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসে।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, পটুয়াখলীতে বিকেল ৪টায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১০২ কিলোমিটার উঠেছিল। আমরা ৩ নম্বর সংকেত দিয়ে রেখেছি। কারণ আগামী ২৪ ঘণ্টা বৃষ্টি হবে ও কিছুটা ঝোড়ো হাওয়া থাকবে।

আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকা এবং বন্দরের ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।

ঝড় কেটে গেলেও সাগর উত্তাল থাকায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস বলেছিল, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর, ফেনী, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে।

‘মিধিলি’র প্রভাবে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে বৈরী আবহাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ রুটে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

চাঁদপুরে ২৪ ঘণ্টায় ২৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। বাগেরহাটে বৃষ্টির সঙ্গে থেমে থেমে দমকা বাতাস বইতে থাকে। মোংলা সমুদ্রবন্দরে পণ্য ওঠানামা বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে বন্দরের হারবার বিভাগ।

এদিকে বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন সুন্দরবনের দুবলার চরের শুঁটকিপল্লীর জেলেরা। শুঁটকির জন্য আহরিত মাছ পচার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে বাগেরহাটে খোলা হয় ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। ১ হাজার ৯২০ জন সিপিবি সদস্য এবং রেড ক্রিসেন্ট, বিএনসিসিসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ৫০০ জন সদস্য উপকূলে কাজ শুরু করেন। ভোলার মেঘনা, তেঁতুলিয়া নদী এবং সাগরমোহনা উত্তাল হয়ে উঠে। ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌ রুটে ফেরি চলাচল এবং ভোলা-লক্ষ্মীপুর, ভোলা-ঢাকা, ভোলা-বরিশাল, ভোলা-পটুয়াখালী নৌপথে চলাচলকারী সব লঞ্চ সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় প্রবল বৃষ্টি এবং দমকা হাওয়ায় জনজীবন কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। জলোচ্ছ্বাসে সৈকত এলাকা অন্তত চার-পাঁচ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়।

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানায়, প্রবল বর্ষণে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মরিচ্যা ঘোনা পানির ছড়ায় পাহাড় ধসে একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ওই পরিবারের একমাত্র ষাটোর্ধ্ব বয়সি সদস্য ছাড়া আর কেউ বেঁচে নেই। তিনি ও গুরুতর আহত অবস্থায় টেকনাফ সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে আছেন মা আনোয়ারা (৫০), ছেলে শহিদুল মোস্তফা (২০), মেয়ে নিলুফার ইয়াসমিন (১৫) ও আরেক মেয়ে সাদিয়া (১১)।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাইকিং করা হয়। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খোলা রাখা এবং শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থা করা হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক জানান, চট্টগ্রামে ৬০৯টি (মহানগর ১১৬টি ও জেলা ৪৯৩টি) আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে জেলা প্রশাসনের নিকট ত্রাণ কার্য (নগদ) ২২ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ত্রাণ কার্য (চাল) ২৪৪ টন, গোখাদ্য ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা, শিশু খাদ্য ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা, শুকনো খাবার ৪৭২ ব্যাগ, কম্বল ১০০০ পিস এবং ওরস্যালাইন ৪৭ হাজার প্যাকেট মজুদ আছে। সম্ভাব্য পরিস্থিতি পর্যালোচনাক্রমে প্রয়োজনের নিরিখে এসব সামগ্রী দ্রুত বরাদ্দ প্রদান করা হবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও উপকূলীয় এলাকায় মাইকিংসহ ও জরুরি কন্ট্রোল রুম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালীর হাতিয়ায় গতকাল সকাল থেকেই মাঝারি বৃষ্টির সঙ্গে ধমকা হাওয়াও বইতে থাকে। সাগর উত্তাল থাকায় হাতিয়ার নৌ-সীমানায় সব নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। বৃষ্টি এবং ধমকা হাওয়ায় কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কাঁচা ও কাঁচাপাকা আমন ধান বৃষ্টির জমা পানিতে ঢলে পড়ে গেছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুবাস পাল জানান, হাতিয়ায় এবার প্রায় ৭৭ হাজার হেক্টর অধিক আমন চাষ হয়েছে এর মধ্যে ১৯ হাজার হেক্টরের মতো পাকা আমন কাটা হয়েছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস হলে বাকিগুলোর ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close