নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপিসহ সব দলকে নির্বাচনে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি-জামায়াতসহ দেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, অগ্নিসংযোগের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত। সবারই এগিয়ে আসতে হবে এবং নির্বাচনে অংশ নিতে হবে, জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চাইতে হবে। অস্ত্র হাতে নয়, রাতের অন্ধকারেও নয়। বাংলাদেশে সরকার গঠন হবে ভোটের মধ্য দিয়ে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আমলে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। আমরা (আওয়ামী লীগ সরকার) মানুষের ভেতরে একটা আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। একটা দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে মানুষের আস্থা অর্জন করা কিন্তু বেশ কঠিন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন করতে দেবে না বলে বিএনপি আগেও আগুন দিয়েছে, এখনো দিচ্ছে। আগুন নিয়ে খেলছে। আগুন নিয়ে খেলা দেশের মানুষ মেনে নেবে না। দেশের মানুষ নির্বাচন বানচাল করতে দেবে না। নির্বাচন বানচালের নামে যারা অগ্নিসন্ত্রাস করছে, তাদের ক্ষমা নেই। আজ শনিবার সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হাজির হয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনবেন শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদানের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এ তথ্য জানিয়েছেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি ও জমা দেওয়ার কার্যক্রম চলবে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বিক্রির জন্য দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দোতলা ও তিনতলায় মোট ১০টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। জমা দেওয়ার জন্য নিচতলায় একটি বুথ থাকবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ। নির্বাচনী কমিটির সভায় শেখ হাসিনা এ ঘোষণা দেন।
সংঘাত বন্ধে বিশ্বনেতাদের প্রতি ঐক্যের আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংঘাতের অবসান ঘটাতে বিশ্বনেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জাতিগুলোর মধ্যে আস্থার ঘাটতি এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব ইউরোপে চলমান যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনকে গণহত্যার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এ যুদ্ধরত দেশগুলো এবং জড়িত আন্তর্জাতিক নেতাদের মধ্যে সত্যিকারের আস্থা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করা জরুরি।’ শুক্রবার সকালে ঢাকায় তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে আয়োজিত ‘দ্বিতীয় ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট’-এ অংশ নিয়ে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। ভারত ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে ১২৫টি দেশের অংশগ্রহণে এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের শীর্ষ সম্মেলনের থিম, ‘সবার সাথে সকলের প্রবৃদ্ধির জন্য সকলের বিশ্বাসের সঙ্গে’ সবচেয়ে সময়োপযোগী। কারণ আমাদের বিশ্ব আজ যে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, তা হলো ‘বিশ্বাসের ঘাটতি’। তিনি আরো বলেন, ‘যেমনটা আছে আমাদের বিশ্বের অসহনীয় দারিদ্র্য, অবাঞ্ছিত বৈষম্য, অসহনীয় সন্ত্রাসবাদ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়মূলক হুমকি।’ শেখ হাসিনা বলেন, গ্লোবাল সাউথের জনগণের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ এবং ক্রমবর্ধমান দুর্ভোগ হিসেবে এখন নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। সরকারপ্রধান বলেন, এ সংকটময় মুহূর্তে বিশ্বকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং প্রত্যেকের প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য প্রত্যেকের বিশ্বাস শক্তিশালী করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী নির্মম হত্যাযজ্ঞের মুখে অসহায় ফিলিস্তিনিদের মর্মান্তিক, অমানবিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এখন সময় আমাদের সবার এক বিশ্ব হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং সংঘাতের অবসান দাবি করার। প্রধানমন্ত্রী ‘দ্বিতীয় ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট-২০২৩’ আহ্বান করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘জি-২০ প্রেসিডেন্সির মাধ্যমে ক্রমাগত গ্লোবাল সাউথের আওয়াজ তুলে ধরার জন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই।’ সম্মেলনের উদ্বোধনের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, এটাই সময় গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোকে বৃহত্তর বৈশ্বিক মঙ্গলের জন্য, এক পরিবার, এক ভবিষ্যতের জন্য এক সুরে কথা বলতে হবে। আমাদের একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে ‘পাঁচটি সি’ এর পথপ্রদর্শক নীতি নিয়ে। যেগুলো হচ্ছে- সমাবর্তন, সহযোগিতা, যোগাযোগ, সৃজনশীলতা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি।’
"