মিজান রহমান

  ১৮ নভেম্বর, ২০২৩

নির্বাচনী ডামাডোল শুরু

দেশে আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তফসিল ঘোষণার পরই মূলত শুরু হয়ে গেছে নির্বাচনী ডামাডোল। জোরেশোরে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আজ দলীয় মনোনয়ন বিক্রি শুরু করবে দলটি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকরাও প্রস্তুত। প্রস্তুতি নিচ্ছে সংসদের বিরোধী জাতীয় পার্টি (জাপা)। অন্য ছোট দলগুলোও নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। তবে রাজনীতির মাঠে অন্যতম বিরোধীদল বিএনপি নির্বাচনে আসবে না বলেই জানিয়েছে। তারা হরতাল-অবরোধ নিয়ে রয়েছে আন্দোলনের মাঠে।

আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্র জানায়, আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বিক্রি উদ্বোধন করবেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম কিনবেন তিনি। এরপর দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ফরম কেনা শুরু করবেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বিক্রি শুরু হবে। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হবে।

গতকাল বিকেল ৩টায় তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা জেলা কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এক বার্তায় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া জানান, কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রশাসনিক বিভাগ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট বুথ থেকে দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে এবং জমাও দিতে হবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ এবং তৃতীয় তলায় রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় সব বিভাগের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কোনো ধরনের অতিরিক্ত লোকসমাগম ছাড়া প্রার্থী নিজে অথবা প্রার্থীর একজন যোগ্য প্রতিনিধির মাধ্যমে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে বলা হয়েছে।

নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, নির্বাচন পরিচালনার জন্য কয়েকটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা দ্রুত জোটের মধ্যে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করতে চায়। তবে শরিক দলগুলো এখনো আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায় থেকে এ ধরনের আলোচনার কোনো ইঙ্গিত পায়নি।

প্রতীক বরাদ্দের আগপর্যন্ত আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে না। তবে নৌকার পক্ষে নিজ নিজ এলাকায় কাজ করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি যেন লঙ্ঘন না হয়, সেদিকেও নেতাদের খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।

দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের নামে বিরোধীদের তৎপরতা ঠেকাতে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশনা আগেই দেওয়া আছে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের সবাই নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে। এখন সাংগঠনিক সিদ্ধান্তগুলো ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।’

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নিবন্ধিত ১৫টি দল

আওয়ামী লীগ ও জোটের শরিকসহ মোট ১৫টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি দলগুলো হলো জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), গণতন্ত্রী পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)।

দ্রুত আসন ভাগাভাগি নিষ্পত্তি করতে চায় শরিকরা

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। শরিক জোটের প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, ‘আগামী এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আসন বণ্টন হয়ে যাওয়া উচিত। সে বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। জোটের সবাই নির্বাচনমুখী চিন্তা করছে। জোটে কোনো পরিবর্তনের এখন সম্ভাবনা নেই। সবাই এক হয়েই নির্বাচনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’

জানতে চাইলে জোটের শরিক বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘নির্বাচনে আমরা অংশ নিচ্ছি। জনগণ যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসতে পারে, সেই পরিস্থিতি তৈরিতে আমরা কাজ করছি। সেই সঙ্গে যেকোনো ধরনের নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঠেকাতে আমরা মাঠে থাকব।’

আলোচনা করে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় জাপা: শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেবে। আজ বা আগামীকালের থেকেই দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হবে। দলটির একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। যদিও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর এখনো প্রকাশ্যে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেনি দলটি। দলটির একপক্ষ তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে। অপর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু ভোট হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

তবে প্রকাশ্যে দলের নেতারা যত কথাই বলুক না কেন ভেতরে ভেতরে নির্বাচনে যাওয়ার সব প্রস্তুতি চলছে।

জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারকরা জানান, সরকার ও বিদেশি বন্ধুদের চাপ উপেক্ষা করে নির্বাচন বর্জন করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া রয়েছে দল ভাঙার ভয়ও। কারণ এরই মধ্যে দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার জাপার কেন্দ্রীয় কমিটি এবং জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সভায় ৫৯ নেতার দুজন বাদে সবাই বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তারা থাকতে চান না। ওই সভায় অনেক আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে।

জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, বুধবার রাত পর্যন্ত জাতীয় পার্টির নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। তবে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নির্বাচনে আসছে তৃণমূল বিএনপি: তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তৃণমূল বিএনপি।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসন সমশের মবিন চৌধুরী নেতাকর্মীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে বলেন। তিনি জানান, শনিবার থেকে তাদের দলে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হবে। মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার প্রত্যাশী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে।

সমশের মবিন চৌধুরী বলেন, আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করব। তৃণমূল বিএনপির প্রত্যাশা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে। একই সঙ্গে নির্বাচনে সব প্রার্থী, ভোটার এবং ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’

নির্বাচনে যাচ্ছে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ :

নির্বাচনের অংশগ্রহণের কথা জানিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, আমরা হয়তো ৩০০ আসনে পুরোপুরি প্রার্থী নাও দিতে পারি। আমাদের এত প্রস্তুতি নেই, এত বড় দলও আমরা না। তবে অনেক আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে এবং অন্য দলের লোকজনকেও আমাদের গামছা মার্কা উপহার দেব।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, নির্বাচন হয় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করলে নির্বাচন করব কার সঙ্গে। বিএনপি নির্বাচনে নেই, জাতীয় পার্টিও টানাটানি করছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে- এতে অনেকেই খুশি না, আমিও না। কিন্তু তারপরও বলব একটি গণতান্ত্রিক দেশে পাঁচ বছর পরপর অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দরকার। তাই নির্বাচনে যাব আমরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close