প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
আসছে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি, কাল উপকূলে আঘাতের শঙ্কা
বঙ্গোপসাগরে আবার একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। সেখানে সৃষ্ট লঘুচাপ ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে অথবা আজ শুক্রবার ভোরে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম দেওয়া হবে ‘মিধিলি’। ‘মিধিলি’ নামটি মালদ্বীপের দেওয়া। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, এটি বাংলাদেশের দিকেই আসছে। তবে এটি খুব বড় মাত্রার ঘূর্ণিঝড় হবে না বলেই ধারণা করছেন তারা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করা গভীর নিম্নচাপটি বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর থেকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। এটি দেশের ১১টি উপকূলীয় অঞ্চলের ১১টি জেলায় আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ শুক্রবার (আজ) দুপুর ১২টার মধ্যে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গভীর নিম্নচাপ ক্রমেই উত্তর ও উত্তর-পূর্বে বাংলাদেশের দিকেই এগিয়ে আসছে। এটি খুলনা ও বরিশালের মাঝখান দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এটি আবার যেকোনো সময় গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, শুক্রবার রাতে বা ভোরে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। পটুয়াখালীল খেপুপাড়া থেকে চট্টগ্রামের উপকূলের মাঝ বরাবর এটি চলে যাবে। ভোলা জেলার দিকেই এর মূল অংশ যেতে পারে।
বৃহস্পতিবার সকালে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পশ্চিমণ্ডমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে। এতে আরো বলা হয়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকার সাগর উত্তাল রয়েছে। বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে অতি দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, মিধিলি উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে শনিবার ভোর নাগাদ এটি বাংলাদেশের মোংলা এবং খেপুপাড়ার মধ্য দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর আগে গত ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে। এতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে প্রাণহানি এবং বসতবাড়ি ও ফসলও বিনষ্ট হয়। এর ২৩ দিন পর আরেকটি ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার কথা জানাল আবহাওয়া অফিস।
"