আবু সুফিয়ান

  ১৭ নভেম্বর, ২০২৩

আবারও প্রোটিয়ার দর্পচূর্ণ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

চারবার সেমিফাইনালে গেলেও, ফাইনালে উঠা হয়নি সাউথ আফ্রিকার। সেমিফাইনাল দুঃখ গাথা হয়ে আছে প্রোটিয়াদের হৃদয়ে। তবে ভারত বিশ্বকাপে সাউথ আফ্রিকাকে নিয়ে প্রত্যাশা ছিল একটু ভিন্ন। গ্রুপ পর্বে রীতিমতো উড়তে থাকা টেম্বা বাভুমার দল এবার বোধহয় ফাইনালের মঞ্চে পা রাখতে পারবে। এমনটা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন অনেকে। তবে মনের কোণে ভয়ও ছিল সমর্থকদের। পুরো টুর্নামেন্টে ভালো খেলে সেমিফাইনালে গিয়ে ‘চোক’ করা যেন তাদের প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে তাদের ডাকা হয় ‘চোকার’ হিসেবে।

নিজেদের বদনাম ঘুচানোর সুযোগ ছিল বাভুমার দলের সামনে। তবে ভাগ্য বিধাতা এবারও সহায় হলো না প্রোটিয়াদের। গ্রুপ পর্বে ধ্বংসাত্মক ব্যাটিংয়ে সবার নজর কাড়া ডি কক, রাসি ভ্যান ডার ডাসেনরা মুখ থুবড়ে পড়লেন অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের সামনে। যেটুকু লড়াই তার সবটাই করলেন ডেভিড মিলার। বাঁহাতি এই ব্যাটারের সেঞ্চুরিতে ২১২ রানের পুঁজি পেলেও সেটাকে ডিফেন্ড করতে পারেননি বোলাররা। তাবরাইজ শামসি ও কেশভ মহারাজ মিলে অস্ট্রেলিয়াকে চাপে ফেললেও আটাকানো যায়নি তাদের ৩ উইকেটের জয়। শেষ পর্যন্ত স্নায়ুর লড়াইয়ে জিতে আরেকবার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া। ১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদে তাদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ভারত।

কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ২১৩ রান তাড়া করতে নেমে খুব বেশি তাড়াহুড়োর প্রয়োজন ছিল না অস্ট্রেলিয়ার। এমনকি দ্রুত রান তোলার চাপও ছিল না পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। তবু ডেভিড ওয়ার্নার এবং ট্রাভিস হেড মিলে কাগিসো রাবাদা এবং মার্কো জেনসেনের বিপক্ষে রান তুললেন প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত। তাতে মাত্র ৬ ওভারে অস্ট্রেলিয়া রান তোলে বিনা উইকেটে ৬০। পুরো টুর্নামেন্টে ভালো বোলিং করলেও এদিন সুবিধা করতে পারেননি জেনসেন।

পেসাররা প্রত্যাশা মেটাতে না পারলেও ইনিংসের সপ্তম ওভারেই স্পিনারের দ্বারস্থ হন টেম্বা বাভুমা। শামসি ও মহারাজ থাকলেও উইকেটে দুই বাঁহাতি থাকায় বাভুমা বল তুলে দেন মার্করামের হাতে। বোলিংয়ে এসে উইকেটও এনে দিলেন ডানহাতি এই অফ স্পিনার। মার্করামের বলে একটু জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন ওয়ার্নার। দারুণ ছন্দে থাকা বাঁহাতি এই ওপেনার আউট হয়েছেন ১৮ বলে ২৯ রানের ইনিংস খেলে। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেও এদিন রানের খাতাই খুলতে পারেননি মিচেল মার্শ। রাবাদার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে জোরের ওপরে খেলেছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। কভারে দাঁড়িয়ে থাকা ডাসেন ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন। ডাসেনের ‘অবিশ্বাস্য’ ফিল্ডিংয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় মার্শকে। দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পরও অস্ট্রেলিয়াকে চাপে পড়তে দেননি হেড ও স্মিথ। ৪০ বলে হাফসেঞ্চুরি তুলে অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন হেড। দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা হেডকে ফিরিয়েছেন মহারাজ। বাঁহাতি এই স্পিনারের ঝুলিয়ে দেওয়া ডেলিভারিতে সামনের পায়ে ভর দিয়ে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন হেড।

বাঁহাতি এই ব্যাটারের ব্যাট-প্যাডের মাঝে অনেকটা ফাঁকা ছিল। সেখান দিয়ে মহারাজের ঝুলিয়ে দেওয়া ডেলিভারি আঘাত হানে হেডের স্টাম্পে। বাঁহাতি এই ওপেনার ফিরে যান ৬২ রানের ইনিংস খেলে। মার্নাস ল্যাবুশেনকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি শামসি। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন তিনি। রিভিউ নিলেও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি ১৮ রান করা এই ব্যাটারের। দ্রুতই ফিরে গেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। শামসির শর্ট ডেলিভারিতে পুল করতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে বলের লাইন মিস করে ফিরে গেছেন বোল্ড হয়ে। নিজের সবশেষ ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি করা ম্যাক্সওয়েল এদিন আউট হয়েছেন ১ রানে। সবশেষ ৬৭ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে ভালোভাবেই ম্যাচে ফিরে সাউথ আফ্রিকা। তবে তাদের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় স্মিথ ও জশ ইংলিস জুটি। তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৩৭ রান। স্মিথকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন জেরাল্ড কোয়েতজে। ডানহাতি এই পেসারের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে উড়িয়ে মারতে গিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন। বল সোজা ওপরে ওঠে যাওয়ায় ক্যাচ লুফে নেন ডি কক। লম্বা সময় টিকে থাকা স্মিথকে ফিরতে হয় ৬২ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলে।

স্মিথ ফেরার পর স্টার্ককে সঙ্গে নিয়ে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন ইংলিস। তখনো হাতে পর্যাপ্ত বল থাকায় চাপ নেওয়ার তেমন প্রয়োজন ছিল না তার। অস্ট্রেলিয়া যখন জয় থেকে ২০ রান দূরে তখন সাজঘরে ফেরেন ইংলিস। কোয়েতজের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ৪৯ বলে ২৮ রান করা অস্ট্রেলিয়ার উইকেটকিপার ব্যাটার। তবে ঠাণ্ডা মাথায় ম্যাচ শেষ করেন কামিন্স ও স্টার্ক। সাউথ আফ্রিকার হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন কোয়েতজে এবং শামসি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

অস্ট্রেলিয়া : ২১২/১০ (ওভার ৪৯.৪)

দ.আফ্রিকা : ২১৩/৭ (ওভার ৪৬)

অস্ট্রেলিয়া : ৩ উইকেটে জয়ী

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close