নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপিকে কাদের
মত পাল্টে নির্বাচনে আসুন
তফসিল প্রত্যাখ্যান করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপিকে ‘মত পাল্টে’ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, আসুন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুন। নির্বাচনের দরজা সবার জন্য খোলা। বিএনপিকে বলব, মত পাল্টে অংশ নিন, দরজা খোলা আছে। নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দলের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গতকাল বৃহস্পতিবার তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন কাদের।
ভোট বর্জনের ঘোষণা দেওয়া দলগুলোর উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সময় আছে। সরকারি দল হিসেবে আমরা অনুরোধ করছি, আসুন নির্বাচনে।
আমরা কারো জন্য বাধা হব না। দিনরাত আমাদের যারা গালাগাল করেন, তাদের জন্যও নির্বাচনের দরজা বন্ধ হয়নি। আমরা সবাইকে স্বাগত জানাই। কাউকে নির্বাচন থেকে দূরে থাকতে আমরা উৎসাহিত করি না। বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ৭ জানুয়ারি ভোটের তারিখ রেখে তফসিল ঘোষণার সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালও সব দলকে নির্বাচনে আসার উৎসাহ দিয়েছেন। সেইসঙ্গে প্রধান দুই দলের বিরোধ মেটাতে সংলাপেরও আহ্বান তিনি জানিয়েছেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও দেশের বড় তিন দলকে নিঃশর্ত সংলাপে বসার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি- কোনো দলই তাতে সাড়া দেয়নি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা সংলাপের পক্ষে। ২০১৮ সালে বিএনপির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দুবার সংলাপ করেছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ফোন করেছেন। কিন্তু খালেদা জিয়া অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেছে প্রধানমন্ত্রীকে। তার ছেলে মারা গেছে, তখনো গেছেন, কিন্তু তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এবারও রাষ্ট্রপতি তাদের ডেকেছেন, নির্বাচন কমিশন ডেকেছে। তারা সাড়া দেয়নি। এখন নির্বাচনের তফসিল হয়ে গেছে। এখন আর সংলাপ করার মতো সময় নেই। শর্তহীন সংলাপের জন্য মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর চিঠি নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে কাদের বলেন, সংলাপের সময় এখন আর অবশিষ্ট নেই। গত বুধবার এটা আমি বলেছি। মিস্টার লুর চিঠি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমি আলাপ করেছি। সেই চিঠির জবাব দুয়েক দিনের মধ্যে দেব। এটা একটা সৌজন্যবোধ, শিষ্টাচারের বিষয়। তিনি একটা চিঠি দিয়েছেন, সেটার জবাব আমরা অবশ্যই দেব। এটা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির মধ্যেও পড়ে। চিঠি প্রসঙ্গে আমাদের কথা এটাই। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সংলাপের আহ্বান নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ভাষ্য, সিইসি যেখানে বসে আছেন, তার বক্তব্যে এ ধরনের আহ্বান থাকাটা ‘খুব স্বাভাবিক’। এমন কথা ওই পদে থাকলে আপনিও বলতেন। সেটার জন্য তো নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা স্থগিত থাকে না। সেটা হয়ে গেছে। এখন দলগুলো নিজেরা নিজেদের মধ্যে সংলাপ করবে কিনা, এটা তাদের ব্যাপার। উনি সিইসি হিসেবে একটা আহ্বান করার দরকার, সেটা করেছেন।
তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি নতুন করে ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ দিয়েছে, সেটা আওয়ামী লীগ কীভাবে দেখছে, তা জানতে চেয়েছিলেন একজন সাংবাদিক। জবাবে কাদের বলেন, সামনের সময়টা অত্যন্ত ক্রুশিয়াল। ৩০ নভেম্বর মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। এর মধ্যে কত ফুল ফুটবে। আর শীতকাল তো এসে গেছে, কিছু কিছু ফুল ফোটার সময়ও এসে গেছে। এখন কোন ফুল কোথায় ফুটছে... হঠাৎ জেগে উঠবে। অপেক্ষা করুন। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর নির্বাচন প্রতিহত করার হুমকির জবাবে তিনি বলেন, শঙ্কার এত পাহাড়, এত খরস্রোতা নদী পার হয়ে এলাম। এখন আবার কাকে ভয় পাব? এত বিপদসংকুল দরিয়া পার হলাম, তারপর আবার ভয় কীসের? কোনো ভয় করি না। প্রতিহত যারা করবে, আমাদের লাগব না, বাংলাদেশের জনগণ ও ভোটাররা তাদের প্রতিহত করবে। আওয়ামী লীগ দলগতভাবে নির্বাচন করবে নাকি জোটগতভাবে? জাতীয় পার্টি জোটে থাকবে? এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, তার দল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ‘সময়মতো’ সব জানানো হবে।
নির্বাচন সামনে রেখে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা আছে কিনা- এমন প্রশ্নে সরকারের সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, ইউরোপ আমেরিকা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। চিঠি চালাচালি হয়েছে। কখনো ভগবান আসে, কখনো অবতার আসে, এসব অনেক শুনেছি। বাংলাদেশ নিয়ে মাথা ঘামায়। আজ বিশ্ব কোথায়? কী হচ্ছে ফিলিস্তিনে? কী করতে পারল জাতিসংঘ? কী করতে পারল আমেরিকা? কী করতে পারল ইউরোপ? ইউক্রেন জ্বলছে, কী করল ইউরোপ? আর বাংলাদেশের একটা নির্বাচন নিয়ে এত মাথাব্যথা কেন? আমি এসবের উত্তর দিতে রাজি নই। বিএনপি বর্জন করলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে কিনা, গ্রহণযোগ্য না হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নও রাখা হয় ওবায়দুল কাদেরের সামনে। জবাবে তিনি বলেন, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট এখনো বলছেন, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। আজ পর্যন্ত নির্বাচনের ফল মেনে নেননি আরেকজন প্রার্থী। কাজেই এসব প্রশ্ন করে লাভ নেই। ওদের বেলায় ঠিক আছে, আমাদের বেলায় সমস্যা। আজ কি ট্রাম্প বলেছেন, যে তিনি বাইডেনকে মানেন? আরেকটা নির্বাচন সামনে। গণতন্ত্রের ভেতরে দোষ-ত্রুটি সব জায়গায় আছে। পারফেক্ট কেউ না।
অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফর উল্লাহ, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সম্পাদকম-লীর সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ফরিদুন্নাহার লাইলী, শাম্মী আহমেদ, অসীম কুমার উকিল, দেলোয়ার হোসেন, আবদুস সোবহান গোলাপ, বিপ্লব বড়ুয়া, সেলিম মাহমুদ, সায়েম খান প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
"