গাজী শাহনেওয়াজ
লাভজনক পদ ছাড়তে হবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে যারা ‘লাভজনক’ (মেয়র, চেয়ারম্যান, সরকারি কর্মকর্তা) পদে আছেন, তাদের পদত্যাগ করে নির্বাচনে প্রার্থী হতে হবে। এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করার জন্য উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শিগগিরই এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
নির্বাচন ঘিরে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। এর মধ্যে আছে- বিভাগীয় কমিশনারের নিচে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া বদল না করা, নির্বাচনীসামগ্রী র্যাবের পাহারায় থাকবে এবং ভোটকেন্দ্রে রিটার্নিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ।
এদিকে বুধবার (১৫ নভেম্বর) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনের প্রচার শুরু হবে। কিন্তু সারা দেশের এখনো সম্ভাব্য অনেক প্রার্থীর আগাম প্রচার বিভিন্ন দেয়াল ও ওয়ালে প্রদর্শিত হচ্ছে। এটা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজ উদ্যোগে অপসারণের জন্য নির্দেশনা জারির কথার চিন্তা করছে কমিশন।
এর আগে আন্তমন্ত্রণালয় সভায় কমিশন থেকে অপসারণের জন্য মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছিল বলে জানিয়েছেন ইসির নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার শাখার দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘তফসিল হয়েছে। এখন ওই সব আগাম প্রচার থাকার কথা নয়। যদি কোথাও প্রদর্শিত হয়, তাহলে পরিপত্র জারি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হবে।’
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের আগে প্রচারের সুযোগ নেই।
এদিকে এবারই প্রথম ডিজিটাল প্রযুক্তিতে প্রার্থীদের ঘরে বসে মনোনয়ন ফরম পূরণের বিধান চালু করেছে ইসি। কিন্তু প্রযুক্তিগত কিছু ত্রুটির কারণে আগামী রবিবারের আগে এই অ্যাপের সহায়তায় মনোনয়ন ফরম পূরণ করতে পারবেন না সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ইসির আইটি শাখার একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ইসির আইটি শাখার কর্মকর্তা বলছেন, আগামী দুদিন তারা অ্যাপসংক্রান্ত ম্যানেজমেন্ট সংস্কার ও ব্যবহারের উপযোগী করার কাজ করবেন। ওই সময়ের পর যেকোনো প্রার্থী সংশ্লিষ্ট অ্যাপের সহায়তায় মনোনয়ন ফরম ডিজিটালি পূরণ করতে সক্ষম হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ইসি থেকে পাওয়া তথ্যমতে, তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী হলেও বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো নির্বাচন বানচালে ষড়যন্ত্রে মাঠে তৎপর রয়েছে। তফসিল প্রতিহত করার দাবিতে আগামী রবি ও সোমবার হরতাল আহ্বান করেছে তারা। এই পরিস্থিতি নির্বাচন ভবন এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)-সহ কমিশনারদের বাসায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা।
সিইসির বাসভবন রাজধানীর মিন্টু রোডে বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কার্যালয়ের সামনের মিন্টু রোডলাগোয়া মূল সড়কে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওম) থেকে বুধবার সন্ধ্যা থেকে নিরাপত্তার জন্য এ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। মূল সড়কের পাশাপাশি বাসভবনের গেটেও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া সড়কটিতে প্রতিনিয়তই টহলরত ও গোয়েন্দা পুলিশের টহল গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়।
দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা জানান, বুধবার সন্ধ্যা থেকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। একাধিক শিফটে তারা দায়িত্ব পালন করছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন দুপুরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা।
এদিকে আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবন ও তার আশপাশের এলাকাজুড়েও নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। ইসি ভবনের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ওই এলাকার প্রবেশদ্বারগুলোতে এখনো ব্যারিকেড দেওয়া রয়েছে। পর্যটন ভবনের সামনের একটি সড়ক খোলা থাকলেও সেখান থেকে বাইরের কোনো যানবাহন ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ওই এলাকায় কেউ প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে।
নির্বাচন ভবনের নিরাপত্তায় কন্ট্রোল রুমের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে পুলিশ নির্বাচন ভবনের নিরাপত্তা তদারিক করবে। আর ইসির নিরাপত্তা শাখা এখানে আগত দর্শনার্থীদের বিষয়টি দেখভাল করবে। এ সংক্রান্ত একটি পত্রও জারি করা হচ্ছে।
প্রতীকের আগে প্রচার নয় : ইসি সচিব
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। তবে এর আগপর্যন্ত কেউ নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে এবং ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
জাহাংগীর আলম বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর ব্যালট প্রস্তুত করা হবে। নির্বাচনের তিন-চার দিন আগে সেগুলো জেলায় জেলায় পাঠানো হবে।
ইসি সচিব বলেন, তফসিল ঘোষণার পর এ ধরনের বদলি হয়েছে কি না, আমাদের জানা নেই। এখন থেকে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ইসির কাছে প্রস্তাব পাঠাবে এবং কমিশন তাদের মতামত দেবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে কোনো জনপ্রতিনিধি অংশ নিতে চাইলে তাকে আগে পদত্যাগ করতে হবে বলেও জানান ইসি সচিব জাহাংগীর।
৩০০ আসনে অনুসন্ধান কমিটি
সংসদীয় ৩০০ আসনের প্রতিটি আসনের জন্য একজন করে নির্বাচন পূর্ব-অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে যুগ্ম-জেলা জজ বা প্রয়োজনবোধে সিনিয়র সহকারী জজবিশিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ইসি থেকে পরিপত্র জারি করে এ নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে।
জোটভুক্ত দলের ব্যানারে নির্বাচনে জানাতে হবে ইসিকে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একাধিক জোট হলে জোটভুক্ত দলীয়প্রধান অথবা সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরে দলীয় প্রার্থী ও প্রতীকের স্বপক্ষে প্রত্যয়নপত্র ইসিতে জমা দিতে হবে। আগামী তিন দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ইসিকে অবহিত করতে হবে।
"