নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৭ নভেম্বর, ২০২৩

নির্বাচনের তফসিল

আ.লীগ কার্যালয়ে উৎসব, ফাঁকা বিএনপির

নির্বাচন কমিশন (ইসি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রধান কার্যালয়ে দেখা যায় বিপরীত চিত্র। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দুপুরে দেখা যায়, নেতাকর্মীদের ভিড়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুখর। যেন সেখানে উৎসবের আমেজ। দুপুরে খিচুড়িও বিতরণ করা হয়। অন্যদিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে দেখা যায়নি কোনো নেতাকর্মীকে। ছিল পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতি। নেতারা বলছেন, গ্রেপ্তারের ভয়ে বিএনপির কোনো কার্যালয়ে কেউ যাচ্ছেন না।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গত বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তিনি জানান, ভোট হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। তফসিলে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ নভেম্বর। আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, তারা শনিবার থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করবে। দুপুর ১টায় দেখা যায়, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তফসিল ঘোষণার পর আজ (বৃহস্পতিবার) নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বেড়েছে। আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমদ মনাফি, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরসহ নগরের শীর্ষনেতাদের অবস্থান কর্মসূচিতে দেখা যায়। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের জন্য খাবারের আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ।

একটি ‘পিকআপভ্যানে’ বড় বড় পাতিলে করে খিচুড়ি আনা হয়েছে। সারিতে দাঁড়িয়ে প্লাস্টিকের থালায় খাবার নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের সুশৃঙ্খলভাবে খাবার গ্রহণ করতে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের দপ্তর সম্পাদক আলিম বেপারী। তিনি বলেন, পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে। কেউ হুড়াহুড়ি করবেন না। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ও আশপাশে পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি। ঢাকায় গত ২৮ অক্টোবর সহিংসতা শুরুর পর বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশের অভিযানে প- হয়ে যায়। পরদিন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হন দলের কেন্দ্রীয়, জেলা ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অনেকে। প্রায় সব নেতা এখন আত্মগোপনে। মহাসমাবেশ প- হওয়ার পর থেকে বিএনপির কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। ২৯ অক্টোবর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট কার্যালয়ের সামনে ‘ডু নট ক্রস ক্রাইম সিন’ লেখা হলুদ টেপ দিয়ে বিএনপি কার্যালয়ের ফটকের তিন দিক ঘিরে আলামত সংগ্রহ করে। দুদিন পর কার্যালয়ের দুই পাশে কাঁটাতারের ব্যারিকেড বসায় পুলিশ।

মঙ্গলবার দুই পাশের কাঁটাতারের ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, গ্রেপ্তার আতঙ্কে কার্যালয়ে কেউ যাচ্ছেন না। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় নয়াপল্টনে দেখা যায়, বিএনপি কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলছিল। কার্যালয়ের সামনে সড়কে সতর্কাবস্থান নিয়ে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘোরাঘুরি করেন। ২৮ অক্টোবরের পর আলোচনায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের চিঠি ফটকের ভেতরের অংশের একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেখানে আরো কিছু চিঠি ছিল। সামনের সড়কে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দেখা যায়, বিএনপির কার্যালয়ের সামনে কোনো যানবাহনকে দাঁড়াতে দিচ্ছে না পুলিশ। বিএনপির কার্যালয় লাগোয়া হোটেল ভিক্টোরির নিরাপত্তাকর্মী আবদুল আহাদ বলেন, কার্যালয়ে বিএনপির কেউ আসেন না। ২৮ অক্টোবরের আগে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকতেন।

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দেখা যায়, মূল ফটকে তালা নেই। পুলিশ সদস্যদেরও দেখা যায়নি। তবে আশপাশে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা রয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা কেউ যান না। তাই নিরাপত্তারক্ষীদের ফটকও খুলতে হয় না। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের মূল ফটকের ভেতরের অংশে দুজন নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাদের একজন মো. আলিম। কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের কেউ আছেন কিনা- এমন প্রশ্নে আলিম বলেন, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে কার্যালয়ে কেউ আসেননি। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে নিয়মিত আসতেন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার। তিনিও আসছেন না।

হরতালে রাজপথে সতর্ক আ.লীগ : বিএনপিসহ সরকারবিরোধীদের হরতালের প্রতিবাদে রাজপথে সতর্ক পাহারায় মাঠে অবস্থানে ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। হরতাল প্রতিহতে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন তারা। গতকাল সকাল থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে অবস্থান নিতে দেখা গেছে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ নেতাদের।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যাত্রাবাড়ী, সাইনবোর্ড, শনির আখড়া, মাতুয়াইল, রায়েরবাগ, গাবতলী, শ্যামলী, উত্তরাসহ ঢাকার প্রবেশপথে মিছিল করেছে দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অবস্থানকালে নেতারা বলেন, বিএনপি-জামায়াতে অবৈধ হরতাল সাধারণ মানুষের কোনো সমর্থন নেই। মানুষ এই অবরোধ মানছে না, তাদের অবরোধ ব্যর্থ হয়েছে।

বিএনপির অবরোধবিরোধী অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরসহ নগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সকাল থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছেন। অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি বিএনপি ও অবরোধবিরোধী স্লোগান দিতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের।

এদিকে কার্যালয়ের সামনে ও গুলিস্তানের আশপাশের এলাকায় হরতালবিরোধী প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

যাত্রাবাড়ী ও ঢাকা-৫ আসনের বিভিন্ন স্থানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপনের নেতেৃত্ব নেতাকর্মীরা প্রতিদিনের মতো গতকালও সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। রিপন বলেন, যাত্রাবাড়ী হচ্ছে রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ। এখানে যাতে কেউ কোনো ধরনের নাশকতাণ্ডনৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য ভোর থেকে আমরা মাঠে আছি এবং থাকব।

এদিকে, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ বিভিন স্থানে মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি নেতৃত্বে অবস্থান কর্মসূচি এবং বিক্ষোভ মিছিলে নগর উত্তরের থানা ও ওয়াডর্, নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। ভাষানটেক বাজার, উত্তরা, মোহম্মদপুর, আগারগাঁওসহ বিভিন্ন স্থানে মিছিল ও সমাবেশ হয়। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে মিছিল ও অবস্থান করেছেন নগর উত্তরের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close