নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ নভেম্বর, ২০২৩

অবরোধের মধ্যেই পরীক্ষা আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা

সাংবিধানিকভাবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে পহেলা নভেম্বর থেকে। এর আগে থেকেই রাজনৈতিক ময়দানে বিরাজ করছে উত্তেজনা। দুই মেরুতে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের অবস্থানে প্রতিনিয়ত সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। নির্বাচনের দিন-তারিখও ঠিক হয়েছে। এখন সহিংসতা আরো বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব কারণে আতঙ্কের মধ্যে আছে স্কুলগামী শিশু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। গত দুই সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা অবরোধের মধ্যেই বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে। ফলে ভয় ও আতঙ্কে আছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে অন্তত ১৬০টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে শুধু ঢাকাতেই ঘটেছে ৮৬টি।

এসব সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে বাস চালকের সহকারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো অনেক কয়েকজন। তাদের মধ্যে সাতজন ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের সার্জারি অ্যান্ড বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। এছাড়া গত ২৮ অক্টোবর সংঘর্ষ ও হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন পুলিশের এক সদস্য ও পথচারীসহ প্রায় এক ডজন মানুষ।

ঢাকার অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তারা তাদের সন্তানদের বাসে চলাচল করতে দিচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা কেউ রিকশায়, কেউ স্কুলগামী ভ্যানে, কেউ কেউ পাঁয়ে হেঁটেই স্কুলে যাতায়াত করছে। কারণ অবরোধের মধ্যেই বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখার দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী কাশফিয়া আহমেদ মুনতাহা জানায়, বাসা থেকে বাসে চলাচল করতে হয়। শুনেছি বাসেই বেশি আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। কয়েকদিন আগে স্কুলে যাওয়ার সময় মেরাদিয়া হাটের কাছে অছিম নামের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। আমার খুব ভয় করে। কিন্তু পরীক্ষা তো দিতে হবে। তাই ভয় আর শঙ্কা নিয়েই স্কুলে যাই।

একই স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তালহা অবরোধের দিনগুলোয় হেঁটেই স্কুলে যাতায়াত করছে। তার ভাষ্য, বাসেই যাওয়া-আসা করতাম। ভাড়াও কম ছিল। কিন্তু বাসে যেকোনো সময় আগুন দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। টিভিতে, পত্রিকায় প্রতিদিন সেই সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। তাই বাসা থেকে বাসে চলাচলে নিষেধ করেছে। রিকশা ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে হেঁটেই যাতায়াত করছি।

কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মেয়েকে নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন ব্যবসায়ী সুমিত হাওলাদার। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সামনে মেয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু লাগাতার অবরোধে সব জায়গাতেই অস্থিরতা বিরাজ করছে। আগুন দেওয়া ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় ছেলে-মেয়েরা স্কুলে একা আসতে ভয় পাচ্ছে। তাই দিয়ে সকালে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে যাই; ছুটি হলে নিয়ে যাই। একা ছাড়তে ভরসা পাচ্ছিন না।

ধানমন্ডি হলি ফ্লাওয়ার স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মানহা জানায়, অবরোধ চলাকালে একদিন তার বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছিল। ভয়ে সেদিন স্কুলে আসেনি। এখন পরীক্ষা শুরু হওয়ায় বাধ্য হয়েই আসতে হচ্ছে।

মানহার বাবা মামুন মৃধা বলেন, আমি ও মানহার মা দুজনেই চাকরিজীবী। মানহা স্কুলভ্যানে আসা-যাওয়া করতো। কিন্তু অবরোধে কখন কি হয় তাই কষ্ট হলেও নিজেই দিয়ে আসি আবার ছুটি হলে নিয়ে আসি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close