ক্রীড়া প্রতিবেদক
নিউজিল্যান্ডে স্বপ্ন ভঙ্গ ফাইনালে ভারত

ঘরের মাঠে অপ্রতিরোধ্য ভারত। সেমিফাইনালেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে রোহিত শর্মার দল। বিরাট কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ারের জোড়া সেঞ্চুরির পর মোহাম্মদ শামির রাজসিক বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডকে ৭০ রানে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করল ভারত। শচীন টেন্ডুলকারকে টপকে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ৫০ সেঞ্চুরির মালিক হয়ে গেলেন বিরাট কোহলি। এদিকে মোহাম্মদ শামি ক্যারিয়ার সেরা ৫৭ রানে ৭ উইকেট নিয়ে কিউইদের জয়ের আশা শেষ করে দেন। আর তাতেই ভারত চলে যায় স্বপ্নে ফাইনালে।
গতাকাল মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৩৯৭ রান সংগ্রহ করে ভারত। এতে কিউইদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে ৩৯৮ রান। ভারতের হয়ে যথারীতি ইনিংস উদ্বোধনে নামেন রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল। ম্যাচের শুরু থেকেই ঝড়ো গতিতে রান তুলতে থাকেন এ দুই ব্যাটার। এ জুটির ব্যাট থেকে আসে ৭১ রান। তবে ম্যাচের নবম ওভারে এ জুটিতে আঘাত হানেন টিম সাউদি। তার স্লোয়ারে মিড অফে খেলতে গিয়ে কেন উইলিয়ামসনের তালুবন্দি হন রোহিত। আউট হওয়ার আগে ৪৭ করেন তিনি।
এরপর ২২ গজে আসেন বিরাট কোহলি। তাকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় ইনিংস এগিয়ে নিচ্ছেন শুভমান গিল। সে সঙ্গে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৩তম অর্ধশতক তুলে নিয়েছেন গিল। ম্যাচের ২৩তম ওভারে পায়ের পেশিতে টান লাগায় মাঠ ছেড়েছেন গিল। পরে ক্রিজে আসেন শ্রেয়াস আইয়ার। তাকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় ইনিংস এগিয়ে নেন কোহলি। ম্যাচের ৪২তম ওভারে রাচিন রবীন্দ্রকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন কোহলি। যা তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫০তম শতক। একই সঙ্গে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে তার প্রথম সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির পর স্কোরকার্ডে আরো ১৭ রান করেন কোহলি। এরপর টিম সাউদির বলে ডেভন কনওয়ের তালুবন্দি হন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে ১১৩ বলে ১১৭ রান করেন এ ডানহাতি ব্যাটার। এরপর উইকেটে আসেন লোকেশ রাহুল। তাকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় ইনিংস এগিয়ে নিচ্ছেন শ্রেয়স আইয়ার। সে সঙ্গে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নেন আইয়ার। তবে সেঞ্চুরির ইনিংস লম্বা করতে পারেননি তিনি। বোল্টের বলে মিচেলের তালুবন্দি হন এ ব্যাটার।
জবাবে ৩৯৯ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪৮.৫ ওভারে ৩২৭ রানেই গুঁটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ডে। ব্যাট হাতে ড্যারেল মিচেল লড়াকু সেঞ্চুরির পর থামেন ১৩৪ রানে। এছাড়া অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন ৬৯ ও গ্লেন ফিলিপস ৪১ রান করেন। বল হাতে একাই ৭ উইকেট শিকার করে কিউই শিবির তছনছ করে দেন ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামি।
এ জয়ে ২০১১ সালের পর আবার ফাইনালে উঠল দুবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত। অন্যদিকে ওয়ানডে বিশ্বকাপে টানা দুটি ফাইনাল খেলে এবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিল কিউইরা। ২০১৯ বিশ্বকাপে এই নিউজিল্যান্ডের কাছে সেমিফাইনালে হেরে বিদায় নিয়েছিল ভারত। একই মঞ্চে এবার কিউইদের হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিল রোহিত শর্মার দল।
এদিন টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ভারতকে দারুণ শুরু এনে দিয়ে নিজের সিদ্ধান্তকে যথার্থও প্রমাণ করেন তিনি। শুভমান গিলকে নিয়ে উদ্বোধনী জুটিতে ৮.২ ওভারে ৭১ রান যোগ করেন তিনি। কিন্তু টিম সাউদির বলে কেন উইলিয়ামসনকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রোহিত। ৪টি করে ছক্কা এবং চারে ২৯ বলে ৪৭ রান করেন তিনি।
রোহিত ফেরার পরও রানের চাকা সচল রাখেন শুভমান গিল ও বিরাট কোহলি। তারা দুজনে ৮৬ বলে ৯৩ রান যোগ করেন। শতরানের পথেই হাঁটছিলেন ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে নাম্বার ওয়ান ব্যাটার গিল। কিন্তু পায়ের পেশিতে টান লাগায় তিন অংকের স্কোর ছোঁয়ার আর সুযোগ পাননি তিনি। শেষদিকে ব্যাটিংয়ে নামলেও ৩টি ছক্কা এবং ৮টি চারে ৬৬ বলে ৮০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন এ ব্যাটার।
চোটের জন্য শুভমান না পারলেও কোহলি ঠিক ছুঁয়েছেন তিন অংকের জাদুকরী স্কোর। ১০৬ বলে ৮টি চার এবং ১টি ছক্কায় সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। ওয়ানডেতে মোট সেঞ্চুরিতে তিনি পেছনে ফেললেন কিংবদন্তি টেন্ডুলকারকে। এই সংস্করণে সেঞ্চুরির হাফসেঞ্চুরি কীর্তিটা শুধু কোহলিরই। শেষ পর্যন্ত ১১৩ বলে ৯টি চার এবং ২ ছক্কায় ১১৭ রান করে টিম সাউদির বলে ডেভন কনওয়ের তালুবন্দি হয়েছেন তিনি।
এর আগে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে শ্রেয়াস আইয়ারকে নিয়ে ১২৮ বলে ১৬৩ রানের বড় একটা জুটি গড়ে ভারতকে বড় স্কোর গড়ায় ভূমিকা রাখেন কোহলি। আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকা আইয়ারও সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন ৬৭ বলে। ৮টি ছক্কা এবং ৪টি চারে খেলা তার ৭০ বলে ১০৫ রানের বিস্ফোরক ইনিংস এবং লোকেশ রাহুলের ২০ বলে ৩৯* রানের ক্যামিওতে ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ৩৯৮ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত : ৫০ ওভার ৩৯৭/৪। (রোহিত ৪৭, গিল ৮০*, কোহলি ১১৭, শ্রেয়াস ১০৫, রাহুল ৩৯*, যাদব ১; বোল্ট ৮৬/১, সাউদি ১০০/৩, স্যান্টনার ৫১/০, ফার্গুসন ৬৫/০, রাচিন ৬০/০, ফিলিপস ৩৩/০)
নিউজিল্যান্ড : ৪৮.৫ ওভার ৩২৭/১০ (কনওয়ে ১৩, রাচিন ১৩, উইলিয়ামসন ৬৯, মিচেল ১৩৪, পিলিপস ৪১, চাপম্যান ২, স্যান্টনার ৯, সাউদি ৯, বোল্ট ২* ফার্গুসন ৬; ভুমরা ৬৪/১, সিরাজ ৭৮/১ সামি ৫৭/৭, জাদেজা ৬৩/০ কুলদিপ ৫৬/১।
ফল : ভারত ৭০ রানে জয়ী
"