নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ নভেম্বর, ২০২৩

বেড়েছে যান চলাচল

পঞ্চম দফার অবরোধ ঢিলেঢালা

সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে বিএনপির ডাকা পঞ্চম দফা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ছিল আরো ঢিলেঢালা। ঢাকার মধ্যে সড়কে যান চলাচল বেড়েছে। সকালে স্কুল-অফিস শুরুর সময় কোনো কোনো সড়কে কিছুটা জ্যামও দেখা গেছে। বেশির ভাগ বেসরকারি অফিস, বড় বিপণিবিতানসহ দোকানপাটও খোলা ছিল তবে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। আগের কয়েকটি অবরোধের সময় সকালে রাজধানীতে যে পরিমাণ যান চলাচল দেখা গিয়েছিল, গতকাল তার চেয়ে বেশি পরিমাণ যান রাস্তায় চলে। গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত যান চলাচলও বেড়েছে। রাস্তায় অফিসগামী মানুষ এবং স্কুল শিক্ষার্থীদের বেশ চাপ চোখে পড়েছে। রাজধানীর রামপুরা, মিরপুর, পান্থপথ, ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, আগারগাঁও, শ্যামলী, তেজগাঁও এবং গুলশান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যান চলাচল স্বাভাবিক দিনের তুলনায় কিছুটা বেশি। যাত্রীবাহী বাসের চলাচল বেশ চোখে পড়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রাইভেট কার এবং মাইক্রোবাসও চলাচল করতে দেখা গেছে। জাহাঙ্গীরগেট, বিজয় সরণি এলাকায় হালকা যানজট চোখে পড়েছে। তবে মহাখালী মোড়ের মতো এলাকাগুলো সকাল ১০টা পর্যন্ত বেশ ফাঁকাই দেখা গেছে। দূরপাল্লার যান চলাচল মূলত বন্ধ ছিল। তবে লঞ্চ ও ট্রেন চলাচল মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল।

ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারগুলো পুরোপুরি ফাঁকা ছিল সকালে। যাত্রী না থাকার কারণে সকাল থেকে কোনো পরিবহন এখান থেকে ছেড়ে যায়নি। এই বাস টার্মিনালটি থেকে সাধারণত দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর দিকে যান চলাচল করে থাকে।

রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে ছিল চুয়াডাঙ্গাগামী রয়েল এক্সপ্রেসের যাত্রীবাহী একটি বাস। চালকের আসন ছেড়ে বাসটির ভেতরে যাত্রীদের বসার আসনে অলস বসে ছিলেন ওই বাসের চালক জগলু মণ্ডল। অবরোধের কারণে যাত্রী না থাকায় বাস বন্ধ রাখা হয়েছে জানিয়ে জগলু মণ্ডল বলেন, বাসের চাকা ঘুরলে আমাদের পেট চলে, জীবন চলে। আর বাস না চললে আমাদের আয়ও বন্ধ হয়ে যায়।

পাশেই বাসটির ইঞ্জিনের (বনাট) ওপরে বসে ছিলেন সুপারভাইজার রাকিব হাসান। আর মেকানিককে সঙ্গে নিয়ে বাসের একটি জানালা মেরামতের কাজ করছিলেন চালকের সহকারী হৃদয় বিশ্বাস।

অবরোধে বাস চালাতে না পেরে অনেক ধারদেনা হয়ে গেছে জানিয়ে জগলু আরো বলেন, গাড়ি বন্ধ তো টেকা নাই। এর-ওর কাছ থেকে ধারদেনা করে চলতেছি। নিজে খাই আর না খাই, বাড়িতে বউ-পোলাপানরে তো খাওন দিতে হইব।

জগলু মণ্ডলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকা, আবার ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গা-এভাবে আসা-যাওয়ায় তাদের একটি ট্রিপ হিসাব করা হয়। এমন একটি ট্রিপ শেষ করলে চালক জগলু মণ্ডল পান ১ হাজার ৪৩০ টাকা। আর তার সহকারী ও সুপারভাইজার পান ৭০০ টাকা করে। কিন্তু বাস না চললে তাদের রোজগার হয় না। মালিকপক্ষ থেকেও কোনো টাকা দেওয়া হয় না। লাগলে ধার বা অগ্রিম নিতে হয়।

বাসটির সুপারভাইজার রাকিব হাসান বলেন, আমাদের অবস্থা খারাপ। দর্শনা ডিলাক্সের একটি বাসের চালকের সহকারী রুবেল মিয়া বলেন, আমাদের তো আর মাস গেলেই বেতন হয় না। বাস নিয়ে রাস্তায় নামলে আমাদের রোজগার হয়। বাস বন্ধ তো আমাদের জীবন অন্ধ।

বিএনপির ডাকা পঞ্চম দফা অবরোধের প্রথম দিন গতকাল সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, দূরপাল্লার কোনো গন্তব্যের বাস ছাড়েনি। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওই টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো যাত্রীবাহী বাস ছাড়তে দেখা যায়নি। টার্মিনালের ভেতরে যেখানে বিভিন্ন কোম্পানির বাসগুলো পার্কিং করে রাখা হয়, সেখানে বাসচালক, সহকারী ও সুপারভাইজারদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। কেউ নিজেদের মধ্যে গল্প-আড্ডা দিচ্ছিলেন। কেউবা মুঠোফোনে ভিডিও দেখে সময় কাটাচ্ছিলেন। কেউ কেউ আবার গাড়ির যন্ত্রাংশ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের টুকিটাকি কাজ সেরে নিচ্ছিলেন।

একাধিক পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, অবরোধের প্রতিটা দিন নির্ধারিত সময়ে কাউন্টার খোলা হয়। বাসগুলোও ছাড়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়। কিন্তু যাদের জন্য বাস ছাড়া হবে, সেই যাত্রীরাই নেই। কারণ যেকোনো গন্তব্যে ২০-২৫ জন যাত্রী না হলে ন্যূনতম খরচ ওঠানো যায় না।

এই বাস টার্মিনালে গিয়ে দূরপাল্লার কিছু কিছু যাত্রীকে বাস ছাড়ার অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে। তাদের একজন রোকসানা বেগম। যাবেন যশোরের চৌগাছায়। সঙ্গে নাতনি ফাতেমা আক্তার রয়েছে। ঢাকায় যাত্রাবাড়ীতে বাপের বাড়ি এসেছিলেন। নাতনি বাড়ি যাওয়ার জন্য কান্না করছে দেখে যশোরে ফিরছেন বলে জানালেন।

রোকসানা বেগম বলেন, সকাল ৮টায় গাবতলীতে আসছি। দুপুর দেড়টা-২টার দিকে ঈগল পরিবহনের একটি বাস ছাড়বে বলেছে। ওই বাসের টিকিট কেটেছি। টিকিট না কাটলে যাত্রাবাড়ী ফিরে যেতাম। এখন অপেক্ষা করে দেখি। রোকসানা বেগম গাবতলী টার্মিনালে যাত্রীদের অপেক্ষার জায়গায় বসেছিলেন। সেখানে তিনি ছাড়া আরো দু-একজনকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

অবরোধের অন্যান্য দিনের মতো এদিনও গাবতলী টার্মিনালের বেশির ভাগ পরিবহন কোম্পানির টিকিট বিক্রির কাউন্টার বন্ধ রাখতে দেখা গেছে। কিছু কাউন্টার খোলা থাকলেও কর্মীদের মুঠোফোনে ভিডিও দেখে কিংবা নিজেদের মধ্যে গল্প করে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে।

মুঠোফোনে নাটক দেখছিলেন কালীগঞ্জ এক্সপ্রেসের কাউন্টার মাস্টার আলমগীর হোসেন। তিনি জানান, দিনে তারা চারটি বাস ছাড়েন। রাতে দুটি রয়েছে। সব কটি বাস প্রস্তুত কিন্তু যাত্রী নেই। তবে রাতে একটি বাস ছাড়ার জন্য যাত্রীদের বুকিং নেওয়া হচ্ছে। সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সাতটি টিকিট বুকিং হয়েছে।

বিএনপির ডাকা পঞ্চম দফার এই অবরোধ বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত চলবে।

এর আগে সোমবার বিএনপির ডাকা চতুর্থ দফা অবরোধ শেষ হওয়ার পর এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বুধবার থেকে পঞ্চম দফার এই সর্বাত্মক অবরোধ ঘোষণা করে বিএনপি। এর মধ্যে মঙ্গলবার একদিনের বিরতি দেওয়া হয়। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ প- হওয়ার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে আসছে বিএনপি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close