নিজস্ব প্রতিবেদক
ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পেছাচ্ছে না
ইলিশের পেটে ডিম আসেনি দাবি করে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জেলে ও ব্যবসায়ীরা। তবে এ দাবি ভিত্তিহীন বলেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। গবেষণার মাধ্যমে পাওয়া তথ্য বিবেচনায় নিয়েই এ সময়সীমা নির্ধারণ হয়েছে। এ কারণে পেছানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন তারা।
উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও বিনিময় নিষিদ্ধ করা হয়। জানা যায়, সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ বন্ধের সময় নির্ধারণ এবং মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৩ বাস্তবায়নের জন্য ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর (২৭ আশ্বিন থেকে ১৭ কার্তিক ১৪৩০) পর্যন্ত মোট ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ থাকবে। এ সময় দেশব্যাপী ইলিশ পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ এবং বিনিময়ও নিষিদ্ধ থাকবে। একই সঙ্গে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান বাস্তবায়ন করা হবে। ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ থাকাকালে ইলিশ আহরণে বিরত থাকা জেলেদের ভিজিএফের আওতায় খাদ্য সহায়তা দেবে সরকার।
সরকারের ঘোষণার পরই ২২ দিনের এ নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর বড় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র মহিপুরের জেলে ও ব্যবসায়ীরা। সরকারের সব সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মহিপুর বন্দর আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মাসুম ব্যাপারী বলেন, কোনো ইলিশের পেটে এখন পর্যন্ত ডিম আসেনি। ১২ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা শুরু হলে ইলিশ মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ভেস্তে যাবে। তাই ১২ অক্টোবরের পরিবর্তে ৩০ অক্টোবর থেকে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছি।
একইভাবে নিষেধাজ্ঞা পেছানোর দাবি জানিয়েছে বরিশাল সদর থানা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশন। ২৫ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. নিরব হোসেন টুটুল বলেন, আগামী ১২ অক্টোবর সরকারের যে নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে তা এক মাস পরে অর্থাৎ আগামী ১২ নভেম্বর থেকে শুরু করার অনুরোধ জানাচ্ছি। তা ছাড়া সরকারের ইলিশ রপ্তানি কার্যক্রম চলবে আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত। নিষেধাজ্ঞা থাকলে মাছ রপ্তানিতেও সমস্যা হবে। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি, সারা দেশের ইলিশ ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের কল্যাণে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার জন্য।
তবে গবেষণা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্য বছর যেভাবে ইলিশ ধরা বন্ধের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়, এবারও সেভাবেই যে গবেষণা পদ্ধতি আছে, সে নিয়মের মধ্যেই নির্ধারণ হয়েছে। বিগত ৩৪ বছর যেহেতু ঠিকভাবেই এটি হয়েছে, এবারেরটাও সঠিক হবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, উৎপাদন বাড়াতে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও বিনিময় নিষিদ্ধ করার বিষয়টি অনেক গবেষণার মাধ্যমে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্ধারণ করা। যেহেতু জেলেরা এর বড় একটি অংশ, তাই তাদের মতামতও গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে তাদের সময়সীমা পেছানোর যে দাবি সেটি এ বছর বিবেচনার সুযোগ না থাকলেও আগামী বছর হয়তো সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে বিবেচনা করা যেতে পারে।
ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট, ১৯৫০’ এর অধীন প্রণীত ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ রুলস, ১৯৮৫’ অনুযায়ী এ ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ ২২ দিন এসব কার্যক্রম করলে আইন অমান্যকারী কমপক্ষে এক থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
"