কাইয়ুম আহমেদ
সরকারবিরোধী আন্দোলন
মাঠেই মোকাবিলায় প্রস্তুত আ.লীগ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে নভেম্বরে। তার আগেই অক্টোবর মাসে টানা কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে চাপে ফেলতে চায় বিএনপি। তবে বসে নেই আওয়ামী লীগও। সরকারবিরোধী আন্দোলন আরো জোরালো হতে পারে, বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে দলটি। আন্দোলনের পাশাপাশি সরকারকে চাপে ফেলতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হলে তা মোকাবিলায়ও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। এমনকি অঘোষিতভাবে বিএনপি হঠাৎ করে রাস্তায় নেমে যেতে পারে, এমনটাও বিবেচনায় রেখেছে ক্ষমতাসীন দল। সে ধরনের পরিস্থিতিতে রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে নেতাকর্মীদের।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, অক্টোবর মাসজুড়ে বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি থাকবে আওয়ামী লীগের। বিএনপি যে ধরনের কর্মসূচি দেবে, আওয়ামী লীগও সেই কর্মসূচি নেবে। বিএনপির কর্মসূচি না থাকলেও সহযোগী সংগঠনকে দিয়ে ফাঁকা দিনগুলোতেও আওয়ামী লীগ কোনো না কোনো কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকবে।
এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের দিনগুলো হিসাবে নিয়ে ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন বিএনপিকে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কার্যত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া এই আলটিমেটামে কঠোর কর্মসূচির নামে বিএনপি যাতে কোনো সংঘাত বা সহিংস কর্মসূচিতে না যায়, সে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির প্রথম সভা (২৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ওবায়দুল কাদের।
সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ এই অক্টোবরে আছে, আগামী অক্টোবরেও থাকবে। বিএনপি নাকি আমাদের তাড়িয়ে দেবে কয়েক দিনের মধ্যে? আমরা অক্টোবরে আছি, আগামী অক্টোবরেও থাকব। কী কারণে ক্ষমতা ছেড়ে দেব? কী কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আবার পুনর্জীবিত করব? কেন শেখ হাসিনাকে সরে যেতে হবে? জনগণ তাকে চায়, বিকল্পভাবে না। সংকটে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো তার সমকক্ষ কেউ নেই।
ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, বাস্তবতার সঙ্গে সংগতি রেখে চলতে হবে। সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। ঢাউস বা মোটা ইশতেহারের দরকার নেই। মোটা পুস্তক প্রণয়নের দরকার নেই। কারণ বেশি কথা পড়ার সময় কম। অল্প কথার মধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করতে হবে।
নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার আকার নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, সেটা ঠিক করবেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচনকালীন সরকার শুধু রুটিন ওয়ার্ক হবে। মেজর পলিসি গ্রহণ করবে না। এটা নতুন কিছু নয়, পৃথিবীর অন্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো রুটিন দায়িত্ব পালন করবে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে কাদের বলেন, আমরা আমাদের নিয়মে চলব। আমাদের হুমকি দিয়ে লাভ নেই। সামনের নির্বাচন আমরা ফ্রি, ফেয়ার করব। এর বাইরে আমাদের কোনো চিন্তা নেই। যা করব সংবিধান অনুযায়ী। কে নির্বাচনে এলো কে এলো না, এটা আমাদের বিষয় নয়।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আগামী নির্বাচনী ইশতেহারে গুরুত্ব দেওয়া হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিগত সময়ের ইশতেহার মূল্যায়ন করে আগামী নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করা হবে।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগের ইশতেহার তৈরি করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী আওয়ামী লীগমনা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সুশীলদের প্রয়োজনে ডাকা হবে। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে বৈঠক হবে, কথা হবে, তাদের মতামত ও সুপারিশ নেওয়া হবে। এছাড়া মিডিয়ার ব্যক্তিদের কাছ থেকেও ইশতেহার করতে বিভিন্ন সুপারিশ নেওয়া হবে।
ড. আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ও ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ড. সেলিম মাহমুদ, অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ড. সাত্তার মন্ডল, ড. বজলুল হক খন্দকার, ড. শামসুল আলম, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও ডা. দীপু মনি, শেখর দত্ত, ড. মাকসুদ কামাল, ড. মাহফুজুর রহমান, অধ্যাপক সাদেকা হালিম, সাজ্জাদুল হাসান এমপি, অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, ওয়াসিকা আয়েশা খান, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, জুনায়েদ আহমেদ পলক, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত, অ্যাডভোকেট সায়েম খান প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের সূত্র বলছে, তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে দেশে নির্বাচনী আবহ তৈরি হবে। নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত হয়ে পড়বে রাজনৈতিক দলগুলো। তখন নির্বাচনের পরিবেশ রক্ষায় কঠোর ভূমিকায় থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচনের পরিবেশ রক্ষা করা নির্বাচন কমিশনেরও সাংবিধানিক দায়িত্ব। নির্বাচনের সময় বিএনপি ও তাদের মিত্ররা সহিংস আন্দোলন, ঢাকা অচল কিংবা ঘেরাও জাতীয় কর্মসূচি দিলে তা নির্বাচন প্রতিহতের শামিল হবে। এ ক্ষেত্রে মার্কিন ভিসানীতির আওতায় পড়ে যাবেন বিএনপি নেতারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও চড়াও হওয়ার সুযোগ পাবে। এরপরও আওয়ামী লীগ প্রয়োজন মনে করলে রাজপথে থাকবে।
বিএনপি এর মধ্যে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সভা-সমাবেশসহ ১২ দিনের কর্মসূচি পালন করছে। আওয়ামী লীগও ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সাত দিনের কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আছে। এর মধ্যে দুই দলের কর্মসূচির কোনো কোনোটি একই দিনে, কাছাকাছি স্থানে। ঘোষিত কর্মসূচির বাইরেও বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সভা-সমাবেশ করছে। এর মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রবিবার নয়াপল্টনে সমাবেশ করে বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও মঙ্গলবার কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরায় ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ সমাবেশ করেছে। এছাড়া নির্ধারিত কর্মসূচির বাইরে অক্টোবরে ঢাকায় দুটি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে বড় সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। ৭ অক্টোবর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন উত্তরার দিয়াবাড়ীতে সুধী সমাবেশ হবে। এই সুধী সমাবেশে উত্তরা ও মিরপুর এলাকার সংসদ সদস্যদের প্রত্যেককে এক থেকে দুই লাখ করে লোক আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২০ অক্টোবর মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ চালু করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিনও সুধী সমাবেশ হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুুর রাজ্জাক বলেছেন, তারা তো সরকারবিরোধী আন্দোলনেই আছে। তারা যদি মনে করে সন্ত্রাস, নাশকতা, অগ্নিসংযোগের পথ বেছে নেবে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালের মতো, আমরা সেটা মোকাবিলা করব। তারা যে দাবি করছে, সেটা তো ২০০৯ সাল থেকেই করে আসছে। আমাদের কৌশল আগের মতোই। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী, এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলনের কথা বলছে। তাদের আন্দোলন নিয়ে ভাবার কিছু নেই। তবে তারা আবার সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের পথে হাঁটার চেষ্টা করলে আমরা প্রতিহত করব। জনগণকে নিয়ে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় শক্ত অবস্থান নেব।
"