প্র্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
ভয়েস অব আমেরিকাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ভিসা নিষেধাজ্ঞার যৌক্তিকতা নেই
কেউ অন্যায় করলে আমাদের দেশে তার বিচার হয় * জনগণের ভোটের অধিকার এখন জনগণের হাতে, আওয়ামী লীগ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সংস্কার করেছে * বিদেশে চিকিৎসা নিতে হলে আবার জেলে যেতে হবে খালেদা জিয়াকে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তারা আমাদের ওপর ভিসা স্যাংশন দিতে চাচ্ছে কী কারণে? কেউ অন্যায় করলে আমাদের দেশেই তার বিচার হয়। কেউ রেহাই পায় না। যেখানে এমন বিচার হচ্ছে, সেখানে এই স্যাংশন কী কারণে? বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান শতরূপা বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াশিংটন সফরের সময় সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন। শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ভয়েস অব আমেরিকা সাক্ষাৎকারটি প্রচার করে।
সাক্ষাৎকারে ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ মানবাধিকার ও ভোটসংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করেন শতরূপা বড়ুয়া। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যাতে হয়, তার জন্য যত সংস্কার, সেটা অওয়ামী লীগ করেছে। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব- এ স্লোগান তো আমার দেওয়া। আমি এভাবে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছি। আমাদের দেশ বেশিরভাগ সময় সামরিক স্বৈরাচার শাসন করেছে। তখন তো মানুষের ভোট দেওয়া লাগেনি। তারা ভোটবাক্স নিয়ে গিয়ে শুধু ফল ঘোষণা দিয়েছে। এর প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করে নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে আসতে পেরেছি। এখন মানুষ তার ভোটের অধিকার সম্পর্কে অনেক সচেতন।
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী, কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, সেটা র্যাব হোক, পুলিশ বা যেটাই হোক, কেউ কোনো অন্যায় করলে তাদের বিচার হয়, কেউ রেহাই পায় না।
সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা সংক্রান্ত প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়কের জন্য বিএনপি যখন ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করে তখনই আমরা আন্দোলন করেছিলাম। তখন বিএনপির নেত্রী বলেছিলেন, পাগল এবং শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ না। তখন তারাই এর বিরুদ্ধে ছিল।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছিল ২০০৮ সালে। কারণ বিএনপি ২০০১ থেকে ২০০৬-এ জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, দুর্নীতি, তাদের স্বজনপ্রীতি, মানিলন্ডারিং; যত রকমের অপকর্মের কারণে বাংলাদেশে ইমার্জেন্সি ডিক্লিয়ার হয়। তখন এই কেয়ারটেকার সরকার আসে। দুই বছর তারা ইলেকশন দেয়নি। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। ২০০৮-এর নির্বাচনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হয়। সেই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে জামায়াতসহ ২০ দলীয় ঐক্যজোট সিট পেয়েছিল মাত্র ২৯টি আসন। আর আমরা পেয়েছিলাম দুই-তৃতীয়াংশ।
শেখ হাসিনা বলেন, তারা ২০১৪-এর নির্বাচন বয়কট করে এবং সেটা বানচাল করার জন্য অগ্নিসন্ত্রাস করে। তখন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে। হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলে। ৫০০-এর মতো ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে ফেলে। এজলাসে বসা জজকে বোমা মেরে হত্যা করে। আইনজীবী হত্যা করে। এরপর ১৮-এর নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করে। সেখানে ৩০০ সিটে প্রায় ৭৫০ নমিনেশন। কারণ লন্ডন থেকে একটা নমিনেশন আসে, তাদের গুলশান অফিস থেকে একটা যায় আর পুরানা পল্টন অফিস থেকে একটা যায়। এভাবে যখন একেক সিটের পেছনে দুজন-তিনজন করে নমিনেশন দিয়ে নিজেরা গ-গোল করে এক পর্যায়ে নির্বাচন থেকে সরে যায়। সেই নির্বাচনেও তারা ফেল করে।
বিএনপি কখনো সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করেনি মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তারা সুষ্ঠুভাবে ইলেকশন করতে চায় না। এবার হঠাৎ তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি কেন? প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের নেতাটা কে? মানুষ ভোট দেবে কাকে? মানুষ একজন নেতৃত্ব দেখতে চায় যে, তাকে ভোট দিলে ভবিষ্যতে সে এই দেশ চালাবে। বিএনপি কি তেমন কাউকে সামনে আনতে পেরেছে, যাকে নিয়ে তারা ইলেকশন করবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন ২০০৭ সালে ইমার্জেন্সি ঘোষণা হলো, তখন উচ্চ আদালতের রায় ছিল, বাংলাদেশে আর কেউ বা অনির্বাচিত সরকার আসতে পারবে না। একটা নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তে আরেকটি নির্বাচিত সরকারই আসতে হবে। জিয়াউর রহমান যে ক্ষমতা দখল করেছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর সংবিধান লঙ্ঘন করে, সেই ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর জেনারেল এরশাদ এভাবে মার্শাল ল’ দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল। সেই ক্ষমতাকেও অবৈধ ঘোষণা করা হয়। ওই রায়েই বলা হয়, আর কখনো অনির্বাচিত কেউ সরকারে আসতে পারবে না। এখন আবার সেই উচ্চ আদালতের রায় আমরা কীভাবে ফেরত দেব বা কীভাবে আবার সংবিধান সংশোধন করব? আর কেনই বা আমরা করব? কারণ আমাদের তো তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। কারণ স্থিতিশীল অবস্থাকে অস্থিতিশীল করার জন্য অনেক রকমের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, সংঘাত, অগ্নিসংযোগ, অনেক কিছুই করা হয়েছে। সেগুলো মোকাবিলা করে বাংলাদেশ আর্থসামাজিকভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে গেছে, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমাদের নির্বাচিত সরকারই তো দরকার। আমি অনির্বাচিত সরকার কোথা থেকে আনব?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে ২৩ সালের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এখন দেশে দুর্ভিক্ষ নেই, মানুষের হাহাকার নেই, এমনকি বেকারত্বও কমে এখন মাত্র ৩ শতাংশ। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ, ওয়াইফাই কানেকশন সারা দেশে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাটের অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছি। কারিগরি শিক্ষা, ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। এভাবে দেশের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে এভাবে স্যাংশন দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ঠিক আছে, স্যাংশন দিলে (বাংলাদেশিরা) আমেরিকা আসতে পারবে না, আসবে না। না আসলে কী আসবে-যাবে? দেশে এখন যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে।
খাােলদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি জিজ্ঞেস করি, পৃথিবীর কোন দেশে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পেরেছে। তার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে যে সাজা স্থগিত করে তাকে বাসায় থাকার অনুমতি দিয়েছি, তা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। আবার তাকে জেলে যেতে হবে।
আদালতে যেতে হবে। আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। আমাদের আদালতের কাজের ওপর হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই।
"