নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

জেগে উঠেছে পর্যটন খাত

করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন খাত আবার জেগে উঠছে। এ শিল্পে বেসরকারি বিনিয়োগও ধীরে ধীরে বাড়ছে। পর্যটকের আবাসন সুবিধা বাড়াতে কক্সবাজারে হোটেল-মোটেল গড়ে উঠেছে। তবে শুধু কক্সবাজারে নয়, সব পর্যটনকেন্দ্রেই বেসরকারি উদ্যোগে অভ্যন্তরীণ পর্যটকের আকর্ষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখযোগ্য হারে।

সূত্র জানায়, ২০২৫ সালের মধ্যে পর্যটনশিল্পের সর্বোচ্চ বিকাশে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। পুরো দেশকে আটটি পর্যটন জোনে ভাগ করে প্রতিটি স্তরে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রথমবারের মতো সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে কক্সবাজারে পর্যটন অবকাঠামো নির্মাণে ২৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলোয় প্রায় প্রত্যক্ষভাবে বিনিয়োগ হবে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। পরোক্ষভাবে বিনিয়োগ হবে ১ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া সরকারের প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন, আধুনিক হোটেল-মোটেল নির্মাণ, মহেশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, সোনাদিয়াকে বিশেষ পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা, ইনানী সৈকতের উন্নয়ন, টেকনাফের সাবরাংয়ে ইকো ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ, শ্যামলাপুর সৈকতের উন্নয়ন, ঝিলংঝা সৈকতের উন্নয়ন, চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ, কুতুবদিয়ায় বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্প্রসারণ, চকরিয়ায় মিনি সুন্দরবনে পর্যটকের গমনের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ডুলাহাজরা সাফারি পার্কের আধুনিকায়ন প্রভৃতি।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী বলেন, করোনার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ট্যুরিজম সেক্টর। সেই সেক্টর এখন উঠে দাঁড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দশম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার এবং প্রথম বাংলাদেশ পর্যটন ডেভেলপমেন্ট সামিট-২০২৩-এর উদ্বোধন শেষে তিনি এসব কথা বলেন। মেলার আয়োজন করেছে পর্যটন বিচিত্রা।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলঙ্কার ডেপুটি হাইকমিশনার রুয়ান্থি ডেলপিতিয়া, বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভাণ্ডারি, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সিইও আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. রাহাত আনোয়ার, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন ও বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) নির্বাহী পরিচালক লোকমান হোসেন মিয়া।

এম মাহবুব আলী বলেন, করোনার সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ট্যুরিজম সেক্টর। তবে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠছি আমরা। আমরা এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতকে বুস্টআপ করতে পেরেছি সবার প্রচেষ্টায়। তিনি আরো বলেন, আজকের এ আয়োজন প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটককে আসতে উৎসাহী করবে। ট্যুরিস্টদের আকর্ষিত করার মতো বাংলাদেশে সব নান্দনিক সৌন্দর্য ও পরিবেশ রয়েছে। আমাদের দেশের একেকটা জেলায় পর্যটনের যে প্রোটেনশিয়ালিটি রয়েছে, তা বিশ্বের অনেক দেশেই নেই।

এদিকে বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে দশম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার। এ মেলা চলবে তিন দিন। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর মেলার সমাপ্তি হবে। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মেলায় প্রবেশ মূল্য ধরা হয়েছে ৩০ টাকা। এছাড়া প্রবেশ টিকিটের বিপরীতে সবার জন্য রাফেল ড্র এবং এয়ারলাইন্স টিকিটসহ বেড়ানোর জন্য আকর্ষণীয় গিফট ভাউচার রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. সন্তোষ কুমার দেব মনে করেন, করোনার সময় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ পর্যটনশিল্প। আবার করোনা-পরবর্তী সময়ে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম যে পাঁচটি সেক্টরকে চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে পর্যটন কিন্তু উল্লেখযোগ্য। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য অন্য শিল্পের পাশাপাশি এ মুহূর্তে পর্যটনকে অধিক গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।

ড. সন্তোষ কুমার বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে অন্যতম ল্যান্ডমার্ক হতে পারে পর্যটন শিল্প। আমাদের দেশের প্রায় ৪৮ লাখ মানুষ এ পর্যটনশিল্পে সম্পৃক্ত রয়েছে। বাংলাদেশ পর্যটনে অনেক সম্ভাবনাময় একটি দেশ। আমাদের রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম স্যান্ডি সী বিচ কক্সবাজার, সুন্দরবন, ষাট গম্বুজ মসজিদ, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার। যেগুলো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত। নদীমাতৃক এ বাংলাদেশে ৭০০-এর বেশি নদী রয়েছে। ফলে বাংলাদেশে রিভার ট্যুরিজমের সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে হাওরভিত্তিক পর্যটন এখন খুব বেশি গ্রোআপ করছে। টাঙ্গুয়া, হাকালুকি, মিঠামইনসহ অন্য হাওরগুলো রয়েছে। সিলেটের যে চা-বাগান রয়েছে, তার যে আঁকাবাঁকা মেঠোপথ এবং টিলার ওপর সবুজের যে সমারোহ, যেটি পর্যটককে অনেক বেশি আকৃষ্ট করে। পর্যটক মনোমুগ্ধকর এ দৃশ্য দেখার জন্য চাঁদের গাড়ি নিয়ে সিলেটে যাচ্ছে। পর্যটন মৌসুমে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেটে প্রচুর পরিমাণ অভ্যন্তরীণ পর্যটকের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যাও বাড়ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close