প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
জলবায়ু সংকট এড়াতে সৎ হতে হবে ধনীদের
* সরকার এসডিজি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ * গভীর সমুদ্রবিষয়ক চুক্তিতে সই
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আসন্ন সংকট এড়াতে বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। আমরা আশা করি বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন এবং আসন্ন সংকট এড়াতে তাদের ন্যায্য অংশীদারত্বের বিষয়ে সৎ থাকবে। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ চেম্বারে ‘জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রদান’ শীর্ষক জলবায়ু উচ্চাকাঙ্ক্ষা শীর্ষ সম্মেলনের অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে অভিযোজন এবং আগাম সতর্কতায় বিনিয়োগ করা সঠিক। জাতিসংঘ মহাসচিবের দুটি উদ্যোগে সমর্থন দিতে বাংলাদেশ এই অধিবেশনে যোগ দিয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং ত্রিভুজাকার সহযোগিতার মাধ্যমে অন্য দুর্বল দেশগুলোর সঙ্গে দক্ষতা বিনিময় করতে ইচ্ছুক।
জলবায়ু ন্যায্যতার একজন প্রবক্তা হিসেবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এই এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যেকোনো গঠনমূলক পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন দিতে প্রস্তুত। বাংলাদেশ ভূমিকম্প মডেলিং নিয়ে দেশব্যাপী একটি প্রদর্শনী মহড়া করতে জাতিসংঘকে অনুরোধ জানিয়েছে। তারা আর্থ অবজারভেটরি হিসেবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু টু নিয়ে কাজ করছেন। শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন, ‘সবার জন্য প্রাথমিক সতর্কতা’ এমডিবি এবং আইএফআইকে এই ধরনের প্রচেষ্টায় যোগ দিতে উৎসাহিত করতে সক্ষম হবে।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ১৯৭০ সালে ভোলা ঘূর্ণিঝড়ের সময় যে লক্ষাধিক লোক মারা গিয়েছিল তার তুলনায় বাংলাদেশে প্রাণহানির সংখ্যা এক অঙ্কে নেমে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ৬৫,০০০ উপকূলীয় মানুষের সমন্বয়ে বিশ্বের বৃহত্তম কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবক কর্মসূচি রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ একটি সমন্বিত বহু-বিপত্তি প্রাথমিক সতর্কীকরণ পদ্ধতির সর্বশেষ জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আমরা আবহাওয়ার পূর্বাভাসের নিয়মিত আপডেট দেওয়ার জন্য মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করছি।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) বিষয়ভিত্তিক রাষ্ট্রদূত সায়মা ওয়াজেদ এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, একই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দপ্তরের দ্বিপক্ষীয় বুথে মা, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য অংশীদারত্বের (পিএমএনসিএইচ) চেয়ার হেলেন ক্লার্কের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে বলেন, সরকার কোভিড-১৯ মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জলবায়ু সংকট থেকে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ‘সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ’ বিষয়ে এসডিজি-৩সহ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো (এসডিজি) বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুুল মোমেন পরে বলেন, সরকার স্বাস্থ্যসেবা সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার অনুযায়ী খাতে বরাদ্দ ২৭ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতের কৌশলগত পরিকল্পনা (২০১১-২০৩০) বাস্তবায়ন করছে।
বৈঠকে হেলেন ক্লার্ক শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে স্বাস্থ্য খাতে সার্বিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে মা ও শিশুমৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
এ সময়ে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের বিষয়ভিত্তিক রাষ্ট্রদূত সায়মা ওয়াজেদ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি অব এরিয়াস বিয়ন্ড ন্যাশনাল জুরিসডিকশন’ (বিবিএনজে) চুক্তি সই করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ বিষয়ে পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুুল মোমেন জানান, এর মাধ্যমে সুমদ্র সম্পদের সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও আহরণে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি আরো দৃঢ় হলো।
চুক্তিপত্রে যারা সই করবে তাদের গভীর সুমদ্রে ভাসমান সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে মেরিন প্রটেকটেড অঞ্চলে সম্পদ আহরণ করা যাবে না; উন্নয়নশীল দেশগুলো যাতে গভীর সমুদ্রে সম্পদ আহরণ করতে পারে সেজন্য সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে হবে; অতিরিক্ত মাত্রায় মাছ ধরা যাবে না; পরিবেশের ওপর প্রভাব পর্যালোচনা করতে হবে; সমুদ্র দূষণ রোধ করতে হবে ও গবেষণার জন্য অর্থ ব্যয় করতে হবে। খবর বাসস।
"