প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
কানাডার নাগরিকদের জন্য ভিসা স্থগিত করল ভারত
কানাডার নাগরিকদের জন্য ভিসা স্থগিত করেছে ভারত। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দেশটি এই পদক্ষেপ নেয় এবং ‘পরবর্তী নির্দেশ বা বিজ্ঞপ্তি না দেওয়া পর্যন্ত’ এই নির্দেশনা বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
কানাডায় খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দেশটির সঙ্গে ভারতের উত্তেজনা বর্তমানে তুঙ্গে রয়েছে এবং এর মধ্যেই ভারতের পক্ষ থেকে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো। খবর এনডিটিভির।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি না হওয়া পর্যন্ত’ কানাডার নাগরিকদের ভিসা ইস্যু স্থগিত করেছে ভারত। অনলাইন ভিসা আবেদন কেন্দ্র বিএলএস ইন্টারন্যাশনালের একটি বিজ্ঞপ্তি বলা হয়েছে, ‘পরিচালনা-সংক্রান্ত কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ভারতীয় ভিসা পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে’।
কানাডার নাগরিকদের জন্য ভারতীয় ভিসা স্থগিতের মতো পদক্ষেপ এমন সময়ে নেওয়া হলো যখন কানাডায় খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দেশটির সঙ্গে ভারতের উত্তেজনা তুঙ্গে রয়েছে। মূলত নিজ্জার হত্যার ঘটনায় ভারত সরকারের দিকে সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
এমনকি ভারতের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলার পর ট্রুডো এখন কানাডার মিত্র দেশগুলোকেও পাশে চাইছেন। এই পরিস্থিতিতে শিখ নেতা নিজ্জার হত্যার তদন্তে ভারতকে সহযোগিতা করতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি কানাডার এই অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলেও জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। এর আগে কানাডার শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার পেছনে ভারত সরকারের হাত থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের একটি শিখ মন্দিরের বাইরে গত ১৮ জুন গুলি করে হত্যা করা হয় ৪৫ বছর বয়সি হরদীপ সিং নিজ্জারকে।
গত সোমবার কানাডার হাউস অব কমন্সের সভায় প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেন, কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা শিখ নেতা নিজ্জারের হত্যার সঙ্গে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে। কানাডার গভীর উদ্বেগের কথা ভারত সরকারের শীর্ষ নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে। গত সপ্তাহে জি টোয়েন্টি সম্মেলনের সময় বিষয়টি আমি ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছি।’
এদিকে ট্রুডোর ভাষণের পর কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জলি ঘোষণা করেন, কানাডা থেকে এক শীর্ষ ভারতীয় কূটনীতিককে তারা বহিষ্কার করছে। ভারতের সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, বহিষ্কৃত ওই কূটনীতিকের নাম পবন কুমার রাই এবং তিনি ভারতের গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর কর্মকর্তা।
অবশ্য নিজ্জারকে হত্যার ঘটনায় ভারত সরকারের জড়িত থাকার গুরুতর এই অভিযোগকে ‘মনগড়া’ এবং ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে নাকচ করে দিয়েছে দিল্লি।
এদিকে হরদীপ সিং নিজ্জরের পর কানাডায় খালিস্তান আন্দোলনের আরেক নেতা খুন হয়েছেন। সুখদুল সিং নামের ওই ব্যক্তি সুখা দুনেক নামেও পরিচিত। কানাডার উইনিপেগে বুধবার রাতে দুই দল সন্ত্রাসীর মধ্যে সহিংসতা চলাকালে গুলিতে তিনি খুন হন বলে এনডিটিভির খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। কানাডায় খালিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন সুখা দুনেক।
ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থা এনআইএর বুধবার প্রকাশিত তালিকায় দুনেককে এ ক্যাটাগরির সন্ত্রাসী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি পাঞ্জাবের মোগা থেকে ২০১৭ সালে কানাডায় পালিয়ে যান। ভারতের দাবি, তিনি ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহার করে কানাডায় গেছেন। তিনি ভারতের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী আর্শদীপ দালার ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে দাবি করা হয়েছে।
দুনেক খুন হওয়ার পর ভারতের সঙ্গে কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্কের চরম অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে গত সোমবার কানাডার পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, সরকারের কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য তথ্য’ রয়েছে, গত জুনে কানাডার নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যার সঙ্গে ভারত সরকারের এজেন্ট জড়িত।
ট্রুডোর অভিযোগের পর প্রথমে কানাডা ভারতীয় এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করে। তাদের দাবি, ওই কর্মকর্তা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) কর্মকর্তা। জবাবে ভারতও কানাডার এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করে।
কানাডায় ভারতীয় নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলল দিল্লি : কানাডার কিছু অংশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নাগরিকদের সতর্ক করেছে ভারত। গত জুনে কানাডায় এক শিখ নেতা খুন হওয়ার জেরে দুই দেশের মধ্যে যে কূটনৈতিক উত্তেজনা শুরু হয়েছে, তার সর্বশেষ নজির এমন সতর্কতা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, কানাডায় যেসব ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন, তাদের নিরাপত্তা নিয়ে নয়াদিল্লি উদ্বিগ্ন। কারণ, তারা সেখানে রাজনৈতিক বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধ এবং সহিংসতার শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, এমন অঞ্চল ও এলাকাগুলোতে ভ্রমণ না করতে ভারতীয়দের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ভারত থেকে কিছু কূটনীতিককে ফিরিয়ে নিচ্ছে কানাডা : চলমান উত্তেজনার মধ্যে ভারত থেকে কয়েকজন কূটনীতিককে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কানাডা সরকার। টরন্টোর স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় কানাডার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক দপ্তরের মুখপাত্র জ্যঁ-পিয়েরা গডবাউট এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কানাডীয় সংবাদমাধ্যম ন্যাশনাল পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এক ই-মেইলে জ্যঁ-পিয়েরা গডবাউট লেখেন, ‘উত্তেজনা বৃদ্ধির জের ধরে বর্তমানে যে পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের কিছু কূটনীতিক সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি পাচ্ছেন। কিছু কূটনীতিককে ফিরিয়ে নেওয়া হলেও ভারতে কানাডার কূটনৈতিক কার্যালয়গুলো খোলা থাকবে।
"