নিজস্ব প্রতিবেদক
নির্বাচন ঘিরে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে আ.লীগ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে চলতি মাসের শেষ দিকে গণসংযোগে নামবে দলটি। এবারের নির্বাচনী প্রচারে সরকারের তিন মেয়াদে খাতভিত্তিক উন্নয়ন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অর্জন এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে খাতভিত্তিক পরিকল্পনা সামনে আনা হবে। এসব বিষয় প্রাধান্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে ইশতেহার। এমন তথ্য জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পরিকল্পনা প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত একাধিক নেতা।
সূত্র জানায়, বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি না, সেটি নিয়ে ধোঁয়াশা থাকায় গণসংযোগের ক্ষেত্রে দুই ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি ভোটে এলে তাদের আমলের নানা ‘অপকর্ম’ প্রচারে গুরুত্ব দেবে ক্ষমতাসীনরা। আর বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না এলে এই সরকারের উন্নয়নচিত্র প্রচারে বেশি গুরুত্ব পাবে। এই দুটি দিক সামনে রেখেই গণসংযোগ চলবে দলটির। তবে নভেম্বরে চূড়ান্ত হবে আওয়ামী লীগের পুরো নির্বাচনী পরিকল্পনা।
বিএনপি ও তাদের সঙ্গীরা সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন মোকাবিলায় রাজপথে ব্যস্ত। এ কারণে আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের সঙ্গে ‘উন্নয়ন’ যুক্ত করে সমাবেশগুলো করছে, যাতে নির্বাচনী আমেজও তৈরি হয়। কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের তিন মাস আগেই এলাকায় গণসংযোগ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ‘আত্মপ্রচারের’ চেয়ে সরকারের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং বিএনপি আমলের নেতিবাচক দিকগুলো বেশি প্রচার করতে বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য বলেছেন, চলতি সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করবে। যদিও নির্বাচন কমিশন বলেছে, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তারা তফসিল ঘোষণা করতে চায়। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে জনগণের মধ্যে যেন নেতিবাচক মনোভাব না থাকে সেজন্য নির্বাচনের আগে পাঁচটি বিষয়ে আওয়ামী লীগ মনোযোগ দেবে। এর মধ্যে রয়েছে- দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা, দলে শুদ্ধি অভিযান, প্রশাসনে নজরদারি বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নজরদারির মধ্যে রাখা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্তত তিনজন সদস্য বলেছেন, সভা-সমাবেশ ছাড়া কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা তেমন কোনো কাজ করছেন না। পোস্টার-বিলবোর্ড, তোরণ তৈরি আর ফেসবুকে প্রচার চালাচ্ছেন তারা। এসব প্রচারে নিজেকে জাহির করতেই ব্যস্ত সবাই। সরকারের উন্নয়ন খুব একটা প্রচারে আসছে না। এতে আত্মপ্রচার হলেও দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেই কারণে চলতি সেপ্টেম্বর মাস থেকেই গত ১৫ বছরে সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতি এবং আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রচারে নামার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া অক্টোবর মাস থেকে নির্বাচনকেন্দ্রিক জনসভাও শুরু করবে দলটি। সবশেষ শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় নেতাদের নির্বাচন প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন দলীয় প্রধান।
ওই সভায় উপস্থিত সূত্র জানায়, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা তাদের বলেছেন,পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং একইসঙ্গে চ্যালেঞ্জিংও বটে। এখন থেকেই প্রস্তুতি ত্বরান্বিত করতে হবে। সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতি তুলে ধরে দেশের জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে। নির্বাচনী প্রচারে সবাইকে মনোযোগ দিতে হবে, যাকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে কাজ করতে হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আমাদের গণসংযোগ এরই মধ্যে পুরোদমে শুরু হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনের সময় সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দিচ্ছেন। শান্তি সমাবেশে উন্নয়ন যুক্ত হয়েছে। সমাবেশের সংখ্যাও আগের চেয়ে বেড়েছে। নির্বাচনী কার্যক্রমও গতি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সফর শেষে দেশে আসার পর জনসভা আরো বাড়বে।’
এর আগে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে দলটির সম্পাদকম-লীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের একটি যৌথসভা হয়। সেখানে শোকের মাস আগস্ট শেষ হলে সেপ্টেম্বর থেকেই গণসংযোগে নামার নির্দেশনা দেওয়া হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সেই নির্দেশ দেন।
উপনির্বাচনগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, এক একটি আসনে ১৫-২০ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী ফরম সংগ্রহ করেছেন। কোথাও এই সংখ্যা ২৫-৩০এ গিয়ে ঠেকেছে। তারা যদি এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ করতেন, তাহলে মাঠের চিত্র ভিন্ন দেখা দেখা যেত। এ বিষয়টি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে এরইমধ্যে অবহিত করা হয়েছে। হয়তো শিগগিরই এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আসতে পারে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমরা নির্বাচনী প্রচার কাজেই রয়েছি। আর বিএনপি নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে যাচ্ছে। সে কারণে শান্তি সমাবেশগুলো এখন ‘উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশ’ নামে পালন করা হচ্ছে। এতে সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে জনগণকে আস্থায় আনার চেষ্টা চলছে। তবে তফসিল ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসায় সেপ্টেম্বর মাস থেকে গণসংযোগ বাড়ানো হবে। তফসিল ঘোষণার পর পুরোদমে চলবে এই কার্যক্রম।
"