বদরুল আলম মজুমদার

  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

তৃণমূল বিএনপির তির বিএনপির দিকেই

বিএনপির শতাধিক নেতাকে ভাগিয়ে নেওয়ার টার্গেট * বিএনপিকে ভাঙা ও দুর্বল করার অপচেষ্টা বহুবার হয়েছে * ব্যর্থ চেষ্টা দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া সম্ভব হবে না

দেশে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নামের সঙ্গে মিল রেখে গঠিত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল তৃণমূল বিএনপি। বিএনপি নামের আগে তৃণমূল শব্দটি যোগ করে গঠিত নতুন এই দলটির নেতৃত্বে আছেন বিএনপির সাবেক নেতারাই।

১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় কংগ্রেস ভেঙে প্রতিষ্ঠিত হয় তৃণমূল কংগ্রেস। ঠিক সেই আদলে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিকে ভেঙে তৃণমূল বিএনপি গঠন করেন এর উদ্যোক্তারা। তাদের লক্ষ্য, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে নেতা বাগিয়ে এনে দলকে বড় করা। দলটির নবনির্বাচিত মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকারের বক্তব্যে এ আভাস মিলেছে।

বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে বলেন, নতুন দলের নামে নেতা কেনাবেচার হাট বসানো হয়েছে। বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়া, পদ পদবিতে না থাকা বা নির্বাচনমুখী কিছু নেতাকে টার্গেট করে কাজ করছে তৃণমূল বিএনপি। তবে তৃণমূল বিএনপির নেতারা বলেছেন, নির্বাচনের আগে বিএনপির প্রথম শ্রেণির শতাধিক নেতা তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নতুন একটি দল গঠন হওয়ায় বর্তমানে রাজপথে আন্দোলনে থাকা বিএনপি নেতাদের মধ্যে সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে দলের নিষ্ক্রীয় নেতাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বর্তমান আন্দোলনে সক্রিয় অনেক নেতাও আছেন সন্দেহের তালিকায়। বিএনপির সাবেক দুই প্রভাবশালী নেতা ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামে প্রায় নতুন এক রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে শীর্ষ পদ পাওয়ার ঘটনাকে আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিকে বিপদে ফেলার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই দলটি বিভ্রান্তি ও সন্দেহ বাড়াবে।

সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে তৎপর বিএনপি যখন বলছে, বর্তমান ব্যবস্থায় বা দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না, তখন প্রথম কাউন্সিল অধিবেশনেই মঙ্গলবার তৃণমূল বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে, আগামী নির্বাচনে দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে তাদের প্রার্থী থাকবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের মতে, এই ধরনের রাজনৈতিক প্রচেষ্টার পেছনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাত থাকতে পারে। প্রসঙ্গত, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত কয়েক মাস ধরে বারবার বলে আসছেন যে, সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে তার দল ভাঙার নানামুখী চেষ্টা চলছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক দল নির্দিষ্ট নিয়মে গঠিত হয়। এখানে আওয়ামী লীগের কোনো ভূমিকা নেই।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরীর মতে, তৃণমূল বিএনপিতে সাবেক বিএনপি নেতাদের যোগদান পরিষ্কারভাবেই ‘বিএনপিকে বিপদে ফেলার’ চেষ্টা। এ রকম চেষ্টা এর আগেও বিভিন্ন সময় আমরা দেখেছি। তবে এসব করে মানুষকে বোকা বানানো কঠিন। তিনি বলেন, ‘সাবেক বিএনপি নেতাদের ‘ভাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা’ সামনের দিনগুলোয়ও অব্যাহত থাকবে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এই রাজনৈতিক দলটির নামই আরেকটি দলের নামের সঙ্গে একটি শব্দ যোগ করে তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে এটা যেমন বিভ্রান্তির উদ্রেক করবে, তেমনি এটি নিয়ে সন্দেহও বাড়বে।’

এমন উদ্যোগের পেছনে কী কারণ থাকতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা। যদি এসব দল নির্বাচনে যায় তাহলে তারা বলতে পারবে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। এটা একটা প্রহসনের চেষ্টা বলে আমার কাছে মনে হয়।’

নতুন রাজনৈতিক দলে বিএনপির সাবেক দুই নেতার যুক্ত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যে নেতাদের বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বা যারা বিএনপিতে নেই, তারা কী করবে এটা নিয়ে বিএনপির মাথা ব্যথা নেই। বিএনপিকে ভাঙাও দুর্বল করে দেওয়ার অপচেষ্টা গত কয়েক বছরে বহুবার হয়েছে। এসব ব্যর্থ চেষ্টা দিয়ে আগামী নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়া সম্ভব হবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close