ঢাবি প্রতিনিধি
ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হল ভবনের ৬ তলা থেকে পড়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এটা আত্মহত্যা নাকি দুর্ঘটনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য। নিহত শিক্ষার্থীর নাম কাজী ফিরোজ। তিনি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ২০৩ নম্বর রুমের ২০১৯-২০ সেশনের আবাসিক ছাত্র ও চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি গোপালগঞ্জে।
বিজয় একাত্তর হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বিজয় একাত্তর হলের যমুনা ব্লকে রাত পৌনে ১টার দিকে হঠাৎ করে কিছু পড়ার শব্দ শুনতে পান তারা। পরে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন জানান, খবর শুনেই হাসপাতালে এসেছি। নিহতের বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা আসলে হাসপাতালের অন্যান্য কার্যক্রম সম্পাদন করব। এদিকে কাজী ফিরোজের পরিচিত জিয়া হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, তিনি প্রায়ই মনমরা থাকতেন। কাজী ফিরোজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও বিভিন্ন ধরনের লেখা রয়েছে। তার মধ্যে গত ৬ সেপ্টেম্বর স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘মানুষ যেভাবে বাঁচতে চায়, তাকে সেভাবে বাঁচতে দেওয়া হোক। সবাই বাঁচুক, আপন প্রাণে, আপন চাওয়াতে মানুষ বাঁচুক’।
একইদিকে, ফিরোজ আত্মহত্যা করেছেন নাকি এটি কোনো দুর্ঘটনা, তা এখনো জানা যায়নি। এ মৃত্যু ঘিরে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ফিরোজের কক্ষে তার পড়ার টেবিলের ওপর রাখা একটি প্যাডে ফিরোজের কিছু হতাশার কথা লেখা রয়েছে। তবে এই লেখা ফিরোজের হাতের লেখা নয় বলে দাবি করেছেন ফিরোজের বড় ভাই। তিনি জানান, তার এবং ফিরোজের হাতের লেখা দেখতে প্রায় একই। ফিরোজের মৃত্যুর পর রাত ২টা ৪৯ মিনিটে তার কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, ফিরোজের টেবিলের ওপর মুরগির মাংসসহ ভাত রাখা রয়েছে।
এই খাবার বন্ধুরা তার জন্য এনে রেখেছিলেন। তবে পুরোটা না খেয়েই রুম থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন ফিরোজ। এর কিছুক্ষণ পর ফিরোজের পড়ে যাওয়ার খবর পান বন্ধুরা।
ফিরোজের টেবিলে চোখ পড়তেই দেখা যায়, সেখানে একটি প্যাড খাতা অর্ধ খোলা অবস্থায় রাখা। তার ওপর দুটি সিগারেটের প্যাকেট। সেই প্যাকেট দুটি সরিয়ে দেখা যায়, সেখানে পৃষ্ঠাভর্তি লেখা।
পৃষ্ঠার ওপরে তারিখের জায়গায় লেখা ছিল ১/০৯/২৩। আর এর নিচে লিখা আছে, ‘মানুষ বাঁচে তার সম্মানে। আজ মানুষের সামনে আমার যেহেতু সম্মান নাই। এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আমার কোনো অধিকার নাই। আমারে মৃত্যুর দায়ভার একান্ত আমার। সরি মা! বাড়ি থেকে তোমাকে দিয়ে আসা কথা রাখতে পারলাম না। আমার জীবন নিয়ে হতাশ।’ এই লেখার নিচে মাঝ বরাবর লেখা, ‘ফিরোজ।’ এর নিচে লিখা হয়েছে ‘রাত : ১১টা ৩।’
পৃষ্ঠার বাকি অর্ধেকে আরো লেখা আছে, ‘আমার ওয়ালেটের কার্ডে কিছু টাকা আছে। বন্ধুদের কাছে অনুরোধ রইলো মায়ের হাতে দিতে। কার্ডের পাসওয়ার্ড ৮০৭৯, আর ফোনের লক খুলে দিয়ে গেলাম। আমার লাশের পোস্টমর্টেম না করে যেন বড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কোনোরূপ আইনি ঝামেলায় কাউকে যেন জড়ানো না হয়। সবাই বাঁচুক। শুধু শুধু পৃথিবীর অক্সিজেন আর নষ্ট করতে চাই না।’
এই লেখার নিচে আবারও লেখা রয়েছে, ‘ফিরোজ।’ এর নিচে লেখা হয়েছে, ‘রাত ১১টা ৫।’
কাজী ফিরোজের বন্ধুরা জানিয়েছেন, এই লেখা ফিরোজের হাতের লেখার মতোই তাদের মনে হচ্ছে। তবে তার বড় ভাই জানিয়েছেন, তার এবং ফিরোজের লেখা প্রায় একই। প্যাড খাতায় থাকা এই লেখাটা ফিরোজের হাতের লেখা নয়। এরপর তারা ফিরোজের মরদেহের সুরতহাল করার সিদ্ধান্ত নেন।
"