প্র্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার পুনর্গঠন চাই : প্রধানমন্ত্রী

* জাতিসংঘে ৫ প্রস্তাব * যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্মাননা পেলেন কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলের জন্য * আইএইএ ডিজির সাক্ষাৎ, পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে গুরুত্বারোপ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট ঠেকাতে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, বৈশ্বিক ক্রেডিট রেটিং সিস্টেম অবশ্যই পর্যালোচনা করা উচিত। বর্তমান রেটিং সিস্টেম অনেক নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশের জন্য তহবিলের সুবিধাকে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) স্পেন এবং ইউরোপীয় কাউন্সিল আয়োজিত ‘টুওয়ার্ডস এ ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল আর্কিটেকচার’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন।

এই বৈঠক আহ্বান করায় শেখ হাসিনা স্পেনের প্রধানমন্ত্রী ও ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতিকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) থিমেটিক অ্যাম্বাসেডর সায়মা ওয়াজেদ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী ক্রেডিট রেটিং সিস্টেম পর্যালোচনা করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এটি বর্তমানে অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের জন্য তহবিলের সুবিধা সীমিত করেছে। ভোটাধিকার, কোটা এবং বহু পক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবিএস) এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (আইএফআইএস) প্রতিনিধিত্বের সীমা তাদের দর কষাকষির ক্ষমতাকেও ক্ষুণ্ণ করে। আমরা প্রায়ই আন্তর্জাতিক পাবলিক ফাইন্যান্সগুলোকে ব্যয়বহুল এবং নাগালের বাইরে দেখতে পাই। ঋণের ঝামেলা এড়াতে আমরা উচ্চণ্ডসুদের ঋণ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি। বাংলাদেশ কখনই এর ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়নি এবং আমরা সেই রেকর্ড বজায় রাখার আশা করি।

আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল-আর্কিটেকচারের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গ্লোবাল সাউথের প্রতিনিধিত্ব করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশের উন্নয়ন বিবরণী দেখায় যে, আমরা আমাদের অংশ করতে পারি। আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার জন্য আমাদের প্রত্যাশার প্রতি সায় দেওয়ার সময় এসেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল-আর্কিটেকচারের জরুরি সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু সংস্কারের প্রকৃতি ও পরিধির বিষয়ে এগ্রিমেন্টের ক্ষেত্রে এখনো সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ।

এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেন। প্রথম প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, এমডিবি, আইএফআই এবং বেসরকারি ঋণদাতা সংস্থাগুলোকে তাদের অগ্রাধিকারগুলো পুনরায় সাজাতে হবে এবং এসডিজি বাস্তবায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা মোকাবিলায় অতিরিক্ত তহবিল সংগ্রহ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত এবং তৃতীয় দফা সম্পর্কে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য স্বল্প ব্যয়ে, রেয়াতি হারে তহবিলের পর্যাপ্ততা প্রয়োজন এবং পছন্দসই উচ্চমানের বিপুল পরিমাণে অনুদান এবং সমস্ত ঋণদানের উপকরণগুলোতে দুর্যোগের ধারা থাকতে হবে যাতে দুর্বল দেশগুলো সংকটকালের ধাক্কা সামলাতে পারে।

চতুর্থ দফা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ঋণদাতাদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে ন্যায্য ও কার্যকর ঋণ হিসেবে ত্রাণ ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

পঞ্চম এবং শেষ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটার পরিবর্তে এসডিআর ঋণের সীমা প্রয়োজন এবং সীমাবদ্ধতার ভিত্তিতে সহজ ঋণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হওয়া উচিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে তার সুষ্ঠু সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য সুনাম কুড়িয়েছে। মহামারির ঠিক আগে আমাদের অর্থনীতি ৮.১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। স্বাস্থ্য, জীবনযাত্রার ব্যয় এবং জলবায়ু সংকট আমাদের অর্থনীতিকে চাপের মধ্যে ফেলেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশ আইএমএফের সঙ্গে ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা করেছে। আমরা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, লেনদেনে ভারসাম্য এবং আমাদের উন্নয়ন ব্যয় বজায় রাখার চেষ্টা করছি। আমাদের দারিদ্র্যের হার ৪১.৯ শতাংশ থেকে ১৮.৭ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের মাত্রা ২৫.৫ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছি।

এদিকে, জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল চালু করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রাচীন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্রাউন ইউনিভার্সিটি বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়ারেন অ্যালপার্ট মেডিকেল স্কুল মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ‘শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক স্বীকৃতির জন্য অভিনন্দন জানিয়ে একটি সম্মাননা স্মারক প্রদান করে। ইনস্টিটিউটের মেডিসিন অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেসের ডিন ডা. মুকেশ কে জৈন এদিন দ্য লোটে নিউইয়র্ক হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই সম্মাননাপত্র হস্তান্তর করেন।

ব্রাউন ইউনিভার্সিটি গবেষণা ও শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়ে তোলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি এ লক্ষ্যে একটি চুক্তি সইয়ের ইচ্ছাও প্রকাশ করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব মো. নুর এলাহী মিনা সাংবাদিকদের বলেন, ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়ারেন অ্যালপার্ট মেডিকেল স্কুল কমিউনিটি ক্লিনিকের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃতি পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেছে।

সম্মাননাটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘জাতিসংঘ কর্তৃক ‘শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’-এর স্বীকৃতি পাওয়ায় বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন।’

এতে আরো বলা হয়, ‘কমিউনিটি-ভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার একটি সফল মডেল: প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা প্রচারের মাধ্যমে সর্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের জন্য একটি অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি।’

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ডা. জৈন জনস্বাস্থ্য ও গবেষণাক্ষেত্রে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য বাংলাদেশ-ব্রাউন বায়োমেডিকেল রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন ইনিশিয়েটিভকে একটি সম্ভাব্য প্ল্যাটফরম হিসেবে বিবেচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং এর প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেন।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশে চিকিৎসা ও ক্লিনিক্যাল গবেষণার উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমরা সব সময় গবেষণাকে গুরুত্ব দিই। এটি চিকিৎসাবিজ্ঞান গবেষণায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

ব্রাউন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে জরায়ু মুখের ক্যান্সার পরীক্ষা করে আসছে।

ডা. জৈন বলেন, তারা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ইলেকট্রনিক ডেটা ম্যানেজমেন্ট চালু করতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে, যাতে ক্লিনিকগুলো থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারী রোগীদের রেকর্ড রাখা যায়।

একই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স?ঙ্গে বৈঠক ক?রে?ন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। একই সঙ্গে তিনি পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ও পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধে বাংলাদেশের অবিচল অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে তার প্রথম মেয়াদে পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির কথা স্মরণ করেন। তিনি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এবং সাভারে পারমাণবিক গবেষণা চুল্লি সুবিধার জন্য আইএইএ’র প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানান।

আইএইএর মহাপরিচালক ‘অ্যাটম ফর ফুড’ উদ্যোগে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (বিনা) কর্তৃক উদ্ভাবিত চাপ সহনশীল এবং উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবনে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার চিত্র তুলে ধরেন। খবর বাসস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close