নিজস্ব প্রতিবেদক
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আগুন
ভোররাতেই কেন আগুন প্রশ্ন ব্যবসায়ী নেতার

রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ভয়াবহ আগুনে সেখানকার ২১৭টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বুধবার দিবাগত রাত ৩টার পরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে এলেও রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুরোপুরি নেভেনি বলে জানায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। অপরদিকে, একজন ব্যবসায়ী নেতা প্রশ্ন করেছেন, ভোররাতে কেন আগুন লাগে তা খতিয়ে দেখতে হবে। এর আগে বঙ্গবাজার ও পুরান ঢাকার নিমতলী ও চুরিহাট্টায় গভীর রাতেই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়, রাত ৩টা ৪৩ মিনিটে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসেন জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনো নির্বাপনের কাজ চলমান রয়েছে। যেখানে আগুনের কুণ্ডলী পাওয়া যাচ্ছে সেসব জায়গা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিসের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে যে জায়গায় আগুন লেগেছে সেখানে দাহ্য পদার্থের সংখ্যা বেশি। এ কারণে আগুন নির্বাপনে সময় লাগছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অগ্নিনির্বাপনী সাহায্যকারী দল। উদ্ধার ও সহায়তায় পুলিশ ও বিজিবিও মোতায়েন করা হয়।
ওই মার্কেটে ফুটপাত ও আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ দোকান ছিল বলে স্বীকার করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা। তিনি বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা করা হচ্ছে। আগুন যেন আমাদের ক্ষতি করতে না পারে সেই লক্ষ্যে আমরা সবাই মিলে পরিকল্পনা নেব। আমরা নিরাপদ থাকতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সার্বিক বিষয়ে ইনস্ট্রাকশন দেওয়া হয়েছে আগুন লাগার পর থেকে।
তিনি বলেন, অবৈধ দোকানগুলো ছিল ফুটপাতে আর আমাদের বরাদ্দ যেসব দোকান ছিল সেগুলো ভেতরে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে ভেতরে পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল মার্কেট কর্তৃপক্ষকে। এখানে বাজার সমিতি ছিল, তাদের আমরা নির্দেশনা দিয়েছি বারবার। নির্দেশনা না মানার কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান প্রধান নির্বাহী সেলিম রেজা।
ঢাকা মহানগর দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আরিফুর রহমান বলেন, ভোররাতে আগুনের ঘটনা ঘটে আর এখানে সিসিটিভি রয়েছে। পরে পাব এখন তো আর পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা প্রত্যেকটি জায়গায় দেখেছি সিটি করপোরেশনের মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে ভোররাতে আগুন লাগে। কেন ভোররাতে আগুন লাগছে এ বিষয়টি আমাদের ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরিফুর রহমান বলেন, এখানে প্রায় ৪০০ দোকান রয়েছে। আমাদের আরজি হচ্ছে একটি সুস্থ তদন্তের মাধ্যমে যে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এরা যেন তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে। এজন্য সরকার তাদের পাশে এসে যাতে দাঁড়ায়, আমরা সেটাই চাই। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটটি একটি জনপ্রিয় মার্কেট। এখানে ব্যবসায়ীরা স্বল্প লাভে পণ্য বিক্রি করে থাকেন। কেন আগুনটা লাগছে এ বিষয়ে প্রথমে আমাদের তদন্ত করতে হবে। প্রায় ৩০০ কোটি টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
এদিকে, ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগুন কেউ ধরিয়ে দিয়েছে, নাকি শর্টসার্কিট বা কোনো সিগারেট থেকে সূত্রপাত হয়েছে এসব বিষয় খতিয়ে দেখছে ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেনটেইন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। তবে ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই মার্কেটের চার ভাগের তিন ভাগে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এই আগুন যেন মার্কেট থেকে আশপাশের ভবনে ছড়াতে না পারে সে বিষয়টি নজরে রেখে আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করি এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আমাদের বেশ সময় লেগে যায়।
ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটটি আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা ছিল। অতিরিক্ত ভোল্টেজের বিদ্যুৎ সেখানে ব্যবহার হয়ে আসছিল। অতিরিক্ত বিদ্যুতের কারণে তার লোড না নেওয়ায় বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের সৃষ্টি হয়েছে, নাকি কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
তাজুল ইসলাম বলেন, কোন দোকান থেকে লেগেছে তা তদন্তসাপেক্ষে বলা সম্ভব। তবে একপাশে বেকারির দোকান ছিল। সেখান থেকে আগুনে সূত্রপাত হতে পারে।
তিনি বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে উৎসাহী জনতার ভিড় অনেকটাই কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। অনেকেই সহায়তা করতে চান, তবে এটা আমাদের কাছে সমস্যা মনে হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, ৩০০ থেকে ৪০০ কিলোওয়াট ধারণক্ষমতা থাকলেও অতিরিক্ত লোড দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। নির্ধারিত লোড থাকার পর যদি অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয় তাহলে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের একটা শঙ্কা থেকে যায়।
"