কক্সবাজার প্রতিনিধি
মিয়ানমারে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা
ক্যাম্পে ক্যাম্পে সমাবেশ
মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরার দাবিতে কক্সবাজারের ক্যাম্পে ক্যাম্পে সমাবেশ করেছেন রোহিঙ্গারা। এ সময় তারা প্রত্যাবর্তনবিরোধী ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও অভিযোগ করে। উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার অন্তত ১৩টি শরণার্থী আশ্রয়শিবিরে বৃহস্পতিবার (৮ জুন) সকাল ১০টা থেকে একযোগে রোহিঙ্গারা মানববন্ধন ও সমাবেশে অংশ নেন। আশপাশের অনেক ক্যাম্প থেকে এসব সমাবেশে যোগ দেন তারা। প্রত্যাবর্তন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনা ও দুই দেশের প্রতিনিধিদের সফর ও নানান পদক্ষেপের মধ্যে রোহিঙ্গারা এই সমাবেশ করলেন।
সমাবেশে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতারা বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়ন, হত্যা, ধর্ষণের মুখে প্রাণভয়ে তারা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেন। সে সময় বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছে। যার জন্য রোহিঙ্গারা এ দেশের প্রতি কৃতজ্ঞ।
এদিকে, সমাবেশে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য পুলিশের সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন জানিয়ে টেকনাফের ১৬-এপিবিএনের পুলিশ সুপার মো. জামাল পাশা বলেন, ‘তিন ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা দ্রুত প্রত্যাবর্তনের দাবি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করেছে। সেটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সমাবেশ উপলক্ষে টেকনাফের লেদা, জাদিমুড়া শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সকাল থেকে লোকজন জড়ো হতে শুরু করে। সমাবেশে পুরুষদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারী, শিশুরাও যোগ দেয়। এ ছাড়া কুতুপালং, বালুখালী, লম্বাশিয়ায়ও এ ধরনের সমাবেশ হয়েছে। সেখানে পোস্টার, প্ল্যাকার্ডে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার দাবি তোলে। সমাবেশে হাজারো রোহিঙ্গা অংশগ্রহণ করে বলে দাবি রোহিঙ্গা নেতাদের। রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায় ও প্রত্যাবাসনের দাবিতে সোচ্চার শীর্ষ রোহিঙ্গা নেতারা সেখানে বক্তব্য দেন।
দ্রুত স্বদেশে (মিয়ানমারে) ফিরে যেতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা দাবি করে টেকনাফের জাদিমুড়া শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা বজলুল রহমান বলেন, ‘আমরা আর বাংলাদেশে থাকতে চাই না। দ্রুত নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই। আমরা নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, চলাচলের স্বাধীনতাসহ নিজ গ্রামে ভিটেমাটি ফেরত দিলে এ মুহূর্তে চলে যাব মিয়ানমারে।’
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (উপসচিব) খালিদ হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গারা দ্রুত প্রত্যাবাসন দাবি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছে। সেখানে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া দাবি জানিয়ে রোহিঙ্গারা কয়েকটি দাবি তোলে।’
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘আমরা আর শরণার্থী জীবন চাই না। সামনের দিনগুলোতে আমরাও আমাদের জন্মভূমি আরাকানে জীবনযাপন করতে চাই। বিশ্ব সম্প্রদায় আমাদের দেশে ফেরার ব্যাপারে যেন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়।’
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট দেশটির সেনাবাহিনী রাখাইন অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। তখন সীমান্ত অতিক্রম করে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকেই এখানে ছিল আরো কয়েক লাখ নিপীড়িত রোহিঙ্গা।
গত ৫ মে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ দেখতে বাংলাদেশ থেকে ২০ জন রোহিঙ্গাসহ ২৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল মিয়ানমারে যায়। ফিরে এসে রোহিঙ্গারা অসন্তোষ প্রকাশ করলেও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা প্রত্যাবাসনের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ২৫ মে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে মিয়ানমারের আরেকটি প্রতিনিধিদল টেকনাফে আসে। প্রত্যাবাসনের তালিকা যাচাই-বাছাই করে ওইদিন বিকেলেই তারা মিয়ানমারে ফিরে যান।
পরে কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গারা রাখাইনে কোনো ক্যাম্পে নয় নিজেদের ভিটেমাটিতেই ফেরত যেতে চায়, মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের কাছে এমন দাবি উত্থাপন করেছে তারা।
"