নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ জুন, ২০২৩

ফেলে যাওয়া ব্যাগের সূত্র ধরেই এগিয়েছে পুলিশ

ট্রেনযাত্রী মেছের আলী নামের ব্যক্তিটি ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি তিনি কোথায় পা দিতে চলেছেন। রাজধানী ঢাকায় বিমানবন্দর রেলস্টেশনে তার পরিচয় হয় এক ব্যক্তির সঙ্গে। মেছের আলীর সঙ্গে খাতির জমিয়ে তোলেন ওই ব্যক্তি। সেই খাতিরই মেছের আলীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। তার মৃতদেহ পাওয়া যায় খিলক্ষেতের বড়ুরায় আসিয়ান হাউজিং প্রকল্পের বালুর চরে।

পুলিশ গত ২৩ মে মেছের আলীর মরদেহ উদ্ধার করে। অজ্ঞাত কেউ একজন তাকে হত্যা করে খিলক্ষেত থানার অন্তর্গত আশিয়ান হাউজিং প্রজেক্টের বালুর চরে ফেলে যায়।

একটি ব্যাগের সূত্র ধরে দুই সপ্তাহের প্রচেষ্টায় সেই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রমজান আলী নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার মাওনা এলাকা থেকে রবিবার (৪ জুন) রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম জানান, রমজান আলী টাকা লুটের উদ্দেশে মেছের আলীকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে খিলক্ষেতের বড়ুরায় আসিয়ান হাউজিং প্রজেক্টের ভেতর ফেলে যান। সেখানেই মেছের আলীর মৃত্যু হয়। ব্যাগের সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘটন সম্পর্কে ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেছেন, ‘গত ২৩ মে বিকালে মেছের আলীর মৃতদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। মামলার তদন্তকালে ঘটনাস্থলে একটি ব্যাগ পাওয়া যায়। সেই ব্যাগে লোহার কাঁচি, কম্বল, কিছু নতুন-পুরোনো কাপড় ও মিনা নামের এক নারীর জন্ম নিবন্ধন ও টিকা কার্ড পাওয়া যায়।’

‘প্রাপ্তব্যাগ ও ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। জন্ম সনদের পরিপ্রেক্ষিতে মিনাকে ও তার স্বামী শাহাবুদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এই জিজ্ঞাসাবাদে শাহাবুদ্দিন জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতরের কয়েক দিন আগে তিনি তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় যাওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে যান। সেখানে রমজান আলী নামের এক বয়স্ক লোকের সঙ্গে পরিচয় হয়। রমজান আলী তাকে একসঙ্গে নেত্রকোনায় যাওয়ার কথা বলেন। ট্রেনের জন্য স্টেশনে অপেক্ষা না করে কারওয়ানবাজার থেকে বাসে করে যাওয়ার জন্য প্রভাবিত করেন রমজান আলী। শাহাবুদ্দিন সরল বিশ্বাসে রমজান আলীর সঙ্গে কারওয়ানবাজার যান।’

শাহাবুদ্দিন আরো বলেছেন, ‘কারওয়ানবাজার এলাকায় গিয়ে শাহাবুদ্দিনকে চা পান করান রমজান আলী। চা পানের পর শাহাবুদ্দিনের ব্যাগ ও টাকা তার কাছে রাখার জন্য বলেন রমজান। শাহাবুদ্দিন ৪০০ টাকা ও তার ব্যাগটি রমজান আলীর কাছে দেন। রমজান আলীর মোবাইল ফোন থেকে শাহাবুদ্দিন তার স্ত্রীকে জানান, সে রমজান আলীর সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে, সে একই এলাকায় যাবে। শাহাবুদ্দিন চা পান করার ফলে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে রমজান আলী ব্যাগ ও টাকা নিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলে প্রাপ্ত ব্যাগটি শাহাবুদ্দিনকে দেখানো হলে সে তার ব্যাগটি শনাক্ত করে। এরপরই রমজান আলীকে শনাক্ত করা হয় এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

অপরদিকে মেছের আলীর সঙ্গে রমজান আলীর পরিচয় ও তার কাছ থেকে টাকা লুটের ব্যাপারে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘গত ২০ মে মেছের আলী বিমানবন্দর রেলস্টেশনে যান। সেখানে রমজান আলীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর অটো রিকশাযোগে রমজান ও মেছের আলী বড়ুরা রেলগেট এলাকায় আসেন। তখন রমজান আলীর পেছনে একটি ব্যাগ ঝোলানো ছিল। ওই ব্যাগের ভেতরই শাহাবুদ্দিনের কাছ থেকে নেওয়া ব্যাগটি ছিল। মেছের আলীকে নিয়ে রমজান আলী রেলগেটের সামনের এক দোকানে চা পান করেন। চা পান করার সময় মেছের আলীর কাছে ৪ হাজার টাকা দেখতে পান রমজান। তা হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশে ওই সময় তিনি কৌশলে মেছের আলীর চায়ের মধ্যে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে দেন।’

ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘নিহত মেছের আলীর কাছে থাকা ৪ হাজার টাকা নেওয়াই রমজান আলীর মূল উদ্দেশ্য ছিল। মেছের আলী ও রমজান আলী চা পান করার পর বড়ুরায় বোয়ালিয়া খাল সংলগ্ন আশিয়ান হাউজিং প্রজেক্টের বালুর চরে যান। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেছের আলী অচেতন হয়ে পড়লে রমজান আলী মেছের আলীকে একটু দূরে বড় ঘাসযুক্ত জায়গায় রেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। রমজান আলী মনের অজান্তে ব্যাগটি ঘটনাস্থলে রেখে চলে যান। এই ব্যাগের সূত্র ধরেই অপরাধীকে শনাক্ত করা হয়।’

খিলক্ষেত থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার রমজান আলীকে আদালতে হাজির করা হয়। তিনি দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close