সংসদ প্রতিবেদক

  ০৭ জুন, ২০২৩

সংসদে তোপের মুখে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

জ্বালানি খাতের অব্যবস্থাপনা নিয়ে সংসদে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ খাতে ৩২ কোটি ৪৬ লাখ ৪ হাজার টাকা সম্পূরক বাজেট পাশের সময় তিনি তোপের মুখে পড়েন। মঙ্গলবার (৬ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, গণফেরাম ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা বর্তমান বিদ্যুতের নাজুক ব্যবস্থাপনায় তীব্র সমালোচনা করেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদে সভাপতিত্ব করছিলেন। প্রধানমন্ত্রীরও উপস্থিত ছিলেন অধিবেশনে।

সম্পূরক বাজেটের ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, ‘অসময়ে আমরা ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ফেলেছি, অথচ আমাদের লাগে ১৪ হাজার মেগাওয়াট, বাকিটা নষ্ট হয়েছে। আজকে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৭ হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি ৩২ কোটি ৪৬ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত চেয়েছেন। আর আপনার বাকি আছে বিভিন্ন কলকারখানার কাছে ২ হাজার কোটি টাকা। আপনাকে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানির অনেকগুলো বিল পরিশোধ করতে হবে; যা ৭১ বিলিয়র ডলার। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথা থেকে আসবে, তা ফখরুল ইমাম জানতে চান।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বিদ্যুৎ না থাকলে শিল্পায়ন কমে যাবে, কৃষি উৎপাদনে ধস নামবে। এক সময় দেশের প্রত্যেকটা গ্রামেগঞ্জে বিদ্যুৎ ছিল। কিন্তু এই গরমে হঠাৎ কেন বিদ্যুৎ চলে গেল। এরজন্য আগে থেকেই কয়লা, ডিজেল আমদানি করা উচিৎ ছিল। আমি মনে করি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের নিজেদের মধ্যে সমন্বয় নেই, যার ফলে আজ এই অব্যবস্থা। প্রচণ্ড গরমে আমরা মনে করি অতিদ্রুত আমাদের কয়লা আমদানি করতে হতে হবে, যাতে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো দ্রুত চালু করা যায়।

তিনি বলেন, সচিবালয়ে সচিবদের বার্থরুমেও এসি আছে, সেখানে সেন্ট্রাল এসি চালিয়ে রেখেছে, তাদের এসি আবার হাই ভোল্টেজে, তা একবার চললে আর বন্ধ হয় না। অথচ গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। শহরের কিছু ধনীক শ্রেণির জন্য গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎ পাবে না, তা হতে দেওয়া যায় না। তিনি আওয়ামী লীগের এমপি হাবিবুর রহমানের বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের সমালোচনা করে বলেন, বিদ্যুত তো মানুষ পাচ্ছেই না। তার মধ্যে উনি কি করে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তোলেন?

রুস্তম আলী ফরাজী প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আপনি কেন বলেন না কোনো সময় বিদ্যুৎ থাকবে না, কোন সময় থাকবে। কেউ কিছুই জানে না। একেবারে নো ম্যানস ল্যা-ের মতো অবস্থা। কেন বিদ্যুৎ নেই, কখন থাকবে না, তা জনগণকে জানান। এখানে কিন্তু অনেক ঘষেটি বেগম থাকতে পারে, তারা কিন্তু আপনাদের সুনাম নষ্ট করতে পারে, এটা থেকে সাবধান।

জাপার আরেক পেসিডিয়াম সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, ডলার সংকটে এলসি খোলা যাচ্ছে না। যার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা, তেল আনা যাচ্ছে না। অথচ গত সোমবার এই সংসদে সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ভোলায় নাকি গ্যাসকূপের ছড়াছড়ি, একেবারে হাবুডুবু খাওয়ার মতো অবস্থা, সারা পৃথিবীর দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের দিকে। তাহলে সরকার কেন গ্যাস অনুসন্ধান চালাচ্ছে না, তাহলে তো এ সংকট অনেক খানি কেটে যেত। এত সংকট দেখা দিত না। এখন যেভাবে বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে, তার ওপর আগামী ১০ বছরে গ্যাস একদম ফুরিয়ে যাবে, নতুন করে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

এ মাসেই বিদ্যুৎ সমস্যা কেটে যাবে : প্রতিউত্তরে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বেশিদিন আগের কথা না, মাত্র ১৪ বছর আগেও প্রায় ৬০ শতাংশ বাংলাদেশ অন্ধকারে ছিল। কোভিড আমাদের স্মরণ শক্তির ক্ষতি করেছে। আমরা খুব দ্রুত ভুলে যাই আগে ১৭ থেকে ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকতো না। সেখানে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করেছি। আমরা সঞ্চালয় লাইন করেছি। এক হাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। যখন আমরা ২৫ হাজার মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলি তখন প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার খরচের বিষয় ছিল। তার ওপর সঞ্চালন লাইন, ডিস্টিবিউশন লাইন ও জ্বালানি খরচও দিতে হয়। আমাদের প্রস্তুতি আছে ২০ থেকে ২২ হাজার মেগাওয়াটের। যেকোনো মুহূর্তে উৎপাদন করতে পারি। কিন্তু কোভিড পরবর্তিতে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধেও চ্যালেঞ্জ এসেছে, সারা বিশ্বে জ্বালানিসহ সব জিনিষপত্রের দাম বেড়ে গেছে অস্বাভাবিকভাবে। পাওয়া যাচ্ছে না গ্যাস ও তেল। বিশ্বের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম যে বেড়ে গেছে শুধু তাই নয়, তা পাব কি পাব না, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে দিনের বেলায় ১২ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করছি, রাতের বেলায় ১৫ হাজার। আমাদের ঘাটতি আছে রয়েছে ২ থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট। তিনি বলেন, এ বছর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ২৭ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে অর্থনৈতিক অবস্থা ও বৈশ্বিক অবস্থার কারণে আমরা সময়মত কয়লা আনতে পারেনি। তবে ১৫ থেকে ১৬ দিনের মধ্যে এসে যাবে। আবার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে। তিনি বলেন, প্রায় ৪০ লাখ অটোরিকশা মধ্যরাতে চার্জ দিতে ৩৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খেয়ে নিচ্ছে। আমরা তো বন্ধ করিনি। আশা করছি এ মাসেই বিদ্যুৎ সমস্যা কেটে যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close