নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৩ জুন, ২০২৩

বাজেট নিয়ে সিপিডির সংবাদ সম্মেলন

অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতিফলন নেই, সূচক উচ্চাকাঙ্ক্ষী

?আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আর্থিক কাঠামোকে ‘অলীক’ বলে আখ্যায়িত করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলেছে, বাজেটের আয় ও ব্যয় কাঠামো নির্ধারণের ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরের বাস্তবায়ন অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। কাঠামোগত এ দুর্বলতার কারণে বাজেটের বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

শুক্রবার (২ জুন) বেলা ১১টায় রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেকশোরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণে এ মতামত দিয়েছে সিপিডি। সংবাদ সম্মেলনে বাজেট বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সংস্থার সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমসহ সিপিডির গবেষকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সিপিডি বলেছে, সার্বিক অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হচ্ছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ- এসব বিবেচনায় যে ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল সেগুলো বিবেচনা করা হয়নি বাজেটে।

সংস্থাটি আরো বলেছে, সামষ্টিক অর্থনীতির অনুমিত প্রক্ষেপণের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। অর্থনৈতিক সংস্কারের কোনো প্রতিফলন নেই। বিভিন্ন সূচক উচ্চাকাক্সক্ষী। মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের তুলনায় ব্যাপকহারে কমে ৬ শতাংশে নেমে আসবে, যেখানে বিদায়ী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি উচ্চ ছিল। আসলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে কোনো পদক্ষেপ নেই। আগামীতে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যেতে পারে।

আইএমএফের শর্তের বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে প্রচ্ছন্ন আভাস রয়েছে। বিভিন্ন প্রস্তাবনায় আইএমএফের শর্ত পরিপালন করা হয়েছে। এ কারণে রাজস্ব আহরণে সরকারকে মরিয়া মনে হয়েছে। বাজেটে ভালো পদক্ষেপ হিসেবে করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকায় উন্নীত করার পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে প্রশংসা করেছে সিপিডি।

চলমান সার্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ খুঁজে বের করা এবং সমাধানে পর্যাপ্ত পদক্ষেপের কারণে বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না বলে মনে করে সিপিডি।

নতুন অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বলা হয়েছে ব্যাপকভাবে মূল্যস্ফীতি কমে গিয়ে সেটা ৬ শতাংশ হবে। এই মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আমাদের কাছে উচ্চাকাঙ্ক্ষা মনে হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় আমদানি প্রবৃদ্ধি, রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের যে পারফরম্যান্স ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেখা গেছে তার থেকে আরও বেশি হবে বলে নতুন অর্থ বছরের বাজেটে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে ‘উন্নয়নের দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’ শিরোনামে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয় ধরেছেন ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। জিডিপি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরেও জিডিপির ১৫ দশমিক ২ শতাংশ ধরে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হয়। চলতি বাজেটের তুলনায় প্রস্তাবিত বাজেটের আকার বাড়ানো হয়েছে ৮৩ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয় সাড়ে ৭ শতাংশ আর মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী ১৯৮ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তব্যে বাজেটের ব্যয়ের বিপরীতে ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, এনবিআর-বহির্ভূত কর থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়াও বৈদেশিক অনুদান হিসেবে আসবে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। অনুদানসহ মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে মোট রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।

বাজেটে অনুদান ছাড়া মোট ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩২ কোটি টাকা; সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার এবং অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে ৫ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close