হাসমত আলী, গাজীপুর

  ২৮ মে, ২০২৩

নীরব ভালোবাসায় সিক্ত জায়েদা খাতুন

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্যও নন। তবে তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সিটির নির্বাচিত মেয়র। একসময় দল থেকে জাহাঙ্গীর আলম বহিষ্কার এবং মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হন। পরে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে উঠে দুর্নীতির নানা অভিযোগও।

জায়েদা খাতুনের ভাষায়- ‘আওয়ামী লীগের স্থানীয় কিছু নেতার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে পদ হারান তার ছেলে।’ ছেলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য না মিথ্যা, এ বিচারের ভার মহানগরের জনগণ তথা ভোটারের ওপর ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে যান মেয়র পদে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হয়ে।

গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মহানগরের ভোটাররা রায় দেন। ভোটাররা গোপন ভোটের মাধ্যমে ভালোবাসায় সিক্ত করেন জায়েদা খাতুনকে। ফলাফলে জায়েদা দুই লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীপ্রার্থী আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খানের চেয়ে পেয়েছেন ১৬ হাজার ১৯৭ ভোট বেশি।

জায়েদা খাতুন স্বশিক্ষিত, ছিলেন গৃহিণী। পক্ষান্তরে এ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীরা ছিলেন বড় রাজনৈতিক দলের (আওয়ামী লীগ) মনোনীত এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিবীদ আজমত উল্লা খান, সাবেক উচ্চ পদস্থ আমলা (সচিব) এম এম নিয়াজ উদ্দিন (জাতীয় পার্টি), অপর বড় রাজনৈতিক দলের (বিএনপি) স্থানীয় শীর্ষ নেতার পরিবারের সন্তান সরকার শাহনুর ইসলাম রনিসহ আরো সাতজন। মেয়র পদে আট প্রার্থীর মধ্যে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী। এদের মধ্য থেকে জায়েদা খাতুনের বিজয়ে শুধু মহানগরবাসী নয়, অবাক হয়েছে পুরো দেশবাসী। এ সিটির তফসিল ঘোষণার পর সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও তার মা জায়েদা খাতুন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ এবং জমা দেন। যাচাইবাছাইয়ে জাহাঙ্গীর আলম বাদ পড়েন। টিকে যান জায়েদা খাতুন। নির্বাচনের আপিল কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, হাইকোর্ট ঘুরেও প্রার্থিতা ফিরে পাননি জাহাঙ্গীর। অবশেষে মায়ের পক্ষে প্রচারে নামেন। প্রথমে কিছু কর্মী-সমর্থক তাদের সঙ্গ দেন। প্রচারের সময় কয়েক জায়গায় বাধার সম্মুখীন হলে এক পর্যায়ে শুধু মা-ছেলে ভোট চাইতে বের হতেন।

জায়েদা খাতুনের ভোটাররাও ছিলেন নিশ্চুপ। যেন অপেক্ষায় ছিলেন সুযোগের। আসে সে মাহেন্দ্রক্ষণ, ২৫ মে। উজাড় করে ঢেলে দেন জায়েদা খাতুনকে তাদের ভোট। বিকেল থেকে শুরু হয় শহরের বঙ্গতাজে স্থাপিত রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে ফলাফল ঘোষণা। জায়েদার হাজারো ভোটার জড়ো হতে থাকেন বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামের পাশে। রিটার্নিং অফিসার মো. ফরিদুল ইসলাম ফলাফল ঘোষণা করেন। অনেকে বাড়িতে টিভিপর্দায়, ফেসবুকে ফলাফল দেখছিলেন। জায়েদা খাতুনের ঘড়িপ্রতীক জয়ী ঘোষিত হলে সমর্থকরা উল্লাস করে বিজয় ধ্বনি দিতে থাকেন। ব্যবধান বাড়তে থাকলে লোকসমাগমও বাড়তে থাকে। শুধু বঙ্গতাজে নয়, ভোটাররা জড়ো হন জাহাঙ্গীরের ছয়দানার বাড়িতেও। এক পর্যায়ে রাত দেড়টার দিকে চূড়ান্ত ফলাফলে বেসরকারিভাবে জায়েদা খাতুনকে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ভালোবাসা প্রকাশ করতে কর্মী-সমর্থক, বিভিন্ন বয়সী ও শ্রেণিপেশার মানুষ মধ্যরাতেই চলে যান জাহাঙ্গীরের বাড়িতে। লোকসমাগম বাড়ির সীমানা ছাড়িয়ে পার্শ¦বর্তী মহাসড়কেও ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার সারাদিন ও গভীর রাত পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক লোকসমাগম ছিল।

শনিবার (২৭ মে) দুপুরে ছয়দানায় জাহাঙ্গীরের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, শুভেচ্ছা জানাতে মহানগরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোটাররা ছুটে যান। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষ্যণীয়। তবে শনিবার লোকের চাপ ছিল একটু কম। মাঝে মাঝে জাহাঙ্গীর আলম গিয়ে তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় এবং গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।

মহানগরের উত্তর খাইলকুর এলাকার বাসিন্দা মফিজ উদ্দিন (৬০) বলেন, ‘জাহাঙ্গীরের জন্য বাইরে নির্বাচন করতে পারিনি। ভোট চাইতে দেয়নি। বোবার মতো থেকেছি। আমার স্ত্রী, ছেলে মেয়ে, বউ মিলে বাড়িতের ১৩ জন ভোটার। সবাইকে বলেছি মেয়র পদে ঘড়ি মার্কায় ভোট দিবা। বাকি দুই ভোট তোমাদের পছন্দমতো দিও। জায়েদা খাতুন নির্বাচিত হওয়ায় খুব খুশি হয়েছি। আমি রাজনীতি বুঝি না। জাহাঙ্গীর আলম খুব ভালো মানুষ। মেয়রের মতো এত বড় পদে থাকাকালেও দিন নাই, এমকি রাত ২-৩টার সময় রাস্তাঘাটে আমাদের দেখলে তিনি গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসা করেছেন কোনো সমস্যা আছে কিনা। আমরা তো জনপ্রতিনিধিদের কাছে টাকাণ্ডপয়সা চাই না।’

অনেকের মতো ফুলের তোড়া নিয়ে ৪-৫ জন নারী অপেক্ষা করছিলেন। ফুল হাতে থাকা একজন নারী কথা বলেন। তবে তিনি নাম এবং পেশা প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক। ওই নারী বলেন, তার বাড়ি মহানগরের ঝাঝর এলাকায়। এবার ভোটকেন্দ্রে স্থানীয় এক কাউন্সিলরপ্রার্থীর এজেন্ট ছিলেন। তিনি ও তার পরিবারের লোকজন জায়েদা খাতুনকে ভোট দিয়েছেন এবং তিনি নিজে জায়েদার জন্য অনেকের কাছে ভোটও চেয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close