নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৬ মে, ২০২৩

মার্কিন ভিসানীতিতে বিচলিত নয় সরকার

যেসব ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে বা গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করবে, তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ জারি করবে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার (২৪ মে) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এক টুইটবার্তায় এ হুশিয়ারি দিয়েছেন। পরে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়েও এ তথ্য নিশ্চিত করেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।

তবে মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে বাড়তি চাপ অনুভব করছে না বাংলাদেশ। এ নীতি কেবল সরকার থাকা দলের জন্যই নয়, বিরোধী দলের ওপরও বর্তাবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। বৃহস্পতিবার (২৫ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জ্বালাও পোড়াও চাই না। যে কারণে আমরা বিশ্বাস করি (মার্কিন ভিসানীতির কারণে) জ্বালাও পোড়াও করা দলগুলো একটু সচেতন হবে। জ্বালাও পোড়াও আর রাস্তা দখল করে আন্দোলন কমে যাবে। তারা যদি আইনানুগ কোনো আন্দোলন করে তাহলে সরকার তাদের অ্যাকোমোডেট করতে খুবই আগ্রহী। কিন্তু মানুষকে অতিষ্ঠ করা, সরকারি-বেসরকারি সম্পদ ধ্বংস করা, গতবার তারা ৩ হাজার ৮০০টি গাড়ি ও ২৭টি রেলের বগি জ্বালিয়েছে, আমরা তা চাই না। গণতন্ত্র দেশে আছে বলেই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতান্ত্রিক নিয়মে দেশ পরিচালনা করছেন বলেই, দেশে উন্নতি হয়েছে, গড় আয়ু বেড়েছে। আমাদের জনগণের প্রতি বিশ্বাস আছে। কাজেই যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসানীতি আমাদের অবস্থানকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।’ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ভিসানীতির ব্যাপারে ৩ মে আপনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কি তার জবাব দেওয়া হয়েছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘তাদের নীতি আমি জানাবো কেন? তারা জানাবে। তাদের কাজ তাদেরই করতে দেন। তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী (অ্যান্টনি ব্লিনকেন) আমাকে একটি চিঠি দিয়েছেন, তাতে অত্যন্ত সুন্দর কথা বলেছেন। তাতে (চিঠিতে) বলা হয়েছে, দিস পলিসি সাপোর্টস প্রাইম মিনিস্টার হাসিনা’স স্টেটেড কমিটমেন্ট টু হোল্ড ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড অ্যালাউ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস টু অ্যাক্ট হোয়েন বাংলাদেশি সিটিজেনস অর অফিশিয়ালস ফ্রম অল পলিটিক্যাল পার্টিজ আন্ডারমাইন দিস ক্রিটিক্যাল কিলার অব ডেমোক্র্যাসি। অর্থাৎ বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকারকে সমর্থন করছে এ নীতি এবং গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বাংলাদেশে সব রাজনৈতিক দলের নেতা ও নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ করে দেবে।’

যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন করতে চাই। এটিকেই তারা সমর্থন দিয়েছে।’

অনেক আগে থেকেই আপনারা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলে আসছেন। তারপরও কেন এ ভিসানীতি আসছে জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, ‘দুষ্টু লোকেরা এখনো জ্বালাও পোড়াও করে। গত মঙ্গলবার (সায়েন্সল্যাব এলাকায়) পুলিশকে পিটিয়েছে, বাস জ্বালিয়েছে। এ ভিসানীতিতে তারা একটু সাবধান হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসানীতির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেছেন, ‘এটি স্যাংশন নয়। এ ব্যাপারে বিএনপির উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। নির্বাচনের আগে বা পরে যেকোনো ধরনের সহিংসতা ঘটালে সেটা তাদের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।’

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞার যে হুশিয়ারি দিয়েছে তা নিয়ে সরকার চিন্তিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মো. আবদুর রাজ্জাক। এটি সবার জন্য সতর্কবার্তা বলে মনে করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘এরই মধ্যে সরকার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লিখিত জবাব দিয়েছে। সেটিই আমার বক্তব্য। সেখানে আমরা বলেছি- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে এ সরকার ক্ষমতায় এসেছে। চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে আরেকটি নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোট দিয়ে ঠিক করবে, আগামী দিনে কারা সরকার গঠন করবে।’

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এটা (ভিসা নিষেধাজ্ঞা) সরকারি ও বিরোধী দল, সিভিল সোসাইটি সবার জন্য প্রযোজ্য। যারাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করবে তাদের বিরুদ্ধে ভিসার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। আমরাও বারবার বলেছি, প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, আমরা যেকোনো মূল্যে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ?সুন্দর নির্বাচন করব। আমি মনে করি এটা সবার জন্য সতর্কবার্তা। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছাড়া এর বাইরে কিছু করলে ?যুক্তরাষ্ট্র সেটা অ্যাপ্রিশিয়েট করবে না।’

আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি মনে করি এ স্যাংশনসটা... আমাদের অনেক অশুভশক্তি রয়েছে, অসাংবিধানিক গোষ্ঠী রয়েছে, ১৯৭৫ সালে তারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে। বারবার এ অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতায় এসে, যেটা আপনারা দেখছেন পাকিস্তানে ঘটছে। এমন ধারা বাংলাদেশেও আসতে পারে। সরকার বা আওয়ামী লীগ এটা (নিষেধাজ্ঞা) নিয়ে চিন্তিত না। আমরা আমাদের বিবেক দিয়ে পরিচালিত হচ্ছি। কাজেই এটা নিয়ে আমাদের কোনো ভয় নেই। সুনির্দিষ্ট কারো ওপর তারা নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। কেউ করলে তার ওপর দেবে। সেক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান খুবই সুস্পষ্ট।’

সরকার কোনো চাপ অনুভব করছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো চাপ অনুভব করছি না। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আমরা অতীতে দেখিনি। এটি বিরোধীদের জন্য প্রযোজ্য। যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে, অন্তঃসত্ত্বা নারীকে হত্যা করে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। তারাও তো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করার অপরাধ থেকে মুক্ত নয়।’

এ আগে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের কয়েকটি ধারা অনুযায়ী নতুন যে ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। ৩ মে যুক্তরাষ্ট্র নতুন এ ভিসা নীতির বিষয়ে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close