নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২২ মে, ২০২৩

সিদ্ধিরগঞ্জে চুনশিল্পে চাঁদাবাজি

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে চাঁদাবাজির কারণে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে চুনশিল্পে। প্রতি কারখানা থেকে ২ লাখ করে মাসে ২৬ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের মিশনে নেমেছেন নাসিকের এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে কারখানায় হামলা ও হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। চাঁন মিয়া নামে একজন কারখানা মালিক আদালতে মামলা ও সরকারি বিভিন্ন অফিসে লিখিত অভিযোগ করলেও দুই কাউন্সিলর চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন। তবে কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম ও সাবেক কাউন্সিলর ওমর ফারুক তাদের বিরুদ্ধে ওঠা চাঁদাবাজির অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশ চুন প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির নামে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে একাধিক খুন-খারাবি হলে ২০১৬ সালে সমিতি ভেঙে দেওয়া হয়। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এক নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম সভাপতি ও তার ভাতিজা সাবেক কাউন্সিলর ওমর ফারুক সাধারণ সম্পাদক হয়ে সমিতি চালু করে চুনশিল্প মালিকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি শুরু করেন। থানা এলাকার পনেরোটি কারখানার মধ্যে সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কারখানা বাদে বাকি তেরোটি থেকে ২ লাখ করে মাসে ২৬ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের টার্গেট তাদের। কিন্তু হীরাঝিল এলাকার রনি লাইনসের মালিক চাঁন মিয়া চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় তার কারখানায় হামলা করার অভিযোগে ওমর ফারুককে প্রধান আসামি করে আদালতে মামলা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন চাঁন মিয়া। একই কারণে তিনি কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের বিরুদ্ধেও জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে অভিযোগ করেছেন।

মামলা ও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, এককালীন ২০ লাখ ও মাসে ৩ লাখ টাকা করে চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় ফারুক তার বাহিনী নিয়ে গত তিন মার্চ রাতে কারখানায় হামলা চালিয়ে মারধর ও মালামাল লুট করে। কাউন্সিলর আনোয়ার হুমকি দিয়ে বলেন, কারখানা চালাতে হলে মাসে তিন লাখ টাকা করে চাঁদা দিতে হবে। সবাই দেয় ২ লাখ আমি ৩ লাখ দিব কেন জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আমি কাউন্সিলর, আমার পাওয়ার আছে। আমি আমার ওয়ার্ডের বিচারক। আমি যা বলব তা-ই মানতে হবে। চাঁদা না দিলে কারখানা চালাতে দিব না।’

একাধিক কারখানা মালিক জানান, ১৯৯৬ সালে চুন কারখানা মালিকদের নিয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশ চুন প্রস্তুতকারক মালিক সমিতি। শুরুতে চাঁদার পরিমাণ কম হলেও দিন দিন তা বাড়তে থাকে। ফলে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় ২০০২ সালের ৩১ ডিসেম্বর কারখানা মালিক সুন্দর আলী এবং ২০০৯ সালের ১৩ আগস্ট আবু তালেব দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হয়। আরো দুই কারখানা মালিককে গুলি করলেও তারা প্রাণে বেঁচে যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে সব কারখানা মালিক বৈঠকে বসে সমিতি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ওই সমিতিটি আবার চালু করেন আনোয়ার ইসলাম ও ওমর ফারুক।

চাঁন মিয়া বলেন, চাঁদার দাবিতে আমার কারখানায় হামলা করায় ওমর ফারুককে প্রধান করে ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি। আর কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম সমিতি গঠন ও নিজে সভাপতি হওয়ার কথা স্বীকার করলেও চাঁদাবাজির অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন। চাঁন মিয়ার কাছে চাঁদা দাবি ও অভিযোগ প্রসঙ্গটি তিনি এড়িয়ে যান।

ওমর ফারুক বলেন, আমি চাঁদাবাজির মধ্যে নেই। চুনা কারখানা নিয়ন্ত্রণ করছে বর্তমান কাউন্সিলর। চাঁন মিয়ার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেছেন। আমি ইন্ধন দিয়ে অভিযোগ করিয়েছি এমন সন্দেহে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও অভিযোগ করা হয়েছে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close