মাওলানা আমিন আশরাফ

  ০১ এপ্রিল, ২০২৩

শুদ্ধতম জীবন গড়ার প্রেরণা জোগায় রমজান

রহমতের দশকের নবম দিন আজ। এ দশকে আল্লাহর রহমতই কামনা করে মুমিনরা। শেষ মুহূর্তে রহমত কামনায় আল্লাহর কাছে ধরনা দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। রমজান আমাদেরকে সংযমী হওয়ার শিক্ষা দেয়। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি হালাল খাদ্য ও পানীয়কে আল্লাহর নির্দেশের কারণে বর্জন করে প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করে। সেই সঙ্গে তারাবি, তাহাজ্জুদ, দান-সদকা, কোরআন তেলাওয়াতসহ অন্য ইবাদত করার মাধ্যমে তার আত্মার পরিশুদ্ধতা অর্জিত হয়। শুধু খাবার-দাবার ও স্ত্রী সহবাস থেকে দিনের বেলায় বিরত থাকাই সংযম নয় বা এটাই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য নয়। এ পবিত্র মাসকে পূর্ণভাবে আল্লাহর রহমত, বরকত ও নাজাতপ্রাপ্তির জন্য আমাদের কিছু করণীয় আছে এবং সেই সঙ্গে কিছু বর্জনীয় কাজ রয়েছে, যা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আমরা রমজান মাসকে কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী পালন করতে পারব।

প্রকৃতপক্ষে রমজানে সার্বক্ষণিক নিজের কুণ্ডপ্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে প্রকৃত তাকওয়া অর্জন করা সম্ভব। রোজা এমনই এক ইবাদত, যা দুনিয়ার সব নবী-রাসুলের ওপর ফরজ ছিল। আল্লাহ তায়ালা যুগ যুগ ধরে রোজার বিধান আবশ্যক করে রেখেছেন। রমজানের রোজা সাধনার মাধ্যমে মানুষের অন্তরের রিপুকে আল্লাহর তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিশ্চিত করা হয়। অন্তরের পশু প্রবৃত্তিকে বশীভূত করে মানুষ সর্বোচ্চ প্রশান্ত আত্মাপর্যায়ে উপনীত হয়। প্রকৃত রোজাদার তাই এ মাসে আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংশোধনের পর্যায়ে উপনীত হয়। আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংশোধনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। আর সত্যিকার সিয়াম সাধনার মাধ্যমে সমাজ থেকে সব অন্যায়, অনাচার, ব্যভিচার ও সন্ত্রাস দূরীভূত হয়। গোটা ব্যক্তিজীবনে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে যাপনের নিশ্চয়তা লাভ করা যায়। ইসলাম ধর্মে প্রত্যেক সবল মুসলমানের জন্য রমজান মাসের রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে। মাহে রমজানের এ পূর্ণময় সময়ে সিয়াম সাধনা বা রোজা পালন মানবজীবনকে পুত পবিত্র ও ইসলামি নীতিনৈতিকতায় গড়ে তোলার এক অপূর্ব সুযোগ। এ মাসে যারা একনিষ্ঠভাবে রোজা রেখে নিজেকে আত্মশুদ্ধির পর্যায়ে নিয়ে যায়, তার চূড়ান্ত ফল মহান প্রভু আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও অপার করুণার দৃষ্টি। মানুষের আত্মশুদ্ধির একটি বলিষ্ঠ হাতিয়ার সিয়াম সাধনা করা।

রোজা সাধনার মাধ্যমে মানুষ এক অমীয় সুধা লাভ করতে পারে। এর ফলে মানুষ জাগতিক লোভ-লালসা, সম্পদ, টাকাপয়সা, বাড়ি-গাড়ি অর্জনের ধ্বংসকারী ব্যাধি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সুযোগ লাভ করে। হৃদয়কে নির্মল বা আত্মশুদ্ধির অস্ত্রের মূলশক্তি সঞ্চারিত হয় রোজা পালনের মাধ্যমে। মানুষ কোনো মন্দ কাজ কিংবা দোষত্রুটির কর্ম সাধন করে, তখন তার হৃদয়ে কালিমা বা মরিচার জং ধরে। এ পাপের মরিচা থেকে হৃদয়কে শুদ্ধি তথা পরিষ্কার করার একমাত্র পন্থা হলো- আল্লাহকে স্মরণ করা। মানুষ যতই আল্লাহর জিকির, ইবাদত, নামাজ, রোজা পালন করবে, ততোই তার হৃদয় পরিশুদ্ধ হতে থাকবে এবং সে পাপ কালিমা থেকে মুক্ত হবে।

এ মাসে নাযিল হয়েছে পবিত্র আল কোরআন। যা মানবজাতির জন্য পথপ্রদর্শক। অপরাধমুক্ত, সুশৃঙ্খল ও সুন্দর জীবনযাপন এবং সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে কোরআন নাযিলের এ মাস রমজানে কোরআনের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। মানবজীবনকে সুন্দর পরিপাটি ও শান্তিময় করার দিকনির্দেশনা জানার পাশাপাশি কোরআনের সব করণীয় বিধিবিধান মানতে হবে। এ মাসেই সংযত ও নিষ্ঠাবান হওয়ার যে শিক্ষা রয়েছে, আমরা যেন ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে আমল করতে পারি। পবিত্র এ মাসে মহান রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভে আমরা নিশ্চয় সবাই সচেষ্ট হব, আত্মশুদ্ধি অর্জন করব।

আল্লাহ তায়ালা মন্দ কাজ সংঘটিত হওয়ার সব বিষয়গুলোকে হালকা করেছেন রোজাদারের ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য। জান্নাতের দরজা খুলে দিয়েছেন জান্নাতি পরিবেশ লাভের জন্য। আবার জাহান্নামের দরজা ও শয়তানকে বেড়ি পড়ানোর মাধ্যমে অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে দিয়েছেন। রমজান আত্মশুদ্ধি লাভ করার সূতিকাগার। রমজানই শুদ্ধতম জীবন গড়ার প্রেরণা জোগায়। সুতরাং এরপরও যদি মানুষ খারাপ কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখতে না পারে, মন্দ কাজের প্রভাবমুক্ত হয়ে ভালো কাজের দিকে অগ্রসর হতে না পারে, তবে এর চেয়ে হতভাগা আর কে হতে পারে?

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close