মাওলানা আমিন আশরাফ

  ৩০ মার্চ, ২০২৩

পবিত্র রমজান থেকে শিক্ষা নিন

মাহে রমজানের আজ সপ্তম দিন। রোজাদারের শিক্ষার মাস এ পুণ্যময় রমজান। রমজান-পরবর্তী জীবনের গুনাহ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে চূড়ান্ত প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন রোজাদার। এতে মহান আল্লাহর বিশেষ তিনটি গুণের প্রশিক্ষণও রয়েছে। রমজানে রোজাদারের সেই প্রশিক্ষণ ও গুণগুলো কী?

গুনাহমুক্ত জীবন গঠন করবেন রোজাদার। কেননা পবিত্র রমজানে মুমিন বান্দা আল্লাহর অনন্য তিনটি গুণে নিজেদের মহিমান্বিত করে তুলবেন। এ তিন গুণই সব রোজাদারের জীবনকে আলোকিত করবে তা হলো-

১. কম কথা বলার অভ্যাস। ২. কম ঘুমানোর অভ্যাস। ৩. বেশি পরিমাণে খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থাকার অভ্যাস।

রমজান মাসজুড়ে রোজাদার গরিব-অসহায় মানুষের ক্ষুধার যন্ত্রণা অনুভব করেন। আল্লাহতায়ালা যে উদ্দেশ্যে বান্দার প্রতি রোজা ফরজ করেছেন, সে অনুযায়ী রোজাদার রমজানে প্রশিক্ষণ পেয়ে ধন্য হন। নিজেদের জীবনকে আলোকিত করতে এবং গুনাহমুক্ত জীবন গড়তে রমজানের এ প্রশিক্ষণ ও গুণগুলো সবার অর্জন করা উচিত। এ ছাড়া আরো কিছু আমলের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা জরুরি।

রোজা পুরোপুরি শারীরিক কিংবা আর্থিক ইবাদত নয়, বরং তা হচ্ছে আত্মিক ইবাদত। বাহ্যিক দৃষ্টিতে রোজা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। তাই রোজাদার মনে-প্রাণে আল্লাহকে ভয় করেন এবং ভালোবেসেই আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে রোজা রাখেন। আল্লাহকে ভয় করেই রোজাদারের সারাদিন খাবার-দাবার থেকে বিরত থাকেন। তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় অর্জনে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, ‘হে ইমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়াবান হতে পারো। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)

রমজানকে ধৈর্যধারণ করার মাস বলা হয়। রোজাকে সবরের অর্ধেক বলা হয়েছে। এ মাসেই বান্দা সবরের শিক্ষা লাভ করে। সবরকারীর জন্য রয়েছে অগণিত পুরস্কার। রোজা মানুষকে আল্লাহর হুকুম পালনে ধৈর্যশীল ও পরমসহিষ্ণু হতে শেখায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বলুন, হে আমার বিশ্বাসী বান্দারা! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো। যারা এ দুনিয়ায় সৎকাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে পুণ্য। আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্ত। যারা সবরকারী, তারাই তাদের পুরস্কার পায় অগণিত।’ (সুরা জুমার, আয়াত ১০)

রোজা মানুষকে অলসতামুক্ত হয়ে পরিশ্রমী হতে শেখায়। প্রত্যেক রোজাদার দিনের বেলায় পানাহার ত্যাগ করা সত্ত্বেও নামাজসহ অন্যান্য ইবাদাত-বন্দেগির পাশাপাশি সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করেন। সারাদিন রোজা রেখে রাতের বেলায় তারাবি-তাহাজ্জুদ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আসকার করেন।

এতকিছুর পরও আবার শেষ রাতে ওঠে সাহরি খাওয়া এবং ফজরের নামাজ আদায় করা অনেক কষ্টকর। রোজার প্রশিক্ষণই মানুষকে পরিশ্রমী হতে শেখায়।

সব খারাপ চরিত্র বা আচরণ ধুয়ে-মুছে সুন্দর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে মানুষ। রমজানের রোজা পালনের মাধ্যমেই মানুষ নিজেকে সত্যবাদী হিসেবে গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ পায়। বিশেষ করে যে ব্যক্তি রোজা রাখেন তিনি কখনো মিথ্যা কথা বলতে পারেন না। মিথ্যা বলতে গেলে নিজে থেকেই একটা খারাপ অনুভূতি জাগ্রত হয়।

তা ছাড়া একজন রোজাদার কখনো সজ্ঞানে কোনো অসত্য কিংবা মিথ্যা বলতে পারেন না। কোরআন নাজিলের মাসে কোরআনের বরকতে আল্লাহর রহমতে রোজাদার হয়ে ওঠেন সত্যবাদী।

রমজানের রোজা একজন রোজাদারকে সব অন্যায়, জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতনমূলক কাজকর্ম করা থেকে বিরত রাখে। পরিবার ও সমাজে যাতে কোনো গর্হিত কাজ না হয় সে ব্যাপারেও সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকেন। রোজাদার কাজ-কর্মে, অফিস-আদালতে, ব্যবসা-বাণিজ্যে সব জায়গায় নিজেকে যথাযথ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট রাখেন, যা রমজান ছাড়া অন্য সময় সচরাচর দেখা যায় না। আল্লাহতায়ালা কল্যাণ ও বরকতের মাসে রমজানের রহমত দশকের দিনগুলোতে তার পরিপূর্ণ আমাদের দান করুন।

লেখক : আলেম, শিক্ষক ও অনুবাদক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close