গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনীর প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রস্তাবিত এই আইনের সংশোধনী পরবর্তী মন্ত্রিসভার বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে। এই আইনের সংশোধনীর খসড়ায় সংসদ নির্বাচনে জেলাভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তা রাখার পাশাপাশি আসনভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তা রাখার সুপারিশ এসেছে। বর্তমানে জেলার সব নির্বাচনী আসনের জন্য একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা থাকেন। জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) জেলার নির্বাচনী আসনগুলোর জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা থাকেন। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের কার্ডধারী সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজে বাধা দিলে ২ থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে এ সংশোধনীতে।

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’ সংশোধনীর নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখানেই এসব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে কোনো পরিবার থেকে সর্বোচ্চ তিনজন ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদে থাকতে পারবেন- এমন বিধান রেখে ‘ব্যাংক-কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০২৩’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কার কত ভূমি উন্নয়ন কর- তা আগেই জানিয়ে দেওয়ার বিধান রেখে ‘ভূমি উন্নয়ন কর আইন, ২০২৩’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার শাখার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান।

তিনি সাংবাদিকদের জানান, আজকের বৈঠকে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’ সংশোধনীর নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে কিছু প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাও হয়েছে বলে জানান তিনি। এর মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার বিষয়ে জেলাভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তা অথবা আসনভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এখন কোনটি থাকবে, তা সরকার ঠিক করবে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের কার্ডধারী সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের কাজে বাধা দিলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। কেউ এই অপরাধ করলে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

এত দিন প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সাত দিন আগেই ইউটিলিটি বিল (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদি বিল) জমা দিতে হতো। এখন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন পর্যন্ত এসব বিলের কপি জমা দেওয়ার সুযোগ রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আর প্রার্থীদের টিআইএন সনদ এবং আয়করের রসিদ জমা দিতে হবে।

বিদ্যমান আরপিওতে কিছু ক্ষেত্রে সংশোধনী আনার প্রস্তাব তৈরি করে গত বছরের অক্টোবরে তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল ইসি।

যেসব সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে, সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ফলাফল প্রকাশের পরও অনিয়ম প্রমাণিত হলে নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা, প্রার্থীর এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখালে বা কেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে শাস্তির বিধান, দলের সর্বস্তরের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব রাখতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় দেওয়া, দায়িত্বে অবহেলায় কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতা বাড়ানো, প্রার্থীদের আয়কর সনদ জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা, ভোট গণনার বিবরণী প্রার্থী ও তার এজেন্টদের দেওয়া বাধ্যতামূলক করা, মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত খেলাপি বিল (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ইত্যাদি) পরিশোধের সুযোগ দেওয়া, রাজনৈতিক দলের সংশোধিত গঠনতন্ত্র ৩০ দিনের মধ্যে ইসিতে জমা দেওয়া ইত্যাদি। এসব প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয় ভেটিং (পরীক্ষা) করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠায়, যা নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

সমন্বয় ও সংস্কার শাখার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, আজকে আইনের সংশোধনীর বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কী কী সংশোধনী থাকবে, তা পরবর্তী সময়ে চূড়ান্ত করা হবে।

আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা রয়েছে। তার আগেই আরপিও সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।

ঋণ : কোনো পরিবার থেকে সর্বোচ্চ তিনজন ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদে থাকতে পারবেন। এমন বিধান রেখে ‘ব্যাংক-কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০২৩’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ প্রসঙ্গে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, আগে একটি পরিবার থেকে চারজন ব্যাংকের পরিচালক হতে পারতেন। এখন নতুন আইনে সেটি তিনজন করা হয়েছে।

ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ না করলে জরিমানা : কার কত ভূমি উন্নয়ন কর- তা আগেই জানিয়ে দেওয়ার বিধান রেখে ‘ভূমি উন্নয়ন কর আইন, ২০২৩’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন বাংলা বর্ষপঞ্জি (ক্যালেন্ডার) অনুযায়ী ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হয়। নতুন আইন অনুযায়ী জুলাই থেকে জুন (অর্থবছর) মেয়াদে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হবে। আর্থিক বছরের সঙ্গে এটি সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আগে পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত সময়ের জন্য ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হতো। এখন সেটা হবে ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।’

খসড়া আইন অনুযায়ী এখন থেকে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হবে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘ম্যানুয়ালি আর কর আদায় করা যাবে না। কোনো ভূমির মালিক যদি একসঙ্গে তিন বছর ভূমি উন্নয়ন কর না দিয়ে থাকেন তাহলে প্রথম বছর থেকে তৃতীয় বছর পর্যন্ত সোয়া ৬ শতাংশ হারে জরিমানাসহ কর আদায় করতে হবে।’

‘ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণ হবে ভূমির ব্যবহারভিত্তিক হবে। আগে ২৫ বিঘা পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর মওকুফ ছিল, এখনো সেটা বলবৎ আছে। কেউ যদি ২৫ বিঘার বেশি জমির মালিক হয়ে থাকেন, তাহলে পুরোটারই ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে।’

সচিব বলেন, ‘প্রতি বছর কার কত ভূমি উন্নয়ন কর, সেটা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা তালিকা তৈরি করে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে পাঠাবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) তা নোটিস বোর্ডে টাঙিয়ে দেবেন। এ বিষয়ে যদি কারো আপত্তি থাকে, সেটা তিনি দায়ের করতে পারেন। তিনি এসিল্যান্ড ও জেলা কালেক্টরের কাছে আপত্তি দায়ের করতে পারেন। জেলা কালেক্টর তা ১৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করবেন।’

গেজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে বিশেষ সময়ে যেমন করোনা মহামারি, দুর্বিপাক ইত্যাদি সময়ে ভূমি উন্নয়ন কর কমানোর সুযোগ খসড়া আইনে রাখা রয়েছে বলেও জানান মাহমুদুল হোসাইন। এছাড়া জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে একাদশ জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলেও জানান সচিব।

"