মাওলানা আমিন আশরাফ
আসুন, রমজানে সব পাপ থেকে দূরে থাকি
অফুরন্ত রহমত লাভের দশকের আজ ষষ্ঠ দিন। রমজান মুসলিম জাতির প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের মাস। রমজানে অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি ইবাদতের পাশাপাশি নেক আমল ও জিকির-আসকার করা উচিত। এতে অনেক বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।
তবে মাহে রমজানে সওয়াব লাভের জন্য এমন কিছু পাপ বা গুনাহের কাজ রয়েছে, যা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত।
অযথা সময় নষ্ট করা : রমজান গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এ মাসের প্রতিটি দিন-মুহূর্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ মাসে প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সময় নষ্ট না করা। কেউ কেউ কেনাকাটার নামে সময় নষ্ট করে থাকেন যে, তার নামাজের সময় চলে যায়। পরে নামাজ কাজা পড়েন। আসলে এমনটা করা উচিত নয়। বরং সব সময় কোনো একটা আমলের মধ্যে থাকা। সময় থাকলে কোরআন তেলাওয়াত করা, জিকির-আজকার করা। বাইরে থাকলে কোরআনের কোনো সুরা বা আয়াত মুখস্থ থাকলে সেগুলো মনে মনে তেলাওয়াত করা।
মিথ্যা বলা ও অযথা পাপকাজ করা : মিথ্যা সব গুনাহের উৎস। সত্য মুক্তি দেয় এবং মিথ্যা ধ্বংস ডেকে আনে। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা মুসলমানের কর্তব্য। এ ছাড়া সব ধরনের পাপ থেকে দূরে থাকা উচিত। এটা একজন মুমিনের প্রতিদিনকার কাজ। আর রমজানে এ কাজে আরো বেশি সতর্ক থাকা উচিত যে, কোনোভাবেই যেন কোনো ধরনের পাপ সংঘটিত না হয়ে যায়।
অপচয়কারী শয়তানের ভাই : অপচয় কিংবা অপব্যয় করা খুবই বাজে ও গর্হিত অভ্যাস। পবিত্র কোরআনে কারিমে অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে। কোরআন ও হাদিসের অসংখ্য স্থানে অপচয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে এর মানে এ নয় যে, অপচয়রোধ করতে গিয়ে কৃপণতা অবলম্বন করবেন। মহান আল্লাহ কৃপণদের পছন্দ করেন না। অপচয় ছেড়ে দেওয়ার অর্থ হলো মধ্যপন্থা অবলম্বন করা।
বিশুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত না করা : কোরআন তেলাওয়াতের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। কোরআনে কারিমে অর্থসহ বুঝে বুঝে খতম করা ও কিংবা তেলাওয়াত করা উত্তম। মনে রাখতে হবে, কোরআন তেলাওয়াতের সময় যেন কোরআনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন না হয়। তাড়াহুড়ো কিংবা অসুন্দর ও অশুদ্ধভাবে খতম করা উচিত নয়। শুদ্ধভাবে কোরআন পড়তে না জানলে বিশুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করতে পারেন এমন কারো কাছ থেকে কোরআন তেলাওয়াত শিখে নেওয়া।
ইমামের পেছনে সালাত আদায়ে অলসতা : রমজানে রোজাদাররা সব কাজকর্ম বাদ রেখে দূরদূরান্ত থেকে নামাজের সময় মসজিদে চলে আসেন। দিনে পাঁচবার মসজিদে এসে ইমামের পেছনে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করে থাকেন। এভাবে রোজাদাররা মসজিদে নামাজ পড়তে এলে তাদের পরস্পরের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে ওঠে। আর এতে ২৭ গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। তবে সতর্ক থাকতে হবে, যেন নামাজ জামাতে আদায়ে অলসতা তৈরি না হয়।
খাবার-দাবার বেশি করা : সাহরি ও ইফতারে কিছুতেই এমন খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়, যা পরবর্তী সময় স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে। আবার এত অল্প পরিমাণ খাবেন না যে, রোজা রাখতে অসুবিধা হয়। কেননা স্বাস্থ্য-সচেতনতাও ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর ইবাদত করার জন্য শক্তি ও স্বাস্থ্য প্রয়োজন। তাই সুস্থ-সবল মুমিন আল্লাহর অধিক প্রিয়।
লোকদেখানো ইবাদত করা : রিয়া হলো লোকদেখানো কাজ করা। রিয়া করা শরিয়তে সম্পূর্ণরূপে হারাম। শিরক হলো দুই প্রকার। শিরকে আকবার বা বড় শিরক। আর শিরকে আসগার বা ছোট শিরক। আর এ রিয়া হলো ছোট শিরক। ফলে রিয়া থেকে অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে। অনেকে মানুষকে দেখানোর জন্য বেশি বেশি নফল নামাজ ও বেশি বেশি দান করেন, লোকরা যেন তাকে বাহবা দেয় সে কারণে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সব ধরনের লোকদেখানো কাজ থেকে হেফাজত করুন।
বেশি বেশি ঘুমানো : অনেকের ধারণা, যত বেশি ঘুম তত বেশি শরীর ভালো থাকবে। অথচ একজন সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন সাত ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি ঘুমালে নানা সমস্যা ডেকে আনতে পারে। বেশি ঘুম মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথার কারণ হতে পারে। এমনকি দেখা দিতে পারে ডায়াবেটিসের মতো অসুখ। তা ছাড়া বেশি ঘুম ডিপ্রেশনেরও কারণ।
জিনিসপত্রে দাম বাড়ানো ও বাজারে সংকট তৈরি করা : ক্রেতাদের জিম্মি করা জায়েজ নেই। কেউ তা করে ‘ধনী’ হয়ে গেলেও কোনো লাভ নেই। তার অবৈধ সম্পদ জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে। দুনিয়ার জীবনও তার জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে। উপরন্তু উপার্জন হারাম হওয়ার কারণে নামাজ, রোজা, হজ, দান-সদকা কিছুই আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় হবে না। মজুদদারি ও কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে কোটিপতি হলেও তার জন্য দারিদ্র্য অবধারিত।
অযথা রাত জাগা : রাতে দেরি করে ঘুমাতে নিষেধ করেছেন নবীজি (সা.)। তিনি এশার নামাজের পর গল্পগুজব ও গভীর রাত পর্যন্ত সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর তাগিদ দিতেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ ও কল্যাণজনক কাজে রাত জাগতে নিষেধ করেননি।
আল্লাহতায়ালা আমাদের মাহে রমজানে সব ধরনের পাপকাজ ও অনর্থক কাজ থেকে হেফাজত করুন এবং রমজানের পরিপূর্ণ বরকত আমাদের দান করুন। আমিন।
লেখক : আলেম, শিক্ষক ও অনুবাদক
"
