প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৫ মার্চ, ২০২৩

পণ্যমূল্যে দিশেহারা মানুষ

পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। এতে দিশেহারা নিম্নআয়ের মানুষ। সারাদিন রোজা থাকার পর সন্ধ্যায় ইফতারি ও রাতের খাবারটা ভালো হলে বেশ শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন রোজাদাররা। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর রোজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। এমন রেকর্ড গড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নিম্নআয়ের রোজাদাররা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

তারাগঞ্জ (রংপুর) : রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ঘনিরামপুর গ্রামের আউয়াল হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘রোজা (রমজান) তো আসি গেল। সারাদিন রোজা থাকলে রাইতোত এনা ভালো করি খাবার নাগে। সারাদিন মানুষের বাড়িত কামকাজ করি। গতবার রোজায় জিনিসপাতির দাম এত আছলো না। এবার ডাবল দাম বারি গেইছে। মোর চিন্তা ধরি গেইছে। কি খেয়া রোজা দেমো এবার।

তারাগঞ্জ বাজারের পাদুকা (জুতা) ব্যবসায়ী আল-আমীন ইসলাম বলেন, ‘রোজা মাসে খরচ একটু বেড়ে যায়। কিন্তু এবার খরচের পরিমাণ বাড়ছে প্রায় দ্বিগুণ। ব্যবসা তো এমনিতেই সেরকম চলছে না। এর ওপর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আকাশচুম্বী দাম।’

কথা হয় তারাগঞ্জ হাটে আসা আর এক ক্রেতা ওসমান গণির সাথে। তিনি বলেন, ‘কী করমেন বাবা। হামার গরিব মানুষ মরলেই কি আর বাঁচলেই কি? খাবার জিনিস থাকি শুরু করি সউগ জিনিসের দাম যেভাবে বাড়ছে এবার মনে হয় হামার মতন গরিব মানুষোক না খেয়া রোজা থাকির নাগবে।’

আমতলী (বরগুনা) : বরগুনার আমতলীর ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন জানান, মহাজনরা চালাক হয়ে গেছে। বুঝতে পেরেছে যে, মানুষ এখন আগেই রোজার বাজার করে রাখে। তাই তারাও আগেই দাম বাড়িয়ে দেয়। উপজেলার হলদিয়া বাজারের ব্যবসায়ী মো. তনয় জানান, রাতারাতি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে শুধু ক্রেতারা নয়, ব্যবসায়ীরাও বিপাকে পরছেন।

স্কুল শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন জানান, যে টাকা বেতন পাই তা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালানো সম্ভব নয়। হলদিয়ার বিশিষ্ট আলেম মাওলানা হারুন অর রশিদ বলেন, রোজা রাখা মুশকিল হয়ে পড়বে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের। তিনি প্রশাসনের উচ্চ মহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিজ্ঞবিচারক মো. আশরাফুল আলম বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের বাইরে পণ্য বিক্রয় করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চৌগাছা (যশোর) : যশোর জেলায় চাহিদার চেয়ে তিন কোটি ডিম বেশি উৎপাদিত হয়, মাংসের উৎপাদনও চাহিদার তুলনায় ২৮ হাজার টন বেশি। দুধের উৎপাদনেও উদ্বৃত্ত যশোর। প্রাণিসম্পদ বিভাগের এসব তথ্যে যশোরের বাসিন্দারা গর্বিত হলেও খুশি না। বাজারে ডিম মাংসের দাম শুনলেই মাথা নষ্ট হয়ে যায়।

জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যমতে, যশোরে বছরে ডিমের চাহিদা সাড়ে ৪৭ কোটি পিস সেখানে উৎপাদিত হয় ৫০ কোটি ৫৫ লাখ পিস। চাহিদার চেয়ে ৩ কোটি ৫ লাখ ডিম বেশি উৎপাদন হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে ডিমের উৎপাদন হয়েছে ৩৩ কোটি ৭০ লাখ পিস। শুধু গত ফেব্রুয়ারি মাসেই ৩ কোটি ৮৮ লাখ পিস ডিম উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে দেশি মুরগির ডিম রয়েছে ১০ লাখ। জেলায় বছরে মাংসের চাহিদা এক লাখ ২৩ হাজার টন সেখানে উৎপাদিত হয় ১ লাখ ৫১ হাজার ৭৪০ টন। চাহিদার চেয়ে ২৮ হাজার টন বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে ইতোমধ্যে ১ লাখ ১ হাজার ১৬২ টন মাংস উৎপাদিত হয়েছে।

বছরে দুধের চাহিদা ২ লাখ ৩৯ হাজার টন সেখানে উৎপাদিত হয় প্রায় ২ লাখ ৪৬ হাজার ৮শ টন। চাহিদার চেয়ে এখানে প্রায় ৭ হাজার টন দুধ বেশি উৎপাদিত হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে ইতোমধ্যে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫২৭ টন দুধ উৎপাদিত হয়েছে। শুধু গত ফেব্রুয়ারি মাসেই ২২ হাজার ৬ টন দুধ উৎপাদন হয়েছে। চাহিদার চেয়ে এত বেশি উৎপাদনের পরেও দাম বাড়াকে অগ্রহণযোগ্য বলছেন ভোক্তারা।

যশোরের চৌগাছা বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা আতিয়ার রহমান জানান, গরুর মাংস, খাসির মাংস আমাদের সাধ্যের বাইরে। মাংসের স্বাদ ভুলে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

চৌগাছা উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের ইসরাফিল জানায় গরুর মাংস কিনেছে তা মনে নেই। চৌগাছা পৌরসভার গৃহবধূ আয়শা জানান, তার দুটি সন্তান। ডিম যতদিন ৮/৯ টাকা করে দাম ছিল তখনো মাঝে মাঝে ছেলেমেয়েকে ডিম দিয়েছি, এখন আর পারছি না। একটা ডিম দুই ভাগ করে দিলে ছেলেমেয়েরা খেতে চায় না।

গৃহবধূ ফাতেমা খাতুন আরও বলেন, তার স্বামীর ছাগলের মাংস খুব পছন্দ করতেন। কিন্তু দাম বাড়ায় গরুর মাংস কেনা হতো। পরে ব্রয়লার কেনা শুরু হলেও এখন তাও ছাড়তে হচ্ছে।

মগরেব নামের এক মাংস বিক্রেতা জানান, দাম বেশি নিলেও এখন লাভ আর আগের মতো নেই। যে দামে গরু কেনা হচ্ছে প্রায় সেভাবেই বিক্রি হচ্ছে।

চৌগাছার জগন্নাথপুর গ্রামের গাভি খামারি মন্টু জানায়, আগে যে খাবার প্রতিটি গরুকে দেওয়া হতো ঠিক ততটুকু খাবার এখন দিতে ডাবলেরও বেশি দাম দিতে হচ্ছে। গমণ্ডভুষি-খৈলসহ গো-খাদ্য আমদানি মাঝে এক প্রকার বন্ধ ছিল। সে সময় খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দুধের দামও বাড়াতে হয়েছে। খামার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

বাজারের ডিম দোকানিরা বলেন, তারা পাইকারি ডিম কিনে বাজারে বিক্রি করেন। একপ্রকার নামকা ওয়াস্তে লাভ রেখে বিক্রি। বেচাকেনা অনেক কমে গেছে।

যশোরের ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. বখতিয়ার হোসেন জানায়, ডিমণ্ডদুধ-মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে সরাসরি প্রভাব ফেলছে খাদ্যের দাম। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ও ডলার সংকটে আমদানি পণ্যের দাম খুব বেশি বেড়ে গেছে। ফলে গো খাদ্য, মুরগির খাদ্যে অনেক খরচ হচ্ছে। একজন খামারির মোট ব্যয়ের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ব্যয় এখন খাদ্যখাতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন বেশি থাকলেও কমছে না ডিমণ্ডদুধ-মাংসের দাম। এর প্রভাব পড়েছে সবজিসহ সব পণ্যের দামে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close