মাওলানা আমিন আশরাফ

  ২৫ মার্চ, ২০২৩

রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করুন

পবিত্র রমজানে আল্লাহর রহমত লাভের আজ দ্বিতীয় দিন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেছেন, ‘মাহে রমজান এমন এক মাস, যার প্রথম ১০ দিন আল্লাহর রহমতে ভরপুর থাকে, মধ্যবর্তী ১০ দিন ক্ষমার জন্য নির্ধারিত এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার।’

রমজানে মহান আল্লাহ মুমিনদের অনেক নেয়ামত দ্বারা সমৃদ্ধি করেছেন। রহমতের ১০ দিনে তিনি আমাদের বরকত ও প্রাচুর্য দিয়ে অভিবাদন জানিয়েছেন। এ মাসে তিনি সাধারণ অন্য মাসের তুলনায় প্রতিটি পুণ্যময় কাজের বিনিময়ে ১০টি করে নেকি দিয়ে থাকেন। যত ভালো কাজই আমরা করি না কেন, প্রতিটি কাজের দ্বিগুণ বিনিময় প্রদান করার ঘোষণা করেছেন মহান আল্লাহ। এজন্য আমাদের উচিত রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করা।

আমরা রমজানের পবিত্রতা বলতে শুধু বুঝে থাকি- হোটেল বন্ধ থাকা বা তার সামনে পর্দা ঝুলিয়ে দেওয়া। আসলে শুধু এটিই রমজানের পবিত্রতা রক্ষা নয়; বরং খাবার হোটেল তো মুসাফির ও অসুস্থ ব্যক্তির জন্য খোলা রাখা, অনেক ক্ষেত্রে জরুরিও বটে। আসলে রমজানের পবিত্রতা হলো, রোজাদার আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ওইসব কাজ ছেড়ে দেওয়া, যা তার জন্য অন্য মাসগুলোতে হালাল ছিল এবং রমজানেও হালাল। এসব কাজ এ জন্য পরিত্যাগ করা যে, আল্লাহতায়ালা রোজা অবস্থায় এ কাজগুলো থেকে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছেন। তাই যেসব মন্দকাজ আল্লাহতায়ালা সব সময়ের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন যেমন- মিথ্যা, প্রতারণা, খেয়ানত, আত্মসাৎ, গিবত, সুদ, জুয়া, ঝগড়া-বিবাদ, হারাম খাদ্য গ্রহণ, নামাজ না পড়া, সিনেমা-টিভি দেখা ইত্যাদি পরিহার করা অপরিহার্য।

এ বিষয়ে একটি হাদিস স্মরণীয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখে পাপ, মিথ্যা কথা, অন্যায় ও মূর্খতাসুলভ কাজ ত্যাগ করতে পারে না, তার উপবাস থাকা আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বোখারি, হাদিস ১৯০৩)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘রোজা হচ্ছে (জাহান্নামের আগুন থেকে আত্মরক্ষার) ঢালস্বরূপ। সুতরাং যখন তোমাদের কারো রোজার দিন আসে, সে যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং অনর্থক চিৎকার-চেঁচামেচি না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করতে চায়, সে যেন তাকে বলে দেয়, আমি একজন রোজাদার।’ (বোখারি, হাদিস ১৮৯৪)

নবীজি (সা.) আরো বলেন, ‘অনেক রোজাদারের রোজায় ক্ষুধা ছাড়া আর কোনো প্রাপ্তি নেই, আর অনেক রাত জেগে নামাজি ব্যক্তির রাত জাগা ছাড়া তার আর পাওয়ার কিছু নেই।’ (সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস ১৬৯০)

রমজানে ব্যবসা করা নিষিদ্ধ নয়। তবে এমনভাবে মগ্ন হয়ে পড়া যেন এ মাস ব্যবসারই জন্য এসেছে- এটা রমজানের নিয়ামতের অকৃতজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশেষত ঈদকে কেন্দ্র করে রমজানে যে অবস্থা আমাদের সমাজে লক্ষ করা যায়, তা খুবই বেদনাদায়ক। অনেকে কেনাকাটার পরিবর্তে মার্কেটগুলোর পরিদর্শনে মগ্ন, না আছে ফরজ নামাজের জামাতে উপস্থিতি, না তারাবির গুরুত্ব। তেলাওয়াত, তাসবি, দোয়া ও আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে দোয়া করা বাদ দিয়েছে। এরপর নগ্নতা ও নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণসহ অন্য হারাম কাজগুলো তো রয়েছেই, যেগুলো আল্লাহর অভিশাপ ডেকে আনে। তাই ব্যবসা-বাণিজ্য ও কেনাকাটায় এতটা বিভোর হওয়া উচিত নয় যে, নামাজের জামাত ও তারাবি ছুটে যায়। আর ব্যবসায় ধোঁকাবাজি, অহেতুক জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোও প্রতারণা এবং সুদ ও জুয়াসহ অন্য সব হারাম কার্যকলাপ থেকে সারা বছরই বেঁচে থাকা ফরজ, রমজান মাসে এর অপরিহার্যতা আরো বেড়ে যায়। কেননা বরকতপূর্ণ সময়ে যেমন ভালো কাজের সওয়াব বেশি, তেমনি গুনাহ করার পরিণাম আরো ভয়াবহ। আল্লাহতায়ালা আমাদের রমজানের পবিত্র রক্ষা করার তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক : আলেম, শিক্ষক ও অনুবাদক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close