গাজী শাহনেওয়াজ, বরিশাল (বানারীপাড়া) থেকে ফিরে

  ২৩ মার্চ, ২০২৩

ঘুচলো ভাসমান জীবনের দুঃখ

আড়াই যুগের বেশি সময় ধরে ঠিকানাহীন ভাসমান যে জীবন ছিল তার দুঃখ ঘুচলো বরিশালের বানারীপাড়ার মনোয়ারা বেগমের। তিনি একা নন; মোসা. বকুল বেগম, নাছিমা, মুক্তি, রেখা, সিদ্দিকুর রহমান ও সন্ধ্যা বড়ালের মতো অসহায় মানুষ পেয়েছেন মাথা গোঁজার স্থায়ী ঠিকানা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর ভাগ্য বদলেছে এই এলাকাসহ দেশের গৃহহীন ও ভূমিহীন অনেক পরিবারের। দুই শতক জমির ওপরে নির্মিত দুইকক্ষ বিশিষ্ট মজবুত রঙিন টিনের কাঁচা পাকা গৃহ তাদের পৌঁছে দিয়েছে স্থায়ী আবাসনে। ঠিকানার দিশা পাওয়া এই মানুষগুলো বনে গেলেন ১৫ লাখ টাকার সম্পদের মালিক।

গৃহের সঙ্গে থাকছে রান্নার সুব্যবস্থা। নিরাপদ স্যানিটারি ল্যাট্রিন। বিদ্যুতের পাশাপাশি সুপেয় পানির ব্যবস্থা আছে। বাড়ি পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জনাতে ভোলেননি সুবিধাভোগীরা। কেউ বলছেন, তার জন্য করেছেন দোয়া, দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করেছেন। এত দিন প্রধানমন্ত্রীর মতো অন্য কেউ তাদের কথা ভাবেনি। তাই অঙ্গীকার করে বলছেন, যত দিন বেঁচে থাকব শেখের বেটির নৌকায় ভোট দিব। প্রত্যেকের চোখেমুখে তৃপ্তি।

নদীর ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে দিশাহীনভাবে কেউ তিন যুগ কেউ আর বেশি অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে, কেউ ভিক্ষা করে জীবনের ভারে ক্লান্ত। এমনই একজন বানারীপাড়ার ইলুহার ইউনিয়নের পূর্ব মলহুর গ্রামের গণি মিয়া (৮০)। তিনি বলেন, দাদা ও নানার জমিও সন্ধ্যা নদীতে হারিয়ে গেছে। ৩০ বছর ভিক্ষা করে এর-ওর বারান্দায় কেটে গেছে। বাকি জীবনও এভাবেই চলে যাইব, তাই মনে হইছিল। কিন্তু শেখের বেটি আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিব, তা কখনো ভাবেনি।

কানন বালা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘর না দিলে ভাড়া বাসায় অন্যের অনুগ্রহে জীবন কেটে যেত। আল্লাহ তাকে মঙ্গল করুক। মুক্তি রানী বলেন, ‘অনেক কষ্ট করছি বোজজেন। আজ ঘর দিছে প্রধানমন্ত্রী। আমরা খুশি। যত বাঁচুম নৌকায় ভোট দিমু। আগে খুপটি ঘরে কাঁদায় বসবাস করতাম।’ শরিফা বেগম বলেন, ‘পানি পুনি হাতড়ানো লাগবে না। হাজার শুকরিয়া আল্লাহর দরবারে। প্রধানমন্ত্রীকে হাজার বছর মানুষের সেবা করানোর লাইগে বাচুই রাখুক।’

বুধবার গাজীপুরের শ্রীপুরে, সিলেটের গোয়াইঘাটে ও বরিশালের বানারীপাড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ চতুর্থ পর্যায়ে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের জন্য নির্মিত ঘর ও দলিল তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপকারভোগী এলাকার সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি উপকারভোগীদের কথা শোনেন। তাদের অতীতের দুঃখ কষ্টের কথা শুনে আপ্লুত হয়ে পড়েন। বানারীপাড়া উত্তরপাড় এলাকার মনোয়ার বেগম ও হুমায়ুন কবির তাদের অভিব্যক্তির কথা জানান। তাদের দাবি ছিল, আপনি আমাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, আপনি এখানে এসে আমাদের দেখে যাবেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্বাস দিয়েছেন, চেষ্টা করবেন।

দেশের বিভিন্ন উপজেলায় ৩৯ হাজার ৩৬৫ পরিবারকে ভূমি ও ঘর দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় এতে গণভবন ও বিভিন্ন প্রান্তে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, রাজনৈতিক নেতা ও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা ও উপকারভোগীরা উপস্থিত ছিলেন।

কর্মকর্তারা জানান, বানারীপাড়া উত্তরপাড়া, বাইশাড়ী ও শোলীয়া বাগপুর তিনটি এলাকার ১৪২ পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন। সন্ধ্যা নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে বসবাসের উপযোগী করে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের পাশাপাশি কর্মময় জীবনের ব্যবস্থা রয়েছে এই প্রকল্প ঘিরে। বানারীপাড়ায় শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সজল চৌধুরী। তিনি বলেন, স্থানীয় এমপির দৃঢ়তার কারণে এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। বানারীপাড়া পৌরসভা ১নং ওয়ার্ড (উত্তরপাড়) কাউন্সিলর এ কে এম জাহিদ হোসেন সরদার বলেন, উত্তরপাড় ৯১, বাইশাড়ী ও শোলীয়া বাগপুর মিলিয়ে ১৪২টি গৃহহীন পরিবার আবাসন খুঁজে পেলেন।

সুবিধাভোগী মনোয়ারা বেগম ও হুমায়ুন কবির প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ১০ বছর পথে পথে ঘুরেছি একটু মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য। আপনি আমাদের নতুন জীবন দিয়েছেন।

বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানাড়ীপাড়া) আসনের এমপি মো. শাহে আলম বলেন, দরিদ্র মানুষের প্রতি কতটা অনুভূতিশীল প্রধানমন্ত্রী, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ গৃহহীনদের ঘর। আর সংরক্ষিত মহিলা এমপি সৈয়দা রুবিনা আক্তার বলেন, এমন জায়গায় ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে যে, কেউ কর্মহীন থাকবে না। সন্ধ্যা নদীতে মাছ শিকার ও কৃষি কাজ করে বাকি জীবন পার করে দিতে পারবেন সুবিধাভোগী মানুষগুলো।

বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতিমা আজরিন তন্বী বলেন, সবাই বসবাস নিশ্চিত করার পর এ উপজেলাকে গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হবে। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close