ঢাবি প্রতিনিধি
শ্রদ্ধা ভালোবাসায় সিক্ত হলেন ভাস্কর শামীম সিকদার
নিজ কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকর্মী ও অনুরাগীদের ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত হলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত ভাস্কর শামীম সিকদার। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে তার কফিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে নেওয়া হলে ঘণ্টাব্যাপী সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও চারুকলা অনুষদ এবং বিভিন্ন ব্যক্তি-সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এরপর জোহরের নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তার জানাজা হয়।
ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বিকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন স্বোপার্জিত স্বাধীনতাসহ অনেক ভাস্কর্যের স্রষ্টা শামীম সিকদার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ছিলেন তিনি। মৃত্যুর পর তার কর্মস্থলে তাকে শেষ বিদায় জানালেন সহকর্মী ও অনুরাগীরা।
শামীর সিকদারের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন। এর বাইরে তার একটি পরিচয় আছে, যা তাকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। তিনি এমন একটা সময়ে শিল্পকলার চর্চা করতেন, যখন সমাজের অনেকেই এগিয়ে আসেনি। একজন নারী ভাস্কর হিসেবে তিনি বাংলাদেশে এবং উপমহাদেশে অন্যতম পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাহসী, বলিষ্ঠ ও স্পষ্টভাষী। মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মূল্যবোধে তিনি সমৃদ্ধ ছিলেন।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘আমরা যখন সামরিক স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলন করি, তখন আমাদের কিছু তরুণ গ্রেপ্তার হয়। আমরা শামীম সিকদারের কাছে যাই, কারণ এরশাদের সঙ্গে তার একটা যোগাযোগ ছিল। শামীম আপা এরশাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মুক্ত করে দেন। এজন্য আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।’
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ভাস্কর্য নিয়ে দেশে যখন প্রবল বিরোধিতা ছিল, তখন শামীম শিকদার ঢাকা আর্ট কলেজে ওই বিষয়ে পড়তে যান। পরে তিনি ওই বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ করে চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগে অধ্যাপনায় যোগ দেন।
তিনি আরো বলেন, তার চরিত্রে একটা বিপ্লবী চেতনা ছিল, যা পরে তার কাজেও প্রভাব ফেলেছে। তখন ভাস্কর্য নির্মাণে প্রয়োজনীয় উপাদান পাওয়া যেত না, অধ্যাপক শামীম শিকদার রড-সিমেন্ট দিয়েই কাজ শুরু করলেন। ভাস্কর্যে তিনি প্রতিকৃতির দিকে ঝুঁকেছিলেন, তার ভাস্কর্য ছিল রেখাধর্মী। একপর্যায়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়ে আরেক ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান বলেন, ‘শামীম সিকদার বাস্তবধর্মী কাজ বেশি করতেন। কিন্তু সময়ের প্রেক্ষাপটে তিনি বিমূর্ত ধারণার কাজও করেছেন। যেটা আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনের ভাস্কর্যটাতে দেখতে পাই।’
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আফজাল হোসেন নেতাকর্মীদের নিয়ে শামীম সিকদারের কফিনে শ্রদ্ধা জানান।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, চারুকলা অনুষদ, ভাস্কর্য বিভাগ, কারুশিল্প বিভাগ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
তার ছোট ভাই নাজমুল হক সিকদার জানান, শামীম সিকদারের ছোট ছেলে লন্ডন থেকে দেশে ফিরলে শুক্রবার মোহাম্মদপুরে দাফন করা হবে এই শিল্পীকে।
"