নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ মার্চ, ২০২৩

শওকত মাহমুদকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার

দুই দফা শোকজের পর এবার দল থেকেই বহিষ্কার হলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ। বিগত কয়েক বছর ধরে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কর্মসূচি পালন করায় তাকে শোকজ করা হয়েছিল। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার তার উদ্যোগে বনানীর একটি হোটেলে বিভিন্ন পেশাজীবী ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে একটি সুধী সমাবেশ আয়োজন করায় তার বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ওই সভায় পেশাজাবী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার সাবেক অনেক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তার মতো আরো বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বহিষ্কারের এ তথ্য জানানো হয়। ২০১৬ সাল থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শওকত মাহমুদ। বিএনপির বাইরে শওকত মাহমুদ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বিএনপির সমর্থিত সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়কও ছিলেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে লিপ্ত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক দলের ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শওকত মাহমুদ বলেন, ‘এটি দুঃখজনক। এর বাইরে এই মুহূর্তে আর কিছু বলতে চাই না।’ দলীয় সূত্র জানায়, গত বছরের ৬ এপ্রিল দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছিল। ওই বছরের ২৭ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘পেশাজীবী সমাজ’ ব্যানারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এক সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি থেকে তাকে এই নোটিস দেয়া হয়। তারও আগে ২০১৯ সালে ১৩ ডিসেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছিল। সেবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে একটি সমাবেশকে কেন্দ্র করে তাকে এবং আরেক ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদকে ওই নোটিস দেওয়া হয়। তবে তারা শোকজের জবাব দেওয়ার পর তা সুরাহা হয়ে গিয়েছিল।

বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, দলকে ভাঙা এবং জাতীয়তাবাদী শক্তির মধ্যে অবিশ্বাস ও বিভাজন বাড়াতে অনেক দিন ধরে একটি মহল সক্রিয় রয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ওই মহল আবারও তৎপর হয়েছে। এই তৎপরতায় এমন কোনো মহলের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে, যাদের মূল লক্ষ্য সরকারের উদ্দেশ্য হাসিল। তারা দীর্ঘদিন থেকে বিএনপির মূল নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে দলে এবং জোটে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এই প্রক্রিয়ায় নানা কারণে ক্ষুব্ধ ও হতাশ নেতাদের যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। তাদের নানা টোপ দেওয়া হচ্ছে। দল ও জোটের এমন অন্তত ৪০ জন নেতার সঙ্গে বিভিন্ন সময় দেশে-বিদেশে বৈঠক হয় ওই মহলের সঙ্গে। ২০১৯ সাল থেকে ওই তৎপরতা শুরু হয়। সর্বশেষ গত জানুয়ারিতেও দেশের বাইরে এমন বৈঠক হয় বলে জানা গেছে।

তৃতীয় শক্তির উত্থান স্বপ্নে বিভোর এই অংশটির নেতৃত্বেই বিগত দিনে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, হাইকোর্টের সামনে এবং মুক্তাঙ্গনে পৃথক তিনটি কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর সবকটিতেই শওকত মাহমুদের সরব ভূমিকা ছিল। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বনানীস্থ হোটেল শেরাটন হোটেলে ‘ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটস’ ‘জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি’ ব্যানারে এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। যার নেতৃত্বেও শওকত মাহমুদ ছিলেন। এই সুধী সমাবেশে ক্ষমতাসীন সরকারকে সরিয়ে ছোট-বড় সব দলকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করা হয়। যেটা বিএনপির প্রস্তাবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। তাদের ঘোষণায় বলা হয়েছে এই সরকারের পদত্যাগের পর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলে সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, শওকত মাহমুদের নেতৃত্বে বিএনপির তৃণমূলে এবং জাতীয়ভাবে একটি বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চলছিল। এজন্য দলের বাইরে তিনি আলাদা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এ ধরনের কর্মকাণ্ড আরো বাড়তে পারে মনে করে এখনই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে মত দেন দলটির সিনিয়র নেতারা। আর এই পটভূমিতেই শওকত মাহমুদকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হলো।

শওকত মাহমুদ বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এবং পরে ষষ্ঠ কাউন্সিলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হন। এছাড়া কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close